নেত্রকোণা হাওরাঞ্চল প্রতিনিধি :বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর একজন নির্ভীক, ত্যাগী ও আপোষহীন নেতার নাম ড. রফিকুল ইসলাম হিলালী। ছাত্রজীবন থেকে শুরু করে জাতীয় রাজনীতির কেন্দ্র পর্যন্ত তাঁর দীর্ঘ চার দশকের রাজনৈতিক পথচলা এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। নেত্রকোণা-৩ (কেন্দুয়া-আটপাড়া) আসনে বিএনপির রাজনীতিতে তিনি রাজপথের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হিসেবে সুপরিচিত।
ড. হিলালী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রজীবন অবস্থায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের মাধ্যমে রাজনৈতিক পথচলা শুরু করেন। ১৯৮৭ সালে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাউল হল হলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর একে একে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক (১৯৮৯), সাধারণ সম্পাদক (১৯৯০) এবং সভাপতি (১৯৯৩) নির্বাচিত হন। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও সাংগঠনিক দক্ষতায় তৎকালীন ছাত্র রাজনীতিতে তিনি ছিলেন উজ্জল নক্ষত্রের মত।
তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতিতে জড়িত থাকাস্থায় প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত হলে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তাঁর চিকিৎসার সম্পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেই সময় থেকেই দলের প্রতি তাঁর আস্থা ও অনুরাগ আরও দৃঢ় হয়।
শুধু ছাত্ররাজনীতি নয়, পরবর্তীতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কেন্দ্রীয় যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। বর্তমানে তিনি কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং নেত্রকোণা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
২০০৬ সালে তিনি কেন্দুয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক, ২০০৭ সালে সভাপতি, এবং ২০০৯ সালে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর আবারও কেন্দুয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হয়ে কেন্দুয়া-আটপাড়ার মাটিতে রাজনীতি দৃঢ় ভিত গড়ে তুলেন তিনি। আজও সংগঠনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত।
২০০৬ সালে তিনি প্রথম ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে দলের মনোনয়ন পান, যদিও তৎকালীন সরকার সে নির্বাচন বাতিল করে।
পরে ২০০৮ ও ২০১৮ সালে সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে অংশগ্রহণ করেন। বিশেষ করে ২০০৮ সালের নির্বাচনে দলের একটি অংশের বিরুদ্ধাচরণের সত্ত্বেও তিনি ঢাকা বিভাগের সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে নিজ জনপ্রিয়তা ও জনভিত্তি দৃঢ়ভাবে প্রমাণ করেছিলেন।
২০১৪ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় তিনি দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাঠে থেকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
আওয়ামী লীগের গত ১৬ বছর দুঃশাসনের ৫৬টি গায়েবি মামলা ও বহু হামলার শিকার হয়েও রাজপথ ছাড়েননি ড. হিলালী। দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে গিয়ে বৃদ্ধ পিতা সহ তাঁকে জেলে যেতে হয়েছে।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে কেন্দুয়া-আটপাড়ায় দলের নেতাকর্মীরা কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রাস্তায় নামেন—
"দুর্দিনের হিলালী ভাই, আমরা তোমায় ভুলি নাই",
"কেন্দুয়া-আটপাড়া মাটি, হিলালী ভাইয়ের ঘাঁটি"
— এমন সব স্লোগানে মুখরিত ছিল শহর- গ্রাম, পাড়া মহল্লা।
ড. হিলালী শিক্ষাজীবনেও ছিলেন উজ্জ্বল। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় লেটার মার্কসসহ উত্তীর্ণ হয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় অনার্স মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে শহীদ জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
ব্যক্তিজীবনে তিনি সদালাপী, জনবান্ধব এবং ত্যাগী নেতা হিসেবে পরিচিত। নিজ বাসভবনে একাধিকবার হামলা ও ভাঙচুর চালানো হলেও কখনো পিছপা হননি। দলীয় নেতাকর্মীদের চোখে তিনি একজন ‘বটবৃক্ষসম নেতা’, যিনি ঝড়ঝঞ্ঝায়ও ছায়া দিয়ে পাশে থাকেন। এলাকায় তিনি " দুর্দিনের হিলালী ভাই " হিসেবেও খ্যাতি অর্জন করেছেন।
ড. রফিকুল ইসলাম হিলালী বলেন,বিএনপি-ই আমার জীবন, বিএনপি-ই আমার মরণ।
“আমি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শকে অন্তরে ধারণ করি। সেই আদর্শ থেকে কখনো একচুলও সরে যাইনি, যাবও না। বিএনপি যখনই দুঃসময়ে পড়েছে, আমি রাজপথে থেকেছি। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সময় দমন-পীড়ন, মামলা-হামলা, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, জেলজুলুম—সব কিছু মাথা পেতে নিয়েছি।
আমার জীবনের বড় একটা অংশ কেটেছে মিছিল-মিটিং আর আদালতে হাজিরা দিতে দিতে।
রাজনীতিকে এতটা ভালোবেসেছি, দায়িত্ববোধে এতটাই বাধ্য থেকেছি যে, নিজের পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতেও পারিনি। তবুও আমি গর্বিত—কারণ আমি নিজের আদর্শের প্রতি, দলের প্রতি ও নেতাকর্মীদের প্রতি সবসময় সৎ ও দায়িত্বশীল ছিলাম এবং আছি। এই পথেই আমি থাকতে চাই, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।
নেত্রকোণার বিএনপির রাজনৈতিক ইতিহাসে ড.রফিকুল ইসলাম হিলালী এক সাহসিকতা,ত্যাগ ও নিষ্ঠার
প্রতিচ্ছবি।