বাংলাদেশ ২৫ জুলাই ২০২৪

জাতির বিবেকে পচন ধরেছে : সন্দেহ নেই

post

খৰৰ : গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় সাংবাদিকদের এক  মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে । এডিটরস গিল্ডের উদ্যোগে আয়োজনে মতবিনিময় সভায়  বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও হেড অব নিডজ উপস্থিত ছিলেন।

বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট ও টেলিফোন সংযোগ বন্ধ করে, পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কায়দায় রাতের অন্ধকারে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর দ্বারা এই যে বর্বরোচিত, নৃশংস গণহত্যা চালালো সরকার, একজন সাংবাদিকও   প্রধানমন্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে এই গণহত্যার প্রতিবাদ  করলেন না। নিন্দা জানালেন না। বিচার দাবী করলেন না। প্রধানমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন না, তাদেরকে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের অধিকার কে দিয়েছে? উল্টো তাঁরা কী করলেন? তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করলেন।

 আবেদ খানের মতো সিনিয়র সাংবাদিক বললেন তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আছেন এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তাঁদের আস্থা ও বিশ্বাস থাকায় তাঁর জন্য যা প্রয়োজন তা করতে পারেন।

 ভোরের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্তেরও একই সুর। তিনি আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসেবে আরো শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করলেন।

 বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার সম্পাদক নঈম নিজাম বললেন এই নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শাস্তির আওতায় আনা দরকার।

ডিবিসির এডিটর ইন চিফ ও সিইও মনজুরুল ইসলাম সাম্প্রতিক ঘটনাকে কেন্দ্র করে আত্মসমালোচনা করার এবং জনপ্রতিনিধিদের কর্মকাণ্ডের মূল্যায়ন করার পরামর্শ দিলেন প্রধানমন্ত্রীকে।

 জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক মিডিয়ার ভূমিকা পর্যবেক্ষণ করার কথা বললেন; কারণ তাঁর ভাষায় তারা এখন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের যন্ত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

 কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় হলো এসব সিনিয়র সাংবাদিকের একজনও কোটা আন্দোলনে তিন শতাধিক ছাত্র হত্যাকাণ্ডের কোনো প্রতিবাদ করলেন না। নিন্দা জানালেন না । বরং তাঁরা একেকজন অবতীর্ণ হলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টার ভূমিকায়। আওয়ামী লীগের শুভাকাঙ্খীর ভূমিকায়। শেখ হাসিনাকে পরামর্শ দিলেন তাঁর দলকে আরো শক্তিশালী করার জন্য।

 প্রথম আলো পত্রিকায় খবরটি পড়ছিলাম আর বারবার বিস্মিত হচ্ছিলাম। কিছুতেই নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। একজন সাংবাদিক হিসেবে নিজেকে বড়ই অপরাধী ও লজ্জিত মনে হচ্ছিল। ভাবছিলাম দেশের সাংবাদিকতা আজ কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে! বারবার মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগছিল— এই যে এতজন সিনিয়র সাংবাদিক, তাঁদের কি কোনো মানবিকতা নেই? এঁরা কি রক্ত মাংসের মানুষ নন? এঁদের মনে কি মানুষের জন্য বিন্দুমাত্র কোনো দয়ামায়া নেই? মানুষ এতটা নির্দয়, এতটা নিষ্ঠুর, এতটা অমানবিক, এতটা ব্যক্তিত্বহীন ও এতটা মেরুদন্ডহীন হতে পারে কী করে?

 প্রথম আলো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাংবিদকদের সাক্ষাতের একটি ছবিও ছেপেছে। সেই ছবিতে আরো অনেক সিনিয়র সাংবাদিককে দেখা যাচ্ছে। তাঁরা কে কী বলেছেন কাগজটি সেটা ছাপেনি। কেন ছাপেনি জানি না। তবে ছাপলে ভাল হতো। জাতি তাঁদের কথাও জানতে পারতো।

 আবেদ খান, শ্যামল দত্ত, ফরিদা ইয়াসমিন, মনজুরুল ইসলাম, নঈম নিজামের বক্তব্য পড়ে আমার কাছে মনে হয়েছে আজ বাংলাদেশে সাংবাদিকতার ইতিহাসে একটি কলঙ্কিত অধ্যায় রচিত হলো। জাতি দেখলো দেশের সাংবাদিকদের বিবেকের পচন আজ কোথায় গিয়ে ঠেকেছে। প্রধানমন্ত্রীর সামনে দাঁড়িয়ে একটি গণহত্যার প্রতিবাদ না করে, বিচার দাবী না করে উল্টো তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা তো পরোক্ষভাবে গণহত্যাটিকে সমর্থন করার সামিল।

 একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যাকে যারা সমর্থন করেছেন তাদেরকে জাতি এখনো নিন্দার চোখে দেখে। দু' হাজার চব্বিশ সালের গণহত্যাকে যারা সমর্থন করছেন তাদেরকে জাতি কোন চোখে দেখবে সেটা সময়ই বলে দেবে। একাত্তরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর 'কলাবরেটর দের বিচার যদি মুক্তিযুদ্ধের চল্লিশ বছর পর হতে পারে, তাহলে দু' হাজার চব্বিশ সালের গণহত্যার বিচারও নিশ্চয় একদিন হবে! আমাদের বুঝতে অসুবিধা হয় না সেদিন সেই বিচারের আসামী কারা হবেন!


লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের watsapp গ্রূপ থেকে সংগৃহিত। লেখক : সারোয়ার ই আলম 

আরো পড়ুন!

Sidebar Banner
Sidebar Banner