ছাত্ররা কোনও দলের নয়। প্রফেসর ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারও কোনও দলীয় সরকার নয়। দেড় দশকের দুঃশাসন থেকে মুক্তি পেতে আপামর জনগোষ্ঠী এক হয়ে স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটিয়ে যে ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করলো , এই অন্তর্বর্তী সরকার সেই জনতার।
এই অন্তর্বর্তী সরকার সমগ্র দেশের।এই অন্তরবর্তী সরকার দেশে ও প্রবাসে থাকা বিশ কোটি বাংলাদেশীর। এই সরকার কোনও দলের স্বার্থে কাজ করবেন না। তাঁরা কাজ করার শপথ নিয়েছেন দেশের জন্য, দেশের জনগণের জন্য। তাঁদের আমরা দায়িত্ব দিয়েছি রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য।
রাষ্ট্র সংস্কার মানে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য উপযোগী করে গড়ে তুলে, জনগণের আশা আকাঙ্খা অনুযায়ী একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করে এই অন্তবর্তী সরকার বিদায় নেবেন সেটাই প্রত্যাশা।
আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যে সে মহান কাজটি রাতারাতি হয়ে যাবে না। এ এক বিরাট কর্মযজ্ঞ। কাজটি করার জন্য তাঁদেরকে প্রয়োজনীয় সময় দিতে হবে, সহযোগিতা করতে হবে। তাই আমাদের উচিত হবে তাঁদেরকে সে সময়টুকু দেয়া। নিজ নিজ অবস্থানে থেকে সবরকমের সহযোগিতা দিয়ে তাঁদের হাতকে শক্তিশালী করা এবং জাতি তাঁদেরকে যে দায়িত্ব দিয়েছে সে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্র তৈরি করা।
কিন্তু তা না করে শুধুমাত্র রাজনৈতিক দলের প্রতি আমাদের অন্ধ আনুগত্যের কারণে ষড়যন্ত্রকারীদের ফাঁদে পা দিয়ে আমরা যদি এখনই আবারও দলীয় সরকারের জন্য দেশকে অস্থিতিশীলতার দিকে ঠেলে দিই তাহলে অন্তর্বর্তী সরকারকে দেশের জনগণ রাষ্ট্র সংস্কারের যে মহান লক্ষ্যে ক্ষমতায় বসিয়েছে সে লক্ষ্য পূরণ হবে বলে মনে হয় না। ফলে পরিণতি যা হওয়ার তা-ই হবে। আমরা আবারও সেই নষ্ট রাজনীতির চোরাবালিতে আটকা পড়ে যাবো। জাতি কাঙ্খিত মুক্তির দ্বার প্রান্তে যেতে না যেতেই আবারও পথ হারাবে। আবারও শুরু হবে দুর্নীতির মহোৎসব, হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের খেলা, রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের হত্যা ও গুমের রাজনীতি, সংসদবিহীন রাজনীতি, প্রশাসন, শিক্ষা, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিচার বিভাগসহ সর্বত্র দলীয় করণের নগ্ন উৎসব। এখন আমাদের নিজেদের বিবেককে প্রশ্ন করতে হবে আমরা কী দলীয় রাজনীতির সেই দুঃশাসন চাই, না আমরা সুশাসন চাই?
