গলাচিপা (পটুয়াখালী) : পটুয়াখালীর গলাচিপায় স্ত্রীর দাবীতে ৩ দিন ধরে এক তরুনীর অনশনের কথা শুনে প্রথমে ছেলে এবং পরে তার পরিবারের লোকজন চম্পট দিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে। এতে বাড়িতে কেউ না থাকায় আতঙ্কে সময় কাটছে ভূক্তভোগী তরুনীর। দিনে মানুষ থাকলেও রাত ঘনিয়ে এলে আশেপাশের লোকজন যার যার বাড়িতে চলে গেলে অন্ধকারে বাড়িতে ভয়ে আছে ওই তরুনী। জানা যায়, স্ত্রীর স্বীকৃতি পেতে অন্তরা রানী শীল (২২) নামের তরুনী গত বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে গলাচিপা পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের গলাচিপা সরকারী হাসপাতালের দক্ষিণ পাশে শের-ই বাংলা রোড এলাকায় এ্যাডভোকেট অরুন ভূইয়ার প্রথম পুত্র অনুপম ভূইয়ার (৩০) বাড়িতে অনশন করছেন। অন্তরা রানী শীল বরিশাল সিটি কর্পোরেশন ৩০নং ওয়ার্ডের বাশতলা, কাশিপুর নামক এলাকার অন্ধ প্রতিবন্ধী কৃষ্ণ চন্দ্র শীলের মেয়ে। সে বরিশাল বিএম কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শেষ পর্বের ছাত্রী। স্ত্রীর মর্যাদা না পেলে আত্মহত্যার হুমকিও দিয়েছেন ওই তরুনী। এ বিষয়ে অন্তরা রানী শীল এর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার মামা তাপস শীল এক সময় অনুপমের বাড়ীতে ভাড়া থাকতো। সেই সুবাদে তাদের বাসায় বেড়াতে যেতাম। এতে অনুপমের সঙ্গে আমার পরিচয়। আট বছর ধরে অনুপমের সংগে আমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিভিন্ন স্থানে এমনকি পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটা আমাকে ঘুরতে নিয়ে যান অনুপম। ঘুরতে গিয়ে বরিশালের একটি মন্দিরে নিয়ে আমাকে শাখা-সিঁদুর পরিয়ে বিয়ে করেন। সরকারী চাকুরী করবে বলে অনুপম ভূইয়া আমাকে বিয়ের কথা গোপন রাখতে বলে। কিন্তু অনুপম ভূইয়া আমাকে বিয়ে করলেও এখন সে অন্য মেয়েকে বিয়ে করতে যাচ্ছে শুনে আমি স্ত্রীর দাবী নিয়ে আমার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে এখানে এসেছি। কিন্তু এখানে আসার পর অনুপম ভূইয়া গা ঢাকা দিয়েছে এবং তার পরিবারের লোকজন আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে। পরে তারাও ঘরে তালা লাগিয়ে পালিয়েছে। আমাকে তারা মেনে না নিলে মৃত্যু ছাড়া আমার যাওয়ার আর কোন পথ থাকবে না। তিনি আরো বলেন, তিন দিনের অনশনে ইউএনও স্যার এবং গলাচিপা থানা থেকে আমার জন্য খাবার পাঠিয়েছে। আমার খাবার দিয়ে কী করব। আমাকে স্ত্রীর স্বীকৃতি দিতে হবে। কেননা আমি আর বাড়ি ফিরে যেতে পারব না। আমার সমাজের লোকজন আমাকে মেনে নিবে না। আজ শনিবার বিকাল ৩ টায় গলাচিপা উপজেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন নিয়ে বসার কথা রয়েছে। গতকাল রাতে ইউএনও স্যার, ওসি স্যার এবং ডাকুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিশ^জিৎ রায় আমার কাছে এসে এ বিষয়ে শনিবার বসবেন বলে তারা আমাকে জানান। এ বিষয়ে অন্তরা রানী শীলের মা কল্পনা রানী বলেন, আজ ৩ দিন ধরে আমার মেয়েকে পাচ্ছি না। গলাচিপা থানা থেকে আমাকে ফোন করায় আমি গতকাল সন্ধ্যায় গলাচিপা থানায় আসি। গলাচিপা থানায় এসে জানতে পারি আমার মেয়ে অরুন ভূইয়ার বাড়িতে অনশন করছে। তিন দিন পার হলেও ছেলে পক্ষের কেউ আমাদেরকে কোন খবর দেয় নি। আমি শুনে অসুস্থ হয়ে পড়লে পথচারীরা আমাকে ধরে গলাচিপা হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে