কলাম ০৯ মে ২০২৫

পায়ে পাড়া দিয়ে পাকিস্তানের সাথে ভারতের সংঘাত ! রহস্য কি

যুদ্ধ ক্ষেত্রে প্রথমেই সত্যের মৃত্যু হয়

post

গত মঙ্গলবার গভীর রাতে পাকিস্তান  অধিকৃত কাশ্মীর ও পাঞ্জাবের মোট  নয়টি স্থানে ২৪টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ৭০ জনকে হত্যার দাবি করেছে ভারত। এই হামলার  নাম দিয়েছে ‘অপারেশন সিন্দুর’।ভারতীয় সূত্র বলছে , পহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার প্রতিশোধ নিতে এই হামলা পরিচালনা করেছে ভারতীয় বাহিনী।এ হামলায় কোন  মিলিটারি বেস বা হাই ভ্যালু টার্গেট করা হয়নি বলে নিশ্চিত করেছে খোদ ভারত সরকার।শুধুমাত্র পাকিস্তানের সন্ত্রাসী ঘাঁটি লক্ষ্য করে গভীর রাতে এই  সফল  হামলা চালানো হয়  বলে জানিয়েছে দেশটি ।


এদিকে পাকিস্তানের দৈনিক ডন পত্রিকা বলছে ভারতের অযাচিত হামলা প্রতিরোধ করতে ফ্রান্সের তৈরি শক্তিশালী তিনটি রাফায়েল , রাশিয়ার তৈরি মিগ ২৯ ও একটি সু ৩০, মোট পাঁচটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী।অবশ্য রয়টার্স  থেকে পাওয়া তথ্য মতে পাঁচটি নয় তিনটি যুদ্ধবিমান ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে পাকিস্তান।

২০১৯ সালে পাকিস্তানের বালাকোট এলাকায় মিগ ২১ যুদ্ধবিমান দিয়ে নির্জন এলাকায় হামলা করেছিল ভারত।এসময় ভারতীয় বিমান বাহিনীর উইং কমান্ডার অভিনন্দন আটক হয় পাকিস্তানের হাতে।প্রথমে যুদ্ধবিমান ভূপাতিত আর পাইলট আটকের কথা অস্বীকার করে ভারত সরকার ।তবে পরবর্তীতে একটি মিগ-২১ যুদ্ধবিমান ও একজন পাইলটের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি স্বীকার  করেছিল দেশটি ।যুদ্ধ ক্ষেত্রে  মিথ্যা ও প্রপাগান্ডা ছড়ানোর এই প্রবণতা নতুন কিছু নয়। তাই তো মার্কিন সিনেটর Hirman Johnson ১০১৮ সালে বলেছিলেন  The first casualty of the war in the truth. তার মানে যুদ্ধ ক্ষেত্রে  প্রথমেই সত্যের মৃত্যু হয়।

  ২০১৯ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে মিথ্যা ও একটা খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে  পাকিস্তানের বালাকোট এলাকায়  সামরিক হামলা পরিচালনা করে মোদী সরকার।প্রায় ছয় বছর পর  গত মঙ্গলবার প্রায় একই কায়দায় একই অজুহাতে পাকিস্তানে আবারো হামলা করে  ভারত। তবে এবারের হামলার ক্ষেত্র ছিল আগের তুলনায় বেশি। 

এদিকে গত ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার ভারত অধিকৃত দক্ষিণ কাশ্মীরের পেহেলগামে এক মর্মান্তিক সন্ত্রাসী হামলার প্রকৃত সত্য  উদঘাটনের জন্য জাতিসংঘের মধ্যস্ততায় নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি প্রথম দিন থেকেই করে আসছে পাকিস্তান।তবে এবারও ভারত সরকার  পাকিস্তানের এই ন্যায্য দাবি ও আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা না করে রাতের আঁধারে পাকিস্তানে হামলা করায় বিশ্বব্যাপী  নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। 

কেউ কেউ মনে করছেন গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা ও গাজা উপত্যকা দখলের  নীলনকশা  থেকে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি অন্যদিকে নিতে  নেতানিয়াহু'র বন্ধু মোদি এই পাতানো খেলায়  মেতে উঠেছে ।অনেক বিশ্লেষক আবার মনে করেন উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের স্বপ্ন  ভারতকে কেবলমাত্র হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। তারই অংশ হিসেবে সে দেশে  বসবাসরত  ১৪.২ ভাগ মুসলিম নিধন প্রকল্প বাস্তবায়ন  করতে একের পর এক  রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস চালাচ্ছে নরেন্দ্র  মোদি ও তার  সরকার।সব মিলিয়ে  মনে হচ্ছে যে  সময় থাকতে ভারত যদি দক্ষিণ এশিয়ার ঐক্যের পথে ফিরতে ব্যর্থ হয় তাহলে নিকট ভবিষ্যতে বিভাজনের অন্ধকারে হারিয়ে যেতে পারে দেশটি। 

এদিকে ইসরাইল ছাড়া ভারতের পাশে এই মুহূর্তে  তেমন কোনো মিত্র  নেই।সেই বেবাচনয় পাকিস্তান অনেকটা এগিয়ে ।ভারতের হামলার দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে পাকিস্তান " সোহাগ রাত" নামে  সামরিক হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে ।   

 পারমাণবিক অস্ত্রধারী প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তান। এই মুহূর্তে  তারা চূড়ান্ত যুদ্ধে জড়াবে বলে মনে হচ্ছে  না।যা চলছে সেটা  কেবল ভোটের সমীকরণ ও  মুখরক্ষার লড়াই বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে ।

২১ ভাগ সংখ্যালঘুর দেশ ভারত।ইতিমধ্যে নরেন্দ্র মোদির ভ্রান্ত নীতির কারণে দেশটির জাতিগত  বৈচিত্র্য ধ্বংস হয়েছে । মুসলিম ,শিখ , খ্রিস্টান ও উত্তর পূর্বের আদিবাসীরা আজ নিরাপত্তা সংকটে ভুগছে। ধর্মকে এভাবে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার অব্যাহত থাকলে   আজ হোক আর দুদিন পর  হোক ভারত তার মানচিত্র হারাতে পারে।

লেখক : শেখ মহিতুর রহমান বাবলু ,প্রবাসী সাংবাদিক লেখক ও কলামিস্ট  
 
লন্ডন : ০৮.০৫.২০২৫

 

আরো পড়ুন!

Sidebar Banner
Sidebar Banner