মতামত ২৩ জুলাই ২০২৪

'সেই তো নথ খসালি, তবে কেন লোক হাসালি'— সারওয়ার ই এলাম

অপরদিকে শিক্ষার্থীরা সহযোদ্ধাদের হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলনকে আরো জোরালো করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করবে যখন তারা ক্যাম্পাসে ফিরতে পারবে।

post

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো শক্ত অ্যাকশন নিয়ে পরিস্থিতি উন্নত করবেন বলে ব্যবসায়ীদেরকে আশ্বস্ত করেছেন। অপরদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে জরুরী অবস্থা প্রত্যাহার, ক্যাম্পাস খুলে দেয়া, ক্যাম্পাস থেকে পুলিশ সরিয়ে নেয়া ও ইন্টারনেট চালুর দাবী জানানো হয়েছে। সন্দেহ নেই অবস্থা যে আরো ভয়াবহতার দিকে। নিঃসন্দেহে শিক্ষার্থীরা দারুণ বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে খেলছেন হাসিনা সরকারের সঙ্গে।


 কারণ এই মুহূর্তে ইন্টারনেট চালু করা মানেই গত কয়েকদিনে বিভিন্ন বাহিনীর নারকীয় খুন, নির্যাতন, নিপীড়নের লক্ষ কোটি ভিডিওয় সোশ্যাল মিডিয়ায় সয়লাব হয়ে যাওয়া। ইন্টারনেট না থাকায় এ ক'দিন মানুষ এগুলো আপলোড করতে পারেনি। আর বিভিন্ন বাহিনীর হত্যাকাণ্ডের এসব ভিডিও আসার সঙ্গে সঙ্গে জনরোষ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা সহজেই অনুমেয়! 

এমনিতে কারফিউ চলাকালে বলতে গেলে যখন সকল যোগাযোগ বন্ধ তখন সংবাদপত্রগুলো জানিয়েছে নিহতের সংখ্যা এ পর্যন্ত তিনশ' ছাড়িয়ে গেছে। ইন্টারনেট চালু করার পর জানা যাবে এই সংখ্যা আসলে কত। খুব সম্ভবত হাজার ছাড়িয়ে যাবে।কারফিউ দিয়ে, সকল প্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কায়দায় সরকার গত কয়েকদিনে নির্বিচারে যে হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে তার প্রকৃত চিত্র প্রকাশিত হবে ইন্টারনেট খুলে দেয়ার পর। আর একইসঙ্গে যদি কারফিউও তুলে দেয়া হয় তখন শিক্ষার্থীদের হত্যার বিচারের দাবীতে লক্ষ কোটি জনতা যে রাস্তায় নেমে পড়বে এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। 

অপরদিকে শিক্ষার্থীরা সহযোদ্ধাদের হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলনকে আরো জোরালো করার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করবে যখন তারা ক্যাম্পাসে ফিরতে পারবে। তখন এতদিন যে আন্দোলন শুধু কোটা সংস্কারের দাবীতে সীমাবদ্ধ ছিল, সে আন্দোলন ছাত্র-জনতা তথা আপামর জনগোষ্ঠীর সরকার পতনের আন্দোলনে পরিণত হবে। সমগ্র দেশে আজ অগ্নিগর্ভ অবস্থা। তিন তিনশ' শিক্ষার্থীর লাশ দাফন করে এ জাতি নীরবে ঘরে ফিরে যাবে বলে মনে হয় না। বাঙালির ইতিহাস অন্তত তা-ই বলে না।

 অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আমরা আবারও এক চরম অনিশ্চয়তার দিকে ধাবিত হচ্ছি। সরকারি ছুটি বাড়িয়ে দফায় দফায় গোয়েন্দা প্রতিবেদন নিয়ে শেখ হাসিনার সরকার যে তাঁর 'সেইফ এক্সিট প্ল্যান' আঁকায় হিমশিম খাচ্ছেন সেটা তো স্পষ্ট। এরিমধ্যে আমেরিকান অ্যাম্বাসেডর পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে মুখের ওপর বলেই দিয়েছেন, আপনি তো পুলিশ যে গুলি করে মারছে সে ফুটেজ দেখালেন না। আমেরিকান অ্যাম্বাসেডরের এই বক্তব্যের শানে নযুল কিন্তু ব্যাপক। "আকলমন্দ কে লিয়ে ইশারাই কাফি হ্যায়"! হাছান মাহমুদ নিশ্চয় তা আঁচ করতে পারছেন।

 সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ণ করে মনে হচ্ছে শেখ হাসিনার সামনে এখন পথ একটাই খোলা। আর তা হলো সরকারী ছুটি ও কারফিউ চলাকালে দেশত্যাগ করা। কিন্তু তাকে আশ্রয় দেবে কে সেটাও এক বিরাট প্রশ্ন। দীর্ঘদিনের মিত্র ভারত ছাড়া আর কোনো রাষ্ট্র এ দায়িত্ব নিতে চাইবে বলে মনে হয় না। ভারতও নেবে কি না সন্দেহ। কারণ হাসিনা সরকার এবার ক্ষমতাচ্যুত হওয়া মানে আওয়ামী লীগের আগামী কয়েক দশক ক্ষমতায় আসার কোনো সম্ভাবনা না থাকা। তারা যে পরিমাণ দুর্নীতি করেছেন সেসব দুর্নিতীর বিচার ও সাজা শেষ হতেই কয়েক দশক সময় লেগে যাবে। ভারত যদি মনে করে আওয়ামী লীগকে দিয়ে তাদের আর স্বার্থ রক্ষা সম্ভব নয় তাহলে তারাও কিন্তু মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। হাসিনা সরকারের জন্য ' সেইফ এক্সিট'টা তখন ভীষণ কঠিন হয়ে দাঁড়াবে! 

এগুলো সবই আমার অলিক কল্পনা হতে পারে। কিন্তু এরশাদ পতনের আন্দোলন তো আমাদের চোখের সামনের ঘটনা। বর্তমান পরিস্থিতি অনেকটা সে রকমই! তাঁর মতো শক্তিশালী সামরিক জান্তাও কিন্তু আর্মি দিয়ে, ট্যাংক নামিয়ে নিজেকে শেষ রক্ষা করতে পারেননি। আর হাসিনা সরকারকে রক্ষা করার জন্য সেনাবাহিনী এগিয়ে এসে জাতিসংঘের স্যাংশন খাবেন, শান্তি মিশনের সুবিধা হারানোর ঝুঁকি নেবেন— এই সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। দেখা যাক অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়! শুধু একটা বিষয় ভেবে বিস্মিত হচ্ছি যে একটি ছোট্ট ঘটনাকে অপরিণামদর্শিতার কারণে সরকার আজ কোথায় নিয়ে গেল। রীতিমত তাদের বিদায় ঘণ্টা বাজছে! অথচ শিক্ষার্থীদের যে দাবীর প্রতি সরকার আজ 'নৈতিকভাবে একমত' সে দাবীটি ১৪ই জুলাই মেনে নিলে গঙ্গার জল কিন্তু এতদূর গড়াতো না! সরকার খেলেন কিন্তু ঘুরিয়ে খেলেন। গোয়ার্তুমি আরকি! গ্রাম্য কথায় একেই বলে— 'সেই তো নথ খসালি, তবে কেন লোক হাসালি'!

আরো পড়ুন!

Sidebar Banner
Sidebar Banner