রাত ৪ টায় একটু সুস্থ হলেও এখনও হাসপাতালে ভর্তি আছি। এ বিষয়ে নিয়ে গলাচিপা ডাক বাংলোতে বাংলাদেশ হিন্দু-বৈদ্য-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ গলাচিপা উপজেলা শাখার সভাপতি শংকর লাল দাস, সাধারণ সম্পাদক, কাউন্সিলর সমির কৃষ্ণ পাল, গলাচিপা উপজেলা আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সরদার মু. শাহ আলম, কেন্দ্রীয় কালিবাড়ি কমিটির সভাপতি দিলীপ বণিক, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ গলাচিপা উপজেলা শাখার সভাপতি গোপাল সাহা, উপজেলা আ’লীগ নেতা ও জেলা পরিষদ সদস্য মাঈনুল ইসলাম রনো, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার শিবু লাল দাস, বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাপস দত্ত, আমখোলা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান মনির, ডাকুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিশ^জিৎ রায়, চরকাজল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রুবেল মোল্লা, ছেলের নিকটতম আত্মীয় এসআই কমল দে, ছেলের বাবা অরুন ভূইয়া, গলাচিপা মহিলা কলেজের প্রভাষক ও সাংবাদিক হারুন-অর-রশিদ, মেয়ের পক্ষের আত্মীয় স্বজন সহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিল। এ সময় উভয় পক্ষে কথা শুনে বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাপস দত্ত সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, মেয়েটি ছেলের বাড়িতে ৩ তিন অতিবাহিত হওয়ায় বিবাহ ছাড়া আর অন্য কোন কথা না বলাই ভালো বলে আমি মনে করি। পরে ছেলের নিকটতম আত্মীয় এসআই কমল দে রাতে এ বিষয়ে ছেলে সহ তার বাবার সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত জানাবেন বলে জানান। এ ব্যাপারে গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন আল হেলাল জানান, আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম এবং বিষয়টি সমাধানের জন্য হিন্দু সম্প্রদায় ও কালিবাড়ি কমিটিকে বলেছি।
গলাচিপায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক শিশুর মৃত্যু
পটুয়াখালীর গলাচিপায় মরিয়ম আক্তার (৭) নামের এক শিশু বিদ্যুৎ এর শক খেয়ে ঘটনা স্থলেই মারা যায়। এমন একটি ঘটনা ঘটেছে গলাচিপা উপজেলার গোলখালী ইউনিয়নের কালির চর গ্রামে শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) দুপুর ১ টার দিকে। গোলখালীর ৫নং ওয়ার্ডের কালির চর গ্রামের মো. মনির মোল্লার তিন ছেলে মেয়ের মধ্যে একমাত্র মেয়ে মরিয়ম। সে বাড়ীর পার্শ্ববতী পূর্ব কালির চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। জানা গেছে, মরিয়ম আক্তারের চাচাতো দাদা শাহজামাল মোল্লার মিশুক গাড়ীতে ঘরের সামনেই বিদ্যুৎ দিয়ে ব্যাটারী চার্জ দিতে ছিল। অনুমান করা হয় যে, মরিয়ম আক্তার সবার চোখ ফাকি দিয়ে হয়তো চার্জের ব্যাটারির কাছে গিয়েছিল। এ সময় পুরুষরা জুমার নামাজে ও মহিলারা রান্নার কাজে ব্যস্ত থাকায় মরিয়মকে কেউ দেখতে পায়নি। পরবর্তীতে বাড়ীর লোকজন তাকে দেখতে পেয়ে গলাচিপা হাসপাতালে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ব্যাপারে গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ফেরদৌস আলম খান জানান, অভিভাবকরা এসেছিল কোন ধরনের অভিযোগ না থাকায় লাশ বাড়ীতে নিয়ে দাফনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।