জেলখানা যদি রাজনীতিবিদদের জন্য মাথার মুকুট হয় তবে হাসিনা সহ আওয়ামীলীগের সবাই পালালো কেন ?
গ্রেফতার হওয়া একটা আর্ট। হাসতে হাসতে জেলে চলে যাওয়া রাজনীতিবিদদের কাছে একটা মুকুটের মতো। গান্ধী জেলে যাওয়ার পর রেস্ট নিতেন। লেখাপড়া করতেন। হযরত উমরের জীবনী জেলে বসে পড়েছেন গান্ধী ।
সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নামে মামলা হলো। তখনও গ্রেফতার হন নাই। সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করলো, পালাবেন নাকি? উনি উত্তর দিলেন, পালাবো কেন? এই এতো বড় শরীর আমার, কোথাও তো লুকাতেও পারবো না। ধরলে ধরে নিয়ে যাবে!!
সম্ভবত সাঈদীসহ অন্যান্য নেতাদের অনেকে মামলা হওয়ার সময় হজ্জে ছিলেন। প্রচার করা হলো উনারা আর দেশে ফেরত আসবেন না। অবশেষে সবাই ফেরত আসলেন। বললেন, মামলা হচ্ছে, হোক মোকাবেলা করবো।
ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কথা বলি।এই লোকটাকে সবসময়ই দেখে এসেছি কিছু হলেই পুলিশ তুলে নিয়ে রিমান্ড পাঠাতো। হাঁটতে কষ্ট হয় । তবুও দেশ ছেড়ে গেলেন না। আপনারা জানেন কি না ফখরুল ইসলাম আলমগীর রবীন্দ্রনাথের ভক্ত। উনি সবসময়ই একটা কবিতা পড়েন ! তবু বিহঙ্গ, ওরে বিহঙ্গ মোর, এখনি অন্ধ, বন্ধ করো না পাখা....
মাহমুদুর রহমান বিরাট ধনী মানুষের জামাই। বুয়েট থেকে পাশ করে মুন্নু সিরামিকে জয়েন করেছিলেন। সেই মালিক তার মেয়ের সাথে বিয়ে দিলেন । বাচ্চা কাচ্চা নাই। সব টাকা ফাউন্ডেশন করে দান করে দিয়েছেন। এই লোকটা গ্রেফতার হয়েছেন, রিমান্ডে গেছেন। এমন নির্যাতন করা হয়েছে প্যান্ট পরতে পারেননি। অথচ এই লোকটা তবুও লেখা থামাননি কোনদিন। সত্য বলার নেশা, ভয়ঙ্কর নেশা।
আন্দালিব রহমান পার্থর কথাই বলি না কেন? শেখ হাসিনা তাঁর ফুফু । চাইলেই মন্ত্রী হতে পারতেন।হননি। বরং খালেদা জিয়াকে ম্যাডাম বললেন, তারেক রহমানকে বললেন মেন্টর। ফলাফল? গ্রেপ্তার হলেন। মামলা খেলেন। এইবার তো ৫ দিনের রিমান্ডেও গেলেন। অথচ আজ পর্যন্ত পার্থরে আমি কোনদিন অভিযোগ করতে দেখি নি। পালিয়ে যেতেও দেখেনি। বরং সবসময়ই বলেন, রাজনীতি করলে গ্রেফতার তো হতেই হবে।
খালেদা জিয়াকে বারবার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, বাইরে চলে যাওয়ার। যাননি। বলেছেন, বাংলাদেশের বাইরে আমার কিছু নাই। আমি যাবো না। বৃদ্ধ বয়সে জেল খাটলেন । পালালেন না। এই আন্দোলন না হলে খালেদা জিয়ার মৃত্যু হতো হাসিনার কারাগারে। জেনে শুনেই এই কারাগার তিনি মাথায় তুলে নিয়েছিলেন।
রাজনীতিবিদদের কাছে গ্রেফতার হওয়া একটা আর্ট। একটা সম্মান। একটা সম্ভ্রম। যে মুকুটটা তারা স্বেচ্ছায় মাথায় তুলে নেন । রাজনীতি হলো রাজার নীতি।এখানে মানুষ মরে যাবে, অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবে না।
মানবতাবিরোধী অপরাধের নাম করে যে জুডিশিয়াল কিলিং হলো, একজন নেতাও মাফ চাননি।পাকিস্তানের জুলফিকার আলী ভুট্টো মাফ চান নি। বলেছেন, মাফ চাইবো না।মেরে ফ্যালো। কর্নেল তাহেরও মাফ চান নাই। কোর্ট মার্শালে তাহেরের ফাসি হয়েছিলো। ক্যু করে সরকার পতনের চেষ্টা বার্থ হলে , কোর্ট রায় দিলো। জিয়া কালো চশমা পরে বন্ধুকে দেখতে গেলেন ফাঁসির আগে। তাহের জিয়ার কাছে ক্ষমা চাননি। মরে গেছেন, মাফ চাননি।
রাজনীতিবিদরা এমন হয়। এরা ভূল করে মরে যাবে, মাথা নোয়াবে না। যেমন মাথা নোয়াননি সিরাজ শিকাদার। মুজিবের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলতেন। মুজিবের পতনের বীজটা সিরাজ শিকদারেরই বপন করে যান । সিরাজ শিকদার চাইলেই মুজিবের সাথে আপোষ করতে পারতেন। করেননি। মুজিবের লোকজন তাকে চট্টগ্রামে ধরে হত্যা করলো। মুজিব সংসদে অশ্লীল ভাষায় অহংকার করে বললেন, কোথায় আজ সিরাজ শিকদার? মরে গিয়ে সেদিন সিরাজ শিকদার জিতে গেলেন। আর বেচে থেকেও মুজিব হেরে গেলেন। কারণ সংসদসহ সারা দেশ জানলো, মুজিব একজন খুনি। সে প্রতিপক্ষের রাজনীতি সামলাতে না পেরে তাকে খুন করে।
যুগে যুগে রাজনীতিবিদরা মরে গেছেন, তবে মাথা নিচু করেননি। আর আওয়ামীলীগ এর দিকে তাকান। সবাই পালিয়েছে । গ্রেফতারের সময় কেউ কানাছে । ছাত্রলীগের এক নেতা সীমান্ত পার হওয়ার সময় মারা গেল। কেন? রাজনীতিবিদ আপনি, গ্রেফতার হতে সমস্যা কী? ফেস করতে সমস্যা কী?
পত্রিকায় দেখলাম এস আলম যত টাকা লুটেছে এর অর্ধেক ভাগ পেয়েছে রেহানা ও জয়। আওয়ামীলীগ আসলে রাজনীতি নি । করেছে চুরি। এরা আসলে রাজনীতিবিদ না, এরা আসলে চোর বাটপার। হাসিনা, রেহানা, জয়, সালমান সবাই বাটপার। এইজন্যই এরা গ্রেফতার হবে না। ঐ সাহস এদের নাই। এরা পালাবে। কারণ চোর তো আর গ্রেফতার হতে পারে না, চোর পারে পালাইতে। একদল চোরকে এতোদিন আমাদের রাজনীতিবিদ বলে সম্মান দিতে হয়েছে।এরচে ভয়ঙ্কর লজ্জার কথা আমাদের এই প্রজন্মের জন্য আর কী হতে পারে? ©️sadiqur rahman khan