সঞ্জিব দাস, গলাচিপা (পটুয়াখালী) : দীর্ঘ এক বছরের অধিক সমেয়র পর ঈদ উপলক্ষ্যে ঢাকা-গলাচিপা রুটে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। শুক্রবার (০৫ এপ্রিল) ঢাকা থেকে বাগেরহাট-২ লঞ্চ ছেড়ে আসার মধ্যে দিয়ে এই সার্ভিস শুরু হয়। এই সার্ভিসে যুক্ত হবে সাত্তার খান-১। ঈদ সার্ভিস বাদে সবসময় এই রুটে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক রাখার দাবী স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ যাত্রীদের। লঞ্চ মালিক সূত্রে জানা গেছে, পটুয়াখালীর লোহালিয়া ব্রীজের কাজ চলার কারণেও এই রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। এছাড়া পদ্মা সেতুর চালুর কারণে যাত্রীরা সড়ক পথে বেশি যাতায়াত করে আসছে। যে কারণে যাত্রী সংকটে এক বছর আগে থেকে ঢাকা-গলাচিপা রুটে লঞ্চ সার্ভিস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়ে। এদিকে নৌ-বিধৌত এলাকা হওয়ায় গলাচিপার আড়াই শতাধিক উপরে ব্যবসায়ী রয়েছে। যেমন কাপড় ব্যবসায়ী, শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রিপিচ, থান কাপড়, মশারি এবং খাদ্য সমাগী, হার্ডওয়্যার সামগ্রী, বিভিন্ন আইটেমের জুতা নানা ধরণের মালামাল যা ঢাকা থেকে পরিবহনে লঞ্চের উপর নির্ভর করত হতো। এবারে ঈদুল ফিতর ও বৈশাখী উৎসব কাছাকাছি হওয়ায় এসব পণ্যের চাহিদা তুলনামূলক বেশি। লঞ্চ সার্ভিস বন্ধ থাকার কারণে ব্যবসায়ীদের বাড়তি ভাড়া দিয়ে অন্য পরিবহনে মালামাল পরিবহন করতে হয়েছে। এতে নিত্যপণ্য দ্রব্যে দামের উপর প্রভাব পড়ছে। কাঁচা পণ্য শাক-সবজি বা মাছ পরিবহনেও বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হয় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের। তাই সবসময়ের জন্য এই লঞ্চ সার্ভিস চালুর দাবি জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা। গলাচিপা পৌরসভার কাপড়পট্টিতে অর্ধশতাধিক কাপড় ব্যবসায়ী রয়েছে। কাপড় ব্যবসায়ী কবির ব্রাদার্সের মালিক কবির জানান, যেই লঞ্চে ঢাকা থেকে গলাচিপা কাপড়ের এক গাট্টি আনতে ৫ হাজার টাকা খরচ হতো, সেই গাট্টি আনতে কুরিয়ার খরচ হয় ১০ হাজার টাকার অধিক। কুরিয়ার সার্ভিসরা ঢাকা থেকে পটুয়াখালী পর্যন্ত মালামাল নিয়ে আসে। তারপর ব্যবসায়ীরা অন্য যানবাহনে নিয়ে আসতে হয় এতে অধিক পরিমান খরচ বেড়ে যায়। নৌ-পরিবহন যৌথ মালিকানা প্রতিনিধি মো. মজিবুর রহমান জানান, লঞ্চ বন্ধ থাকায় মালিক ও কর্মচারী আর্থিক ভাবে সমস্যায় রয়েছে। লঞ্চঘাট কেন্দ্রীক ৫০ জন শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তাদের পরিবারে ঈদের আনন্দ নেই বললেই চলে। এ ব্যাপারে পটুয়াখালীর নদী বন্দরের উপ-পরিচালক মো. মামুনুর রশিদ জানান, ঈদ উপলক্ষে দো-তলা লঞ্চের সার্ভিসের কথা শুনেছি। লঞ্চের এ রুটটি বন্ধ হওয়ারর কারণ গলাচিপা-ঢাকা গ্রীন লাইনের বাস সার্ভিস চালুতে।
গলাচিপায় মামলা করায় আসামীদের হামলায় আহত ৪ জন হাসপাতালে ভর্তি
পটুয়াখালীর গলাচিপায় মামলা করায় আসামীদের হামলায় ৪ জন গুরুতর আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার ডাকুয়া ইউনিয়নের ফুলখালী গ্রামে মৃধা বাড়িতে শুক্রবার (০৫ এপ্রিল) দুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে। আহতরা হলেন লিটন মৃধা (২৪), কাইয়ুম মৃধা (৪৮), চম্পা বেগম (৪০) এবং হোসনেয়ারা বেগম (৪৫)। আহতদেরকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। আহত চম্পা বেগম জানান, গত কয়েক মাস আগে জমি-জমার জেরে আদালতে মামলা করায় আসামীরা ক্ষিপ্ত ও উত্তেজিত হয়ে মামলার বাদী সহ আমাদেরকে মারধর করে। আমাদের ডাক চিৎকারে এলাকাবাসী এসে পড়লে মারধারকারীরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা আমাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। আহত লিটন মৃধা ও কাইয়ুম মৃধা জানান, আসামীরা আমাদের জমি জোর পূর্বক দখল করতে চায়। এর বিরুদ্ধে আমরা আমাদের সঠিক কাগজপত্র দিয়ে আদালতে মামলা করি। এতে আসামীরা ক্ষিপ্ত ও উত্তেজিত হয়ে ওঠে এবং আজ দলবল নিয়ে আমাদেরকে মারধর করে। এ বিষয়ে আহত হোসনেয়ারা বেগম জানান, রফিক মৃধা, ইকবাল মৃধা, বশার মৃধা, সাইফুল মৃধা, রহমান মৃধা, হেলাল মৃধা ও রিফাত মৃধা সহ নাম না জানা আরো ৮/১০ জন লোক লোহার, রড, বাংলা দা, লাঠিশোটা নিয়ে আমাদেরকে এলোপাথারীভাবে মারধর করে গুরুতর আহত করে। ওরা মেয়ে মানুষ হিসেবে আমাকে ছাড়ে নাই। আমরা এর সঠিক বিচার চাই। এ বিষয়ে প্রতিপক্ষ রফিক মৃধার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মারামারিতে আমরাও আহত হয়ে হাসপাতালে আছি। গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডা. মেজবাহ উদ্দিন বলেন, মারামারির রোগী আমাদের হাসপাতালের ৩য় তলায় ভর্তি রয়েছে। তাদের ভিতর লিটন মৃধা ও কাইয়ুম মৃধা গুরুতর আহত। এ বিষয়ে ইউ/পি সদস্য সরোয়ার মোল্লা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাকুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিশ^জিৎ রায় বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। দু’পক্ষকে ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে মীমাংসার ব্যবস্থা করব। গলাচিপা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ফেরদাউস আলম খান বলেন, নিজেদের মধ্যে মারামারি হয়েছে। পরস্পর সকলেই আত্মীয়। তবে অভিযোগ পেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।