৪ দিন ব্যাপী ভারত পাকিস্তানের রক্তাত্ত সংঘর্ষের পর দুনিয়া জুড়ে এ যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ ।অধিকাংশ বিশ্লেষক মনে করছেন এবারের যুদ্ধে ভারতের বেশি ক্ষতি হয়েছে।অনেকে আবার বলছেন ভিন্ন কথা। অবাক করার বিষয় হলো সাধারণ মানুষের কথা কেউ বলে না।
পেহেলগামে হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যখন যুদ্ধের দাবানল দাউ দাউ করে জ্বলে উঠলো তখনও বলেছিলাম,চূড়ান্ত যুদ্ধ হবে না।কারণ পেহেলগাম সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগ পাকিস্তানকে ভারতের পক্ষ থেকে শাস্তি দেওয়ার একটি পরিকল্পিত কৌশল।রাজনীতিবিদদের পাতানো জঙ্গি জঙ্গি খেলা।দেশের সাধারণ ভোটারকে বোকা বানানোর অপকৌশল ছাড়া আর কিছু না ।
ভারত পাকিস্তানের ইতিহাস রক্তাক্ত ইতিহাস।পাকিস্তান জন্মের পর থেকে গত ৭৮ বছরে কয়েক দফা যুদ্ধ হয়েছে দেশ দুটির মধ্যে।অথচ আর্থিক বিবেচনায় বর্তমান যুগে যুদ্ধ করার ক্ষমতা দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র সমৃদ্ধ এই দেশ দুটির নেই।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ),চীন ,বিশ্বব্যাংক ,জাপান ও বিভিন্ন দেশ থেকে কঠিন শর্তে নেয়া ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পাকিস্তান।বিগত কয়েক বছরে ডলারের তুলনায় পাকিস্তানি মুদ্রার দাম কমেছে আশঙ্কাজনক ভাবে।পাশাপাশি, ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি ও জ্বালানির অভাবে ভুগছে দেশটি ।এ ছাড়া সরকারি হিসাবে পাকিস্তানের ৪০ ভাগ মানুষ এখনো দারিদ্র সীমার নিচে অবস্থান করছে।
পাকিস্তানের তুলনায় ভারতের অর্থনীতি বেশি মজবুত।সামরিক শক্তির দিক থেকেও ভারত অনেক এগিয়ে।কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে এই যুগে একটি যুদ্ধ করার মতো যথেষ্ট আর্থিক সক্ষমতা কি আছে ভারতের ?
দক্ষিণ এশিয়ার বিশাল দেশ ভারতের ১৫ ভাগ মানুষ এখনো দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করছে। তাছাড়া ১০০ ভাগ মানুষের কাছে এখনো স্যানিটেশন সুবিধা পৌঁছে দিতে পারেনি ভারত ।জাতিসংঘের এক রিপোর্টে বলা হচ্ছে, বিশ্বে একশো কোটি মানুষ এখনো খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে। ফলে কলেরা, ডায়রিয়া এবং হেপাটাইটিসের মতো মারাত্মক রোগ-ব্যাধির বিস্তার ঘটছে।
এই একশো কোটি মানুষের মধ্যে ৪০ কটি মানুষ শুধু ভারতীয়।অথচ ২০১৮–২২ সালে ভারত ছিল বিশ্বের বৃহত্তম অস্ত্র আমদানিকারক দেশ । আবার পাকিস্তানও সাম্প্রতিক কালে চীন, তুরস্ক ও কাতার থেকে অস্ত্র, ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি সংগ্রহ করছে।অস্ত্র আমদানিকারক রাষ্ট্র হিসাবে সম্প্রতি বাংলাদেশের নামও শোনা যাচ্ছে।
যে কোনো যুদ্ধে প্রথিবীর সাধারণ মানুষের ওপর বহুমাত্রিক প্রভাব পড়ে।নড়বড়ে হয়ে যায় আর্থিক ভারসাম্যতা।যুদ্ধে কেউ যেতে না।বরং বিপন্ন হয় অর্থনীতি, মানবাধিকার, স্থিতিশীলতা সবই।কিন্তু দিন শেষে লাভবান হয় কে ?
ক্ষমতায় আসার আগে রাশিয়া-ইউক্রেন ও ইসরাইল-প্যালেস্টাইনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মার্কিন খ্যাপাটে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।কিন্তু যুদ্ধ বন্ধ করতে পারেন নি।বরং গাজা দখল ও সেখানে পরিচালিত ইজরাইলের গণহত্যার প্রধান খেলোয়াড় হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের নাম আজ সবার মুখে মুখে।প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার এই ব্যর্থতা ঢাকতে পাক ভারত যুদ্ধে মধ্যস্থতা করে এখন প্রশংসার নাগরদোলায় দুলছেন ।
এ দিকে ফ্রান্সের তৈরী রাফাল যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করতে চীনের তৈরি জে-১০সি যুদ্ধবিমান ব্যবহার করা হয়েছে বলে দাবি পাকিস্তানের।এ খবর প্রকাশিত হবার সাথে সাথে চীনা অস্ত্রের বাজার চাঙ্গা হয়েছে।আন্তর্জাতিক মোড়লদের পাক-ভারত যুদ্ধ কে কেন্দ্র করে নতুন বলয় সৃষ্টির ক্ষেত্র উন্মোচিত হয়েছে।ছোট বড় অনেক দেশ নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় সাধারণ মানুষের মুখের খাবার কেড়ে নিয়ে সামরিক ব্যায় বাড়ানো ও অস্ত্র আমদানিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।এতে অস্ত্র প্রস্তুতকারী দেশগুলোর অস্ত্র ব্যবসার নতুন নতুন বাজার তৈরী হচ্ছে।নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের বাজারে অস্থিরতা বাড়ছে।মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমছে। আর কুয়াশায় ঢাকা অনিশ্চিত অর্থনীতির চাকার প্রতিনিয়ত পিষ্ট হচ্ছে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। এটাই রাজনীতি।
শেখ মহিতুর রহমান বাবলু : প্রবাসী সাংবাদিক ,লেখক ও কলামিস্ট
লন্ডন : ১৩.০৫.২০২৫