কলাম ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

আয়না ঘর ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আজমিরী

যে কথাগুলো আলোচনায় আসেনি—

post

সাবেক সেনা কর্মকর্তা জনাব আযমী তাঁর বক্তব্যে শুধুমাত্র বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতকেই কটাক্ষ করেননি, তিনি আমাদের সংবিধান ও শহীদদের সংখ্যার প্রতিও চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন— যা ওভাবে আলোচনায় আসেনি।

 সংবিধান প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য হলো স্বাধীন দেশের সংবিধান রচনার কোনো এখতিয়ার শেখ মুজিবুর রহমানের ছিল না।

 মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সংখ্যা নিয়েও তাঁর আপত্তি। তাঁর ভাষায় শহীদদের সংখ্যা কিছুতেই ত্রিশ লক্ষ হতে পারে না। তিনি তদন্ত করে সঠিক সংখ্যা নিরুপনের দাবী জানিয়েছেন। তিনি মনে করেন এই সংখ্যা তিন লক্ষের মতো, যাকে শেখ মুজিবুর রহমান তিন মিলিয়ন বলে উল্লেখ করেছেন।

 জাতীয় পতাকা, সংবিধান ও শহীদদের সংখ্যা নিয়ে তাঁর এই বক্তব্য মামুলি কোনো ঘটনা নয়, কারণ বক্তব্যটি সরাসরি জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা সিটি সাউথ নামক ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রচার করে হয়েছে। তাছাড়া জামায়াত এখন পর্যন্ত এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যানও করেনি। সুতরাং এটা যে প্রকারান্তরে জামায়াতেরও বক্তব্য সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকার কথা নয়।

 রাষ্ট্রের কোনো একজন নাগরিক এরূপ ধৃষ্টামূলক বক্তব্য রাখলে বিষয়টিকে হয়তো ব্যক্তির মত প্রকাশের স্বাধীনতা হিসেবে দেখা হতো এবং বিষয়টি সেরকম কোনো রাজনৈতিক গুরুত্ব বহন করতো না। কিন্তু যেহেতু জনাব আযমী স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের সাবেক আমীর গোলাম আযমের পুত্র সেহেতু তাঁর এই বক্তব্যের যথেষ্ট রাজনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে। তিনি আসলে কথাগুলো বলেছেন জামায়াতের মুখপাত্র হিসেবেই যদিও জামায়াত এখন পর্যন্ত বিষয়টি জাতির কাছে পরিষ্কার করেনি।

 প্রশ্ন হলো— জনাব আযমী হঠাৎ করে কেন আমাদের জাতীয় পতাকা, সংবিধান ও শহীদদের সংখ্যা নিয়ে আপত্তি তুলছেন? এ প্রশ্নের উত্তর খুব সহজ, আর তা হলো মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জামায়াত ইসলামী দলটি আসলে গত তিপ্পান্ন বছরে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে মন থেকে গ্রহন করতে পারেনি। আর পারেনি বলেই তারা এখন দেশে বিরাজমান মত প্রকাশের মুক্ত পরিবেশের সুযোগ নিয়ে স্বরূপে আবির্ভূত হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধান, জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এই প্রশ্নবিদ্ধ করার মধ্য দিয়ে দলটি হয়তো এটাই প্রমাণ করতে চাইছে যে একাত্তরে তাদের ভূমিকা সঠিক ছিল। জামায়াত যদি এমনটি মনে করে থাকে তাহলে তা হবে জামায়াতের জন্য একটি ' পলিটিক্যাল সুইসাইড'। কারণ বাঙালি তার মুক্তিযুদ্ধ, দেশের নাম, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে কখনোই আপোষ করবে না। ফলে এরকম ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্যের কারণে জাতি দলটিকে প্রত্যাখ্যান করবে এবং প্রয়োজন হলে প্রতিহতও।

 জনাব আযমী তাঁর বক্তব্যে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকে নিজেদের অর্জন বলে আখ্যায়িত করেছেন। এটি আরেকটি ধৃষ্টতামূলক মন্তব্য। এ বিজয় কোনো রাজনৈতিক দলের নয়। এ বিজয় আপামর জনগোষ্ঠীর। ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত বিজয়কে ' আমাদের বিজয়' বলে আখ্যায়িত করার যে স্পর্ধা তিনি দেখিয়েছেন তাতে ধারণা করা অমূলক হবে না যে বাংলাদেশ নিয়ে দলটি নতুন কোনো ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাদের ষড়যন্ত্র কী হতে পারে তা বোঝার জন্য আমাদেরকে আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে। তবে যাই হোক না বাংলাদেশের মু্ক্তিকামী জনতা যে স্বাধীনতা, জাতীয় সঙ্গীত, জাতীয় পতাকা নিয়ে সকল ষড়যন্ত্র সমূলে নস্যাৎ করার ক্ষমতা রাখে জামায়াত যত দ্রুত বিষয়টি অনুধাবন করবে তাদের জন্যই ততই মঙ্গল। তা না হলে সেদিন বেশী দূরে নয় যেদিন বাংলার মাটিতে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির কবর রচিত হবে।


সারওয়ার ই আলম লন্ডন : ০৬.০৯.২০২৪

আরো পড়ুন!

Sidebar Banner
Sidebar Banner