নিউজ ডেস্ক,টিভি নাইনটিন অনলাইন
ঢাকাঃ পহেলা ফাল্গুন, বসন্তের প্রথম দিন আজ। একই সঙ্গে আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি, ভালোবাসা দিবসও। কয়েক বছর আগে গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির সঙ্গে সমন্বয় করে বাংলা বর্ষপঞ্জির সংস্কার করা হয়েছে। এর পর থেকেই বাংলার বসন্ত আর পাশ্চাত্যের ‘ভ্যালেনটাইনস ডে’ হাত ধরাধরি করে আসছে একই দিনে।মাঘের শীতকে বিদায় জানিয়ে প্রকৃতিতে বসন্তের আগমন। ফাগুনের ঝিরিঝিরি হাওয়ার সঙ্গে কোকিলের কুহুতান মন ভরিয়ে দেয়। চোখ জুড়িয়ে যায় বাগানের রক্তিম পলাশ, অশোক, শিমুল, কৃষ্ণচূড়া, কাঞ্চন পারিজাত, মণিমালা, মহুয়া, রুদ্রপলাশ, কুসুম, মাধবী আর গাঁদার ছোট ছোট ফুলের বর্ণিল রূপে। যেন আনন্দ-উপলক্ষ দুটি গলা ছেড়ে গাইছে, ‘আয় তবে সহচরী, হাতে হাতে ধরি ধরি/নাচিবি ঘিরি ঘিরি, গাহিবি গান’!বসন্তকে বলা হয় ঋতুরাজ। এ সময় নবীন পাতায় লাগে ফাগুনের পাগলা হাওয়া। শিমুল-পলাশের ডালে আগুন লাগে। ফুলে ফুলে চারদিক হয় আলোকিত।ইট, কাঠ, কাচ ও ইস্পাতের নগরীতে হাঁটলেও পাওয়া যায় সুরভিত বাতাস। সামান্য সবুজ থাকলে এক-আধবার কোকিলের ডাকও শোনা হয়ে যায় কখনো কখনো। এককথায় বসন্তের মাতাল সমীরণ মনে দেয় দোলা। প্রিয়জনের সান্নিধ্য পেতে ব্যাকুল হয় প্রাণ। ভালোবাসার জন্য এমন অনুকূল সময় আর হয় না।হৃদয়ে বসন্তের উষ্ণতা নিয়ে আজ বাইরে পা দেবেন অনেকেই। প্রিয়জনকে নিয়ে ভালোবাসার দিগন্ত ছুঁতে চাইবেন তাঁরা। একটি দিন প্রিয় মানুষের সঙ্গে একান্তে নিজেদের মতো করে কাটাবেন। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম দিনটিকে বেছে নেবে মনের মানুষের কাছে প্রণয়ের কথা নিবেদনের জন্য।গোলাপের গুচ্ছ নিয়ে একসঙ্গে বাইরে ঘুরে বেড়ানো, কোথাও খেতে যাওয়ার মধ্য দিয়ে দিনটি কাটবে অনেকের। কারো হয়তো প্রেমের প্রথম কুঁড়িটি লাজুক চোখ মেলে তাকাবে পহেলা বসন্তের আলোয়। আজ ঘরে-বাইরে শোনা যাবে অনুপম রায় রচিত তুমুল জনপ্রিয় গানটির কলি—‘বাতাসে বহিছে প্রেম/নয়নে লাগিল নেশা/কারা যে ডাকিল পিছে/বসন্ত এসে গেছে।’ভালোবাসার উপহারের মধ্যে প্রথম অবস্থান ফুলের। দেশে একদিনে সবচেয়ে বেশি ফুল বিক্রিও হয় এই বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসে।
বরাবরের মতোই রাজধানীতে আজ বসন্ত উদযাপনের কেন্দ্রবিন্দু হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণ। বাসন্তী রং আর নাচে-গানে জমে উঠবে বসন্ত উত্সব। জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে সকাল ৭টায় শুরু হবে এই আয়োজন। বরেণ্য সেতারবাদক জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় ‘রাগ বসন্ত মুখারী’ বাদনে শুরু করবেন এই উত্সবের আনুষ্ঠানিকতা। ঢাকার বিভিন্ন সংগীত ও নৃত্যদলের পাশাপাশি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পরিবেশনা ছাড়াও বসন্তকথন পর্ব আয়োজিত হবে। উৎসবে প্রীতিবন্ধনী ও আবীর বিনিময়ের পর্ব থাকছে। সকাল ১০টায় রয়েছে আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন। চারুকলা অনুষদ থেকে বের হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ঘুরে আবার চারুকলায় ফিরে আসবে শোভাযাত্রাটি। বিকেল সাড়ে ৩টায় শুরু হবে উৎসবের দ্বিতীয় পর্ব। আয়োজনের শুরুতে থাকবে বেঙ্গল পরম্পরা সংগীত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উচ্চাঙ্গসংগীত পরিবেশনা। প্রাণ-প্রকৃতি নিয়ে গান, কবিতা ও নৃত্যের সঙ্গে থাকবে সাঁওতাল, মারমা ও গারো সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী নাচ। গান, কবিতা ও নাচের এই আয়োজনটি চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।ফাগুনের উৎসবের এই রং চারুকলা থেকে ছড়িয়ে পড়বে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। সেখান থেকে পুরো নগরে। অনেকেরই পোশাকে থাকবে বসন্তের আবহ। সংখ্যায় কম হলেও গতকালও দেখা গেছে তার কিছু নমুনা। হলদে শাড়ি আর ফুলের মুকুটে সাজা অনেক নারীরই দেখা মিলেছে পথে। অমর একুশে বইমেলায়ও আজ একবার ঢু মারবে বহু মানুষ।প্রতিবছরের মতো এবারও বিকেল সাড়ে ৩টায় পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক ও উত্তরা দিয়াবাড়ীর লেকসংলগ্ন মাঠে বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে বসন্ত উত্সবের অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে।শিল্পকলা একাডেমির বসন্ত উৎসবের আয়োজনটি শুরু হবে বিকেল ৩টায়। ঢাকার রমনা পার্কের শতায়ু অঙ্গনে এই আয়োজনে থাকবে আলোচনাসভা ও বসন্তনৃত্য। পরে একটি শোভাযাত্রা সহযোগে শিল্পীরা যাবেন শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। একাডেমির নন্দন মঞ্চে পরে সাংস্কৃতিক পর্ব অনুষ্ঠিত হবে।ঢাকার পরীবাগে সংস্কৃতি বিকাশ কেন্দ্রে বসন্তবরণের আয়োজন শুরু হবে আজ বিকেল ৩টায়। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বসন্তবরণের আয়োজনটি শুরু হবে দুপুর ১২টায়। শিল্পকলা একাডেমির বাউলশিল্পীরা বাংলার লোককবিদের গান পরিবেশন করবেন। ছায়ানটের বসন্ত উত্সব উদযাপিত হবে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায়। নৃত্য,গীত, বাদ্য আর কথনে সাজানো হবে এই আয়োজনটি।