নিউজ ডেস্ক,টিভি নাইনটিন অনলাইন
ঠাকুরগাঁও: দেশে গুম, খুন ও সব হত্যার দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচার দাবি করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, পথ হারিয়ে এখন নোংরা খেলায় মেতে উঠেছেন হাসিনা। ভারতের দিল্লিতে বসে নতুন চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছেন।সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নতুন ষড়যন্ত্র করছেন তিনি। যখন তারা সমস্ত খেলায় পরাজিত হবে, নির্বাচনে হেরে যাবে, তখন বলবে হিন্দু ভাইদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে।মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে ‘ঐক্য ও সম্প্রীতি সমাবেশে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি।তিনি আরও বলেন, আপনারা জানেন বাংলাদেশে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান একটি গাছে ফুলের মতো ফুটে রয়েছে। আমাদের এ সম্পর্কের মধ্যে তারা ফাটল ধরাতে চায়। ধর্মীয় অপপ্রচার ছড়িয়ে দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে চায়। আমাদের কথা খুব পরিষ্কার- যখন কোনো রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়, তখন একটা গোলযোগ হয়। সেটা কখনও ধর্মীয় নয়, রাজনৈতিক। আমরা সব সময় হিন্দু ভাইদের ভোট পেয়েছি, তাহলে আমরা তাদের কেন আলাদা ভাববো।মির্জা ফখরুল বলেন, আমার খুব খারাপ লেগেছে, যখন দেখেছি বিজয় স্মরণীর সামনে শেখ মুজিবের যে মূর্তিটা ছিল তা অসংখ্য মানুষ দড়ি দিয়ে বেঁধে টেনে হিঁচড়ে ফেলে দিচ্ছে। তিনি তো আমাদের জাতীয় নেতা ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তার বিরাট ভূমিকা ছিল। সেই লোকটাকে হাসিনা কতটা ছোট করে ফেলেছে।শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে ফখরুল বলেন, আপনি প্রতিটি স্তরে দুর্নীতি করলেন, দেশের মানুষকে কুক্ষিগত করে রাখলেন আর সব ঢাকতে দেশের সব রাস্তার মোড়ে মোড়ে বাবার একটা করে মুণ্ডু বানিয়ে রেখে দিয়েছেন। এসব মুণ্ডু না বানিয়ে বাবার আদর্শকে ধারণ করা আপনার উচিত ছিল। অহংকার সহ্য করে না মানুষ। এই অহংকারই আপনার পতন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মির্জা ফখরুল বলেন, গত ১৫ বছরে বিএনপির ৭শ নেতাকে গুম, সহস্রাধিক নেতাকে গুলি করে হত্যা এবং ৬০ লাখ নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। জনগণের ওপর অন্যায়-অত্যাচার আর দেশের সম্পদ লুটপাটকারী এই দলের নেতারা এখন পালাবার পথ হারিয়ে ফেলেছে।ছাত্রদের আন্দোলন নিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, অসংখ্য ছেলেরা যখন মারা গেল তখন আর তাদের মা-বাবা, অভিভাবকরা ঘরে বসে থাকতে পারেননি। সবাই বেরিয়ে এসেছেন রাস্তায়। সেদিন বৃষ্টির মতো গুলি করেছে পুলিশ। তারপরও লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তা ছাড়েনি। রংপুরের আবু সাঈদ, আর আন্দোলনরত ছাত্রদের পানি দিয়ে দৌড়ে বেড়ানো মুগ্ধ। পয়েন্ট ব্লাঙ্ক থেকে তাদের কীভাবে গুলি করে মেরেছে। হাসিনার এসব অন্যায়ের কারণেই তাকে শেষ পর্যন্ত দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। সে আল্লাহকে অবিশ্বাস করে জনগণকে নির্যাতন করেছে। তার অন্যায়ের প্রতিবাদেই শেষ পর্যন্ত লাখো ছাত্র-জনতা নয় যেন আল্লাহর তরফ থেকে অবিশ্বাস্য কোনো ঘটনা ঘটেছে। সবাই রাস্তায় নেমেছে হাসিনার বিরুদ্ধে। জয় হয়েছে ছাত্র-জনতার।সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রাখতে হিন্দু-মুসলিম এক হয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল। যদি কেউ সংখ্যালঘু পরিবারের প্রতি অন্যায় অবিচার করে তাদের আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার কথাও বলেন মির্জা ফখরুল।সদর উপজেলা বিএনপির আয়োজনে শান্তি ও সম্প্রীতি সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সল আমীন, সহ সভাপতি ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, পৌর বিএনপির সভাপতি মো. শরিফুল ইসলাম শরিফ, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হোসেন তুহিন, মহিলা দলের সভাপতি ফোরাতুন নাহার প্যারিসসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী। এর পর সন্ধ্যায় তিনি রুহিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ঐক্য ও সম্প্রীতি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। পরে আন্দোলনে নিহত চার নেতার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মির্জা ফখরুল।