যে কোন বিবেচনায় জুলাই আগস্ট বিপ্লবের মহানায়ক বীর ছাত্ররা।জাতীয় জীবনের চরম ও পরম দুর্যোগপূর্ণ মুহূর্তে জীবন বাজি রেখে তারাই স্বৈরাচার মুক্ত করেছে বাংলাদেশ। সুতরাং আগামী দিনের স্বপ্নের বাংলাদেশ কেবল তাদের হাতেই নিরাপদ।যেমন একটা শিশুর কাছে সবচেয়ে নিরাপদ তার মায়ের কোল । মা ২৮০ দিন শিশুকে তার পেটে ধারণ করেন। প্রচন্ড প্রসব বেদনা ,মৃত্যুর ঝুঁকি ও এক কলসি রক্তের বন্যায় সন্তানকে এই সুন্দর পৃথিবী উপহার দেন মা।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দুটি দল আওয়ামী লীগ ও জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। কয়েকটি নীতিগত পার্থক্য ,কৌশলগত ইস্যু ও ইতিহাসের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের ভিন্নতা ছাড়া এই দল দুটির মধ্যে বিশেষ বা বড় ধরনের কোনো পার্থক্য নেই।যা বিগত সাত মাস ধরে দেশের মানুষ আবারো হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে ।তারপরেও তারা কিন্তু ভিন্ন দুটি দল।
বর্তমান বাংলাদেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের কোনো গণভিত্তি নেই। এরা সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও পারিপার্শ্বিক চিন্তা চেতনার প্রতিনিধিত্ব করে না। সুতরাং এ কথা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার যে দেশের প্রচলিত ধারার এ সব রাজনৈতিক দলের পক্ষে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব নয় ।
দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক দলের নীতি নির্ধারকরা মুখে গণতন্ত্রের কথা বলেন। রাষ্ট্রকে স্বৈরতন্ত্র মুক্ত রাখার স্বপ্ন দেখান , অথচ এ সব রাজনৈতিক দলের ভেতর গণতন্ত্র চর্চা অনুপস্থিত এবং দলগুলো এক একটা স্বৈরতন্ত্রের সূতিকাগার ।তার মানে, যে নেতা দলের মধ্যে গণতন্ত্র ,স্বৈরতন্ত্র ,স্বাধীনতা ও মর্যাদা নিশ্চিত করতে বার্থ তারা আবার জনগণের স্বাধীনতা ও মর্যাদা কিভাবে নিশ্চিত করবেন ?
দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের কর্মী ,নেতা,পাতিনেতা ও খুচরা নেতা সবাই এক ধরনের পুতুল।তাদের নিজস্ব বলে কিছু নেই।শীর্ষ নেতার ইচ্ছার বাস্তবায়ন তাদের আরাধ্য।তাদের বড় কাজ নিকটতম নেতার হুকুম মেনে চলা, প্রশ্নহীন আনুগত্য প্রকাশ করা, চাঁদাবাজি ,চোঙ্গাবাজি জ্বালাও পোড়াও খতম করো ধরণের বিভীষিকা পূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা ।সুতরাং এ ধরনের তল্পিবাহক নেতা কর্মীদের দিয়ে আর যাই হোক ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব না ?
এ দিকে বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক দলের ইতিহাস খুব সুখকর নয়। বিগত ৪০ বছরে দেশে নতুন কোনো দল জায়গা করে নিতে পারেনি।যেমন টি পেরেছে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়িপ এরদোয়ানের একে পার্টি ,পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) ও ভারতের অরবিন্দ কেজরিওয়ালের আম আদমি পার্টি (আপ) ।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে যে পরিমান মানুষের ঢল আসা করা হয়েছিল বাস্তবে তা হয়নি ৷এ ঘটনা থেকে একটি কথা স্পষ্ট যে ফেসবুকের লাইক ও কমেন্ট রাজনীতি এবং ভোটের রাজনীতি এক নয়।
খুশির সংবাদ হচ্ছে ১/১১ এর কুশলী বা পশ্চিমারা দক্ষিণ এশিয়ায় পরিবারতন্ত্রের কবর রচনা করতে চায়। বিগত ১৫/১৬ বছর যাবৎ এটা নিয়ে তারা কাজ করে যাচ্ছে।সুতযাং নিকট ভবিষ্যতে না হলেও একদিন না একদিন বাংলাদেশ থেকে পারিবারিক রাজনীতির অবসান ঘটবে এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। সে দিন সবার আগে যে দলটি অগ্রাধিকার পাবে তার নাম হতে পারে জাতীয় নাগরিক পার্টি।
জাতীয় নাগরিক পার্টি একটি নতুন দল।তাদের পক্ষে নতুন চেতনা বা নতুন ভঙ্গি প্রণয়ন করা সম্ভব ।দলটি এখনো সাংগঠনিক ভাবে বিকশিত হয়নি। দলের সার্বিক কৌশল এখনো চূড়ান্ত নয় ।কাজেই এখনই সঠিক সময়।বাংলাদেশের প্রচলিত রাজনৈতিক স্রোতের বিপরীতে দৃশ্যমান অবস্থান নেয়া ।জাতীয় নাগরিক পার্টি চাইলে তা পারে। ইতোমধ্যে শোনা যাচ্ছে তুরস্কের একে পার্টির আদলে দল গঠন করতে চায় বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা।সেটাও কিন্তু মন্দ নয়।
লন্ডন : ০৪.০৩.২০২৫
প্রবাসী সাংবাদিক লেখক ও কলামিস্ট শেখ মহিতুর রহমান বাবুর ভেরিফাইড ফেসবুক থেকে সংগৃহীত