গ্রাম বাংলা ৩০ এপ্রিল ২০২৪

গলাচিপায় অপার সম্ভাবনাময় সু-স্বাদু মুগডাল যাচ্ছে জাপানে

পটুয়াখালী গলাচিপার আরো খবর

post

সঞ্জিব দাস, গলাচিপা (পটুয়াখালী) : পটুয়াখালীর গলাচিপায় অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে মুগডালে। আর সম্ভাবনাময় এ সু-স্বাদু মুগডাল যাচ্ছে জাপানে। এতে খুশি কৃষকরা। বাংলাদেশের পরিবারগুলোর প্রতি দিনের খাদ্য তালিকায় ভাতের পরই ডালের স্থান। এ দেশের প্রায় সব রকমের ডালই চাষ করা হয়। এসবের মধ্যে মুগডাল অন্যতম। গলাচিপায় মাঠে মাঠে মুগডালের সমারহ। এটি খেতে যেমন সু-স্বাদু, তেমনি চাষ করেও ভালো দাম পাওয়া সম্ভব। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মুগডালের আবাদ হয়ে থাকে। এর মধ্যে পটুয়াখালী, বরগুনা, বরিশাল জেলায় আবাদ বেশি হয়। গলাচিপায় উৎপাদিত ডাল দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর পাশাপাশি বিদেশেও রফতানি করা হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গলাচিপায় এ বছর মুগডালের আবাদ হয়েছে ১৫ হাজার ৮০০ হেক্টর, ফেলন (পেলেন ডাল) ডাল ৭৭০ হেক্টর ও খেসারী ডাল ৮৫০ হেক্টর। এ বছর ডালের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪ হাজর ৫০০ হেক্টর। তবে তা ছাড়িয়ে গেছে। কম বেশি ডালের আবাদ করলেও চাষীর সংখ্যা ২২ হাজার ৫০০-এর মতো। বর্তমান সরকার রবি মৌসুমে কৃষি প্রণোদনা হিসেবে গলাচিপা উপজেলার ৩ হাজার ৫০০ চাষীকে বিনামূল্যে জনপ্রতি পাঁচ কেজি করে বীজ মুগডাল বারী-৬, ২০ কেজি করে ড্যাব ও এমওপি সার বিতরণ করা হয়েছে। সূত্রে আরো জানা গেছে, এলাকাভেদে মুগের বপন সময়ের তারতম্য দেখা যায়। রবি মৌসুমে বরিশাল অঞ্চলের জন্য বপনের উত্তম সময় হচ্ছে পৌষ-মাঘ মাস (জানুয়ারির শেষ সপ্তাহ হতে ফেব্রুয়ারির মধ্য ভাগ পর্যন্ত)। আষাঢ় মাসে (মধ্য জুন থেকে মধ্য জুলাই পর্যন্ত) অবিরাম বৃষ্টিতে মুগের ফল পচে যায়। চৈত্র মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে (মধ্য মার্চ) বীজ বপন সম্পন্ন করতে পারলে আষাঢ় মাসের আগেই ফসল সংগ্রহ করা যায় এবং ফল পচনের ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হয়। তীব্র তাপদাহের কারণে কৃষক-কৃষাণীরা ডাল তোলার জন্য সূর্য উঠার আগ থেকেই ক্ষেতে কাজ শুরু করে। সূর্যের তাপের তীব্রতার কারণে ক্ষেত থেকে ডাল তোলা সমস্যায় পড়তে হয় কৃষকদের। এছাড়া গাছগুলো ভালোভাবে শুকিয়ে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে বা গরু দিয়ে মাড়াই করে মুগডাল সংগ্রহ করা হয়। সরেজমিনে গলাচিপা সদর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কালিকাপুর গ্রামের কৃষক আ. ছালাম মৃধা (৭৩) জানান, তিনি ৬০ শতাংশ জমিতে মুগডাল আবাদ করেছেন। আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করতে ট্রাক্টর বাবদ ২৭০০ টাকা, দৈনিক ৭০০ টাকা মজুরি বাবদ ছয় দিনে ৪২০০ টাকা, সার বাবদ ৪৫০ টাকা, ওষুধ বাবদ ১২২০ টাকা ও বীজ বপন করতে ১০০০ টাকা খরচ হয়েছে। তার উৎপাদিত ডাল হয়েছে দুই মণ। যার বাজার মূল্য ৮৪০০ টাকা। আরো কিছু ডাল ক্ষেতে হতে পারে।’ রতনদী তালতলী ইউনিয়নের উলানিয়া বাজারের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কৃষক আমির হোসেন বলেন, মুগ ডাল চাষে ফলন ভালো পাওয়া যায়। জাপানে মুগ ডালের চাহিদা আছে তারা এ ডাল দিয়ে বিভিন্ন ধরণের সুপ তৈরি করে। যা খুব সু-স্বাদু, পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যসম্মত। তাই জাপানে আমাদের এলাকার মুগডাল রপ্তানীর সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এ সময় তিনি আরো জানান, ‘গলাচিপায় বর্তমানে প্রচ- খরা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে গরমে ডালের শাখা-প্রশাখা বাড়েনি। পাতা মুচরিয়ে রয়েছে। ফলন এ বছর কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জমিতে উপযোগী পরিবেশ না পাওয়ায় ডালের উৎপাদন কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টি হলেই উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছে।’ এ বিষয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. নাহিদ হাসান বলেন, ‘আমাদের এখানে দেশী বা সোনা মুগ, বারি মুগ-০৬ এর চাষ হয়। বারি মুগ-৬ এর হেক্টর প্রতি ফলন ১ থেকে ১.৫ টন। বিগত তিন-চার বছর ধরে এই এলাকার মুগডাল গ্রামীন ইউগ্লোনা কোম্পানির মাধ্যমে জাপান রফতানি হচ্ছে। তীব্র তাপদাহে মুগডালের ফুল শুকিয়ে যাচ্ছে। মাটিতে রসের ঘাটতি দেখা দেয়ায় ডালের আকার ছোট হচ্ছে, ডালের ছড়ার সংখ্যা কম হচ্ছে।’ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরজু আক্তার জানান, ‘তীব্র তাপদাহে কৃষকরা কিছুটা বিপাকে রয়েছে। তবে ক্ষেতে সেচ দেয়ার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে এলে ফলন বাড়ার সুযোগ রয়েছে।’

