নিউজ ডেস্ক,টিভি নাইনটিন অনলাইন
ঢাকাঃ ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। তারল্যসংকটে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো প্রয়োজনীয় তহবিলের জোগান দিতে না পারায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া অব্যাহত রেখেছে সরকার। চলতি অর্থবছরের শুরুর দিকে ঋণাত্মক থেকে ১২ মে পর্যন্ত সরকার নিট ঋণ নিয়েছে ৫০ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা। এ সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নেওয়া হয়েছে ৭০ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আগে নেওয়া ১৯ হাজার ৬৫৯ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে সরকার। সম্প্রতি সরকারের ঋণ বাড়লেও গত জানুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংক খাতে সরকারের ঋণস্থিতি ছিল ঋণাত্মক ১২০ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।কর সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকারের আশানুরূপ রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। অথচ ডলারের বিনিময় হার এবং সুদহার বৃদ্ধির কারণে খরচ বাড়ছে। আবার গত মার্চ পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রে সরকারের ঋণ আগের অর্থবছরের চেয়ে ১২ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা কমেছে। সরকারের অন্যান্য খরচও বেড়েছে। ফলে তারল্য সংকটের মধ্যেও সরকারকে এখন ব্যাংক থেকেই ঋণ নিতে হচ্ছে। এ প্রবণতা বেসরকারি খাতের ঋণ পাওয়া বাধাগ্রস্ত করছে। আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক একদিকে ট্রেজারি বিল ও বন্ডের বিপরীতে কিছু ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে, অন্যদিকে কিছু ব্যাংকের বিধিবদ্ধ তারল্য সংরক্ষণে ছাড় দিয়ে চলতি হিসাবে ঘাটতি রেখে লেনদেনের সুযোগ দিচ্ছে। সব মিলিয়ে ঋণের সুদহার বেড়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের খরচ বাড়ছে। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির ভঙ্গি ঠিক আছে। আবার সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ধার দিতেই পারে। তবে কতদিন ধার দেবে, তার একটি সীমা থাকা দরকার। তিনি বলেন, যেসব ব্যাংকের বছরের পর বছর স্বাস্থ্য খারাপ, তাদের সহায়তা দিয়ে এভাবে চালানো যাবে না। এক পর্যায়ে এসব ব্যাংক বন্ধ কিংবা একীভূত করতে হবে। কেননা তাদের পুরো স্বাস্থ্যই খারাপ। ব্যাংকগুলোর কাঠামোগত পরিবর্তন কিংবা সংস্কার দরকার।দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশি-বিদেশি উৎসে সব মিলিয়ে সরকারের ঋণস্থিতি প্রায় ১৮ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের ঋণ ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। গত মার্চ পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রে ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা। আর গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদেশি উৎসে সরকারের ঋণ ছিল ৭ হাজার ৯৬৯ কোটি ডলার। বর্তমান বিনিময় হার ১১৭ টাকা ৮০ পয়সা অনুযায়ী, যা প্রায় ৯ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে প্রভিডেন্ট ফান্ড ও সর্বজনীন পেনশন স্কিমসহ বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নিচ্ছে সরকার। যে কারণে আগামী অর্থবছরের বাজেটে কেবল সুদ পরিশোধেই সরকারের ব্যয় প্রস্তাব করা হচ্ছে ১ লাখ ৮ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত ব্যয় আরও বেশি হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, বিদেশি ঋণের সুদহার এবং বিনিময় হার অনেক বৃদ্ধির কারণে সরকারের সুদ ব্যয়ের চাপ বেড়েছে। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্রে এখন ১১ শতাংশের মতো সুদ দিতে হয়। এক বছর মেয়াদি ট্রেজারি বিলে ১২ শতাংশ সুদ দিচ্ছে। ট্রেজারি বন্ডে সুদ দিচ্ছে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত। যে কারণে ব্যক্তি পর্যায়ের অনেকে এখন আমানত ভাঙিয়ে বা সঞ্চয়পত্রের টাকা তুলে ট্রেজারি বিল-বন্ড কিনছে।কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ১৬ মে পর্যন্ত কয়েকটি ব্যাংকের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে রক্ষিত চলতি হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা। এসব ব্যাংকের বিধিবদ্ধ নগদ জমাসহ (সিআরআর) মোট ঘাটতি ছিল ২৮ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। ব্যাংকগুলোর ঘাটতির প্রভাবে নজিরবিহীনভাবে পুরো ব্যাংক খাত এখন বড় অঙ্কের সিআরআর ঘাটতিতে পড়েছে।বিদ্যমান নিয়মে ব্যাংকগুলোর মোট আমানতের ৪ শতাংশ হারে সিআরআর হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নগদে রাখতে হয়। এ হিসাবে ১৬ মে পুরো খাতের রাখার কথা ছিল ৭২ হাজার ৬২৪ কোটি টাকা। অনেক ব্যাংক নির্ধারিত সীমার বেশি রেখেছে। তবে কয়েকটি ব্যাংকের বিপুল ঘাটতি বিবেচনায় নিয়ে সংরক্ষণের পরিমাণ ছিল ৫৬ হাজার ২৭ কোটি টাকা। এতে পুরো ব্যাংক খাতে এখন সিআরআর ঘাটতি দেখা দিয়েছে ১৬ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকার ।