কমিউনিটি ০১ ডিসেম্বর ২০২৩

গাদাগাদি পরিবেশে ভাড়াটিয়া থাকার দোষ স্বীকার করেছেন টাওয়ার হ্যামলেটসের ল্যান্ডলর্ড দম্পতি

post

টাওয়ার হ্যামলেটসের শেডওয়েলে একটি দুই বেডরুমের ফ্ল্যাট প্রায় ২২ জনকে ভাড়া দিয়ে মানুষের জীবনের চেয়ে আর্থিক মুনাফাকে উপরে রাখায় ফ্ল্যাটটির মালিক স্বামী-স্ত্রী তাদের বিরুদ্ধে আনীত হাউজিং অ্যাক্ট ২০০৪ এর অধীনে নয়টি অপরাধের জন্য দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন।

ই-বাইকের একটি ত্রুটিপূর্ণ লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি চার্জ দেয়ার সময় সৃষ্ট অগ্নিকান্ডে ৫ মার্চ ২০২৩ এ শ্যাডওয়েলের ওই ফ্ল্যাটের বাসিন্দা ৪১ বছর বয়সী মিজানুর রহমান আগুনে মারা যান।

তার মৃত্যুর প্রেক্ষিতে ম্যাডকস হাউসের চতুর্থ তলার ফ্ল্যাটের মালিক সফিনা বেগম (৫০) এবং আমিনুর রহমান (৫৩) এর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল। 

গত ২৮ নভেম্বর মঙ্গলবার টেমস ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শুনানির সময় অভিযুক্ত স্বামী ও স্ত্রী হাজির হন এবং হাউজিং অ্যাক্ট ২০০৪ এর অধীনে মোট নয়টি অপরাধের জন্য তারা দোষী সাব্যস্ত হন। পরবর্তী শুনানির দিন আগামী ৩ জানুয়ারি ২০২৪ স্নায়ার্সব্রুক ক্রাউন কোর্টে মামলাটির বাজেয়াপ্ত এবং শাস্তি ঘোষণা করা হবে।

এ প্রসঙ্গে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের অন্তর্বর্তীকালীন কর্পোরেট ডিরেক্টর রাজ মিস্ত্রী বলেছেন, “অগ্নিকান্ডের শিকার মিজানুর রহমানের পরিবার এবং বন্ধুরা রয়েছেন আমাদের চিন্তাভাবনা এবং প্রার্থনায় রয়েছেন। তাঁর মর্মান্তিক মৃত্যু এবং তিনি যেখানে থাকতেন সেই ফ্ল্যাটের ভয়ানক ওভারক্রাউডিং (মাত্রাতিরিক্ত ভিড় অর্থাৎ গাদাগাদি অবস্থায় বসবাস) পরিস্থিতি আমাদের সকলকে হতবাক করেছিল।”

তিনি বলেন, “আজকের আদালতের মামলা এই বার্তাই পাঠায় যে আমরা এমন বাড়িওয়ালাদের সহ্য করব না যারা আমাদের বারায় আমাদের বাসিন্দাদের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলবে। সফিনা বেগম এবং আমিনুর রহমানের মতো বাড়িওয়ালা, যারা তাদের ভাড়াটেদের নিরাপত্তা ও কল্যাণের চেয়ে অর্থ কামানোকেই উপরে রাখে, তেমন ভাড়াটিয়াদের বিরুদ্ধে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিবো।”

সফিনা বেগম তার বিরুদ্ধে আনা ছয়টি অভিযোগের দোষ স্বীকার করে নেন, যার মধ্যে রয়েছে ঐ ফ্ল্যাটে ওভারক্রাউড বা অতিরিক্ত ভিড় হতে দেওয়া, লাইসেন্সের শর্তাবলী মেনে চলতে ও পরিদর্শন করতে ব্যর্থ হওয়া, একটি বৈধ গ্যাস সেফটি সার্টিফিকেট না থাকা এবং কাউন্সিলের অনুরোধকৃত নথিপত্র সরবরাহ করতে ব্যর্থ হওয়া।

আমিনুর রহমান তিনটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো হচ্ছে, ফ্ল্যাটে ওভারক্রাউড বা গাদাগাদি পরিবেশে থাকার অনুমতি দেওয়া, লাইসেন্সের শর্তাবলী মেনে চলতে ব্যর্থতা এবং কাউন্সিলকে অনুরোধকৃত নথিপত্র সরবরাহ করতে ব্যর্থতা।

ক্রাইম এ্যাক্ট ২০০২ এর অধীনে একটি বাজেয়াপ্ত আদেশ প্রাপ্তির লক্ষ্যে কাউন্সিল এই ল্যান্ড লর্ড দম্পতিকে ক্রাউন কোর্টে পাঠাতে আদালতে অনুরোধ করেছে। যদি মঞ্জুর করা হয়, ক্রাউন কোর্ট তাদের অপরাধমূলক আচরণ থেকে তাদের সুবিধার পরিমাণ নির্ধারণ করবে এবং সর্বোচ্চ অর্থ পরিশোধের আদেশ দেবে। 

টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল বারায় দুর্বৃত্ত বাড়িওয়ালাদের দমন করাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে।

একের অধিক লোকের বসবাসের বাড়ির জন্য অতিরিক্ত লাইসেন্সিং স্কিম পুনর্নবীকরণ এবং উইভার্স, হোয়াইটচ্যাপেল, ও স্পিটালফিল্ডস এন্ড বাংলাটাউন সহ পূর্বে বাদ দেওয়া অঞ্চলগুলিতেও এটি সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের কেবিনেট গত অক্টোবরে অনুমোদন করেছে। এই নতুন নিয়ম গুলো ১ এপ্রিল ২০২৪ থেকে পাঁচ বছরের জন্য কার্যকর হবে।

রেন্ট রিপেমেন্ট অর্ডার (আরআরও) এর আওতায় লাইসেন্স বিহীন সম্পত্তিতে বসবাসকারী ২৯৯ জন ভাড়াটিয়াকে তাদের ভাড়া বাবদ পরিশোধ করা ১ মিলিয়ন ৪৩ হাজার ৪৭ পাউন্ড ফেরত দাবি করতে কাউন্সিল সাহায্য করেছে।

অগ্নিকাণ্ডের পর, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল এবং লন্ডন ফায়ার ব্রিগেড ই-বাইক এবং ই-স্কুটার ব্যাটারির বিপদ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে তাদের হ্যাশট্যাগ চার্জসেইফ  (#ChargeSafe) প্রচারণা শুরু করেছে।

হোম সেক্রেটারি কাছে পাঠানো একটি চিঠিতে, টাওয়ার হ্যামলেটস্ কাউন্সিল ই-বাইক এবং ই-স্কুটার গুলোর কারণে সৃষ্ট ক্রমবর্ধমান অগ্নিকাণ্ড মোকাবেলায় সরকারকে আরও কিছু করার আহ্বান জানায়।

সেপ্টেম্বরে প্রচারাভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে, কাউন্সিল বারার বিভিন্ন দোকানে ৮১টি আমদানি করা ও অনিরাপদ লিথিয়াম ব্যাটারি খুঁজে পায় এবং ধ্বংস করে।


আরো পড়ুন!

Sidebar Banner
Sidebar Banner