গলাচিপায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুরগী ব্যবসায়ীকে মারধর

পটুয়াখালীর গলাচিপায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মুরগী ব্যবসায়ীকে মারধর করার খবর পাওয়া গেছে। গুরুতর আহত মুরগী ব্যবসায়ী হচ্ছেন উপজেলার রতনদী তালতলী ইউনিয়নের কামার হাওলা গ্রামের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত. মান্নান হাওলাদারের ছেলে মো. বশির হাওলাদার (৫৫)। ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার (২৮ এপ্রিল) বিকাল ৩ টায় রতনদী তালতলী ইউনিয়নের কামার হাওলা গ্রামের মাদবর বাড়ির দরজায়। আহত বশির হাওলাদারকে এলাকাবাসী উদ্ধার করে গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডাক্তার মো. মেজবাহউদ্দিন জানান, আহত বশির হাওলাদার আমার চিকিৎসাধীনে ২য় তলায় ৮ নম্বর বেডে ভর্তি আছে। তার শরীরের বিভিন্ন অংশে কালো কালো দাগ আছে। তার বুকে ও পেটে চোট লেগেছে এবং মাথায় কোপ লেগেছে তাতে সেলাই করা হয়েছে। আহত বশির হাওলাদার জানান, গত গতকাল রবিবার বিকাল ৩ টায় আমাদের গ্রামের মাদবর বাড়ির দরজায় আমার রাজহাঁসে ধান খাওয়ায় প্রতিপক্ষের সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে চড়াও হয়ে রনি পাঠান, সাহিন পাঠান, হেলাল মাদবরসহ আরো অনেকে একত্রিত হয়ে আমাকে মারধর করে। আমার ডাক চিৎকারে এলাকাবাসী এসে পড়লে মারধরকারীরা পালিয়ে যায়। পরে এলাকাবাসী আমাকে উদ্ধার করে গলাচিপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। এ বিষয়ে আহত বশির হাওলাদারের স্ত্রী জবেদা বেগম বলেন, পোষা প্রাণী মানুষের বাড়িতে যেতে পারে। কিন্তু আমার রাজহাঁস যদি ওদের ধান খেয়ে থাকে তাহলে আমাদেরকে বললেই হত। আমরা ধানের ক্ষতিপূরণ দিয়ে দিতাম। এর জন্য আমার স্বামীকে মারার কোন প্রয়োজন ছিল না। আমি এর বিচার চাই। এ বিষয়ে রনি ও সাহিন পাঠানের কাছে মুঠো ফোনে জানতে চাইলে তাদের ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এ বিষয়ে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রিয়াজ খলিফা জানান, বিষয়টি আমি আপনাদের মাধ্যমে শুনেছি। ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে জানাব। এ বিষয়ে রতনদী তালতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মস্তফা খান জানান, দু’পক্ষকে ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে মীমাংসার ব্যবস্থা করব। গলাচিপা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ফেরদৌস আলম খান বলেন, অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরো পড়ুন!

Sidebar Banner
Sidebar Banner