যদি দুঃশাসন চাই তাহলে পথ খুব সুস্পষ্ট। তাহলো— সারাদেশে একযোগে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালিয়ে, ঘরে ঘরে ডাকাত ঢুকিয়ে দিয়ে, মানুষের বাড়ি-ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে দিয়ে দেশে চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি করা। আর যদি সুশাসন চাই, তাহলে আমাদেরকে অন্তত কিছু সময়ের জন্য হলেও দেশের বৃহত্তর স্বার্থে রাজনৈতিক দলের প্রতি আমাদের অন্ধ আনুগত্য থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এসে সর্বোচ্চ সার্মথ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে সম্ভাব্য সব রকমের সহযোগিতা করতে হবে।
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহ সংস্কারের মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কারের যে মহান দায়িত্ব তাঁদেরকে আমরা দিয়েছি, নির্বিঘ্নে সে দায়িত্ব পালন করার সুযোগ করে দিতে হবে। আর এই দায়িত্ব আমার, আপনার— সকলের। তাই আসুন এখানে কোনও দল নয়, দেশকে প্রাধান্য দিই। দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিই। রাজনৈতিক দলগুলো আমাদের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি ঢুকিয়ে দেশের যে ভয়াবহ ক্ষতি করেছে, সে ক্ষতি থেকে দেশকে উদ্ধার করি। দলীয় শাসনতো গত তিপ্পান্ন বছরে অনেক দেখেছি। বারবার আমরা রাজনৈতিক দলগুলোকে বিশ্বাস করেছি, আর প্রতিবারই আমাদের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে। ক্ষমতায় যাওয়ার পর রাজনীতিবিদরা ড্রাকুলায় পরিণত হয়েছেন। ক্ষমতায় টিকে থাকার লালসায় নিরস্ত্র জনগণের ওপর গুলি চালিয়ে দেশে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়েছেন। আসুন নিজের বিবেককে প্রশ্ন করি— আমরা কি সেই অবস্থার পুনরাবৃত্তি চাই, না রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমনভাবে নির্মাণ করতে চাই যেখানে অসৎ রাজনীতিবিদদের স্বার্থ চরিতার্থ করার পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে?
যদি চাই, তাহলে এ-ই উপযুক্ত সময়। যে কোনও মূল্যে প্রফেসর ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারকে আমাদের শক্তিশালী করতে হবে।দুষ্কৃতিকারীদের, ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দিতে হবে। তাই আসুন আমরা আবারও গর্জে উঠি। আমরা সংখ্যালঘুদেরকে রক্ষার, দেশের জনগণের জান ও মাল রক্ষার একেকজন অতন্দ্র প্রহরী হয়ে যাই।
একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থা আমাদের হিন্দু সম্প্রদায়কে জিম্মি বানিয়ে ষড়যন্ত্রের নীল নকশা বাস্তবায়নের যে ঘৃণ্য তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে, আসুন আমরা তা নস্যাৎ করে দিই। এ দেশ হিন্দুদের। এ দেশ মুসলমানদের। এ দেশ বৌদ্ধদের। এ দেশ খ্রীস্টানদের। এ দেশ সকল ধর্মের মানুষের। আসুন আমরা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা তৈরির সকল অপচেষ্টা রুখে দিই। হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাই-বোনদের প্রতি অনুরোধ আপনারা নিজেদেরকে বলির পাঠা বানাবেন না । ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার টার্গেট এখন আপনারা। স্বৈরশাসককে ক্ষমতায় বসানোর শেষ অবলম্বন এখন আপনারাই।
আপনাদেরকে জিম্মি করে ওরা শেষ খেলাটা খেলতে চায়। সুতারাং প্রতিহত করুন। সারাদেশ আজ আপনাদের পাশে। এদেশটা আপনাদের। আপনাদের চৌদ্দ পুরুষের। এ দেশের মাটির সঙ্গে আপনাদের রক্ত মিশে আছে। আত্মত্যাগ মিশে আছে। সুতারং ঘুরে দাঁড়ান। আজ ছাত্র-জনতা যেভাবে আপনাদের মন্দির পাহারা দিচ্ছে এটাই আমাদের জাতিগত ঐতিহ্য। সকল ধর্মের ভাই-বোনেরা আসুন আমরা সেই ঐতিহ্য রক্ষায় সচেষ্ট হই। দেশে শান্তি ফিরিয়ে আনি। শপথ নিই আর একটি হিন্দু বাড়িতেও আক্রমণ হতে দেয়া হবে না। পাড়ায় মহল্লায় আমরা প্রতিটি নাগরিক হয়ে যাই হিন্দু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার সুদৃঢ় প্রাচীর। যে কোনও মূল্যে রক্ষা করি তাঁদেরকে। নস্যাৎ করে দিই দাদাদের মোড়লগিরি। মু্ক্তি আমাদের আসবেই! বিশ কোটি বীর বাঙালির শক্তির কাছে কোনও পরাশক্তিই জয়ী হতে পারবে না!
সারওয়ার-ই আলম ১০ই আগষ্ট ২০২৪