গ্রাম বাংলা ২৩ এপ্রিল ২০২৫

ধান কাটার স্বপ্নে রওনা, রং সাইডের দুঃস্বপ্নে থেমে গেল জীবন: গুটুদিয়ায় ফোরলেনে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় আহত ১০

post

মেহেদী হাসান, খুলনা প্রতিনিধিঃ সকালের আলো ছুঁয়ে স্বপ্ন নিয়ে বের হয়েছিল কয়রা উপজেলার একদল শ্রমিক। গন্তব্য গোপালগঞ্জ—ধান কাটার জন্য। পরিবারে নতুন হাসি ফেরানোর আশা ছিল তাদের চোখে। কিন্তু ভাগ্য পথেই মুখ থুবড়ে পড়ল—খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের গুটুদিয়ায় ঘটে গেল ভয়াবহ দুর্ঘটনা।

কয়রা থেকে খুলনার দিকে ছেড়ে আসা একটি বাস গুটুদিয়া মোড়ে এসে রং সাইডে উঠে ফোরলেনের ডিভাইডারের সঙ্গে ধাক্কা খায়। প্রচণ্ড গতিতে ধাক্কা খেয়ে মুহূর্তেই বাসটি উল্টে যায়। বাসে থাকা শ্রমিকদের মধ্যে প্রায় ১০ জন আহত হন, এর মধ্যে ৬ জনের অবস্থা গুরুতর।

গুরুতর আহতদের মধ্যে রয়েছেন কয়রার এসএম আবু সাইদ। স্থানীয়রা ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে আহতদের উদ্ধার করে ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।

ডুমু‌রিয়া হাইও‌য়ে থানার এস আই মোঃ কামরুল ইসলাম ঘটনাটি নি‌শ্চিত ক‌রে ব‌লেন, চুকনগর থে‌কে খুলনাগামী ওই বাস‌টি ক‌য়েকজন যাত্রী নি‌য়ে খুলনার দি‌কে যা‌চ্ছিল। বেলা সা‌ড়ে ১১ টার দি‌কে বাস‌টি গুটু‌দিয়া পৌঁছা‌লে চলন্ত অবস্থায় রাস্তার ওপ‌রে পা‌ল্টি খায়। স্থানীয়রা ঘটনা‌টি শু‌নে উদ্ধার কা‌জে অংশ নেয়। ত‌বে এ ঘটনায় কারও মৃত্যু হয়‌নি। ক‌য়েকজন যাত্রী গুরুতর আহত হ‌য়ে‌ছেন। তা‌দের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করা হয়‌নি। 

যারা জীবিকার জন্য রোজ হাড়ভাঙা খাটুনি খাটেন, তাদের এমন অমানবিক পরিণতি আমাদের গা শিউরে তোলে। কৃষির মৌসুম এলেই হাজারো শ্রমিক এক জেলা থেকে অন্য জেলায় ছুটে যান। ধান, চাল, খাদ্যের পেছনের এই মানুষগুলোই আজ জীবনের ঝুঁকিতে।

তাদের কোনো বিমা নেই, নেই সুরক্ষা—আছে শুধু দুর্ভাগ্য আর অনিশ্চয়তা। সড়কে যদি এমন অসচেতনতা থাকে, তাহলে কে নেবে এই মানুষগুলোর জীবনের দায়?

বাসটি রং সাইডে চলে যায়—এ এক পরিচিত ও ভয়ঙ্কর চিত্র। এটি শুধু একটি আইনের লঙ্ঘন নয়, এটি একেকটি পরিবার ধ্বংসের আশঙ্কা। শ্রমিকেরা যারা সকালবেলায় শুধু দু'মুঠো ভাত আর সন্তানের হাসির আশায় পথে নেমেছিলেন, তারা আজ হাসপাতালের বিছানায়।

প্রতিটি আহত ব্যক্তি একজন স্বামী, বাবা, ভাই বা সন্তান। পরিবারে যাদের মুখ চেয়ে সকাল শুরু হয়। একটি দুর্ঘটনা শুধু আহত মানুষটিকে নয়, গোটা পরিবারকে ক্ষত-বিক্ষত করে দেয়।

রং সাইডে চলাচলের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ, মহাসড়কে স্পিড মনিটরিং সিস্টেম, শ্রমিকদের পরিবহনে আলাদা নিরাপত্তা নিশ্চিত, চালকদের প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি ও গণপরিবহনে নিয়মিত ফিটনেস ও লাইসেন্স যাচাই হতে পারে সমাধান।

এই প্রতিবেদন শুধু একটি দুর্ঘটনার গল্প নয়, এটি একটি সতর্কবার্তা। প্রতিটি যাত্রা যেন নিরাপদ হয়, প্রতিটি শ্রমিক যেন ঘরে ফিরতে পারেন সুস্থ শরীরে—এটাই হোক আমাদের দায়িত্ব। কারণ, সড়ক যেন হাহাকারের নয়, বরং জীবনের গল্প বলে। সড়ক নিরাপদ হলে—সুরক্ষিত হবে পরিবার, স্বপ্ন আর দেশ।

আরো পড়ুন!

Sidebar Banner
Sidebar Banner