হঠাৎ করে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনার ফলে ওজনে পরিবর্তন দেখা দিলেও ভুলভাবে কিটো অনুসরণ করলে কিডনি অর্থাৎ বৃক্কে পাথর হতে পারে, দেখা দেয় পুষ্টির অভাব।
পানিশূন্যতা
এই ধরনের খাদ্যাভ্যাসে চর্বি হারানোর আগে দেহ পানি হারায়। ফলে দেখা দেয় পানিশূন্যতা। ‘জার্নাল অফ ট্র্যান্সলেশনাল মেডিসিন’য়ে প্রকাশিত গবেষণায় এই দাবি করেন ইতালির ‘ফেড্রিকো টু ইউনিভার্সিটি মেডিকেল স্কুল অফ নেইপল্স’য়ের গবেষকরা।
এই সমস্যার লক্ষণগুলো হল- প্রস্রাবের রং গাঢ় হওয়া, মাথা ঝিমঝিম করা, মুখের ভেতর শুকনা ভাব, তৃষ্ণা বৃদ্ধি, ক্লান্ত লাগ।
হজমতন্ত্রের সমস্যা
কিটো ডায়েটের সাধারণ সমস্যার মধ্যে হজমতন্ত্রের গণ্ডগোল দেখা দিতে পারে। যেমন- কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, বমিভাব বা পেটফাঁপা। এর মধ্যে ডায়রিয়া হওয়ার মাত্রা বেশি হয় কারণ বেশি মাত্রায় চর্বিজাতীয় খাবার দেওয়া হয় এই খাদ্যাভ্যাসে।
বৃক্কে পাথর
ফ্রন্টিয়ার্ডস জার্নালে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফিজিশিয়ান কমিটি ফর রেসপনসিবনল মেডিসিন’ পরিচালিত গবেষণায় দাবি করা হয়- বৃক্কে সমস্যা ছিল না এমন মানুষদের কিটো ডায়েট অনুসরণ করে বৃক্কে পাথর হওয়ার কারণ হল- এই খাদ্যাভ্যাসে প্রাণিজ ও উচ্চ-চর্বির খাবারের প্রতি নজর দেওয়া হয়।
আর যাদের ইতোমধ্যেই বৃক্কে সমস্যা আছে তাদের অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।
কর্মক্ষমতা কমায়
মিনার্ভা মেডিকা’ সাময়িকীতে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেইন্ট লোইস ইউনিভার্সিটি’র করা গবেষণায় দাবি করা হয়, ওজন কমাতে সাহায্য করলেও খেলোয়াড়দের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে কিটো ডায়েট।
গবেষকরা দেখতে পান- যারা কিটো ডায়েট অনুসরণ করেননি তাদের তুলনায় যারা করেছেন, তাদের সাইকেলিং ও দৌড়ানোর ক্ষমতায় বাজে প্রভাব পড়ছে।
কিটো ফ্লু
কারও কারও ক্ষেত্রে ‘কিটো ফ্লু’তে ভোগার সম্ভাবনা রয়েছে। ‘ক্যাম্পবেল ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ অস্টিওপ্যাথিক মেডিসিন’ পরিচালিত ‘ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিন’ সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে এর লক্ষণগুলো হল-
* কোষ্ঠকাঠিন্য * মাথা ঝিমঝিম করা * ব্যায়াম করতে না পারা * ক্লান্তি * মাথাব্যথা * ঘুম না হওয়া বা ইনসমনিয়া * পেটফাঁপা বা বমিভাব।
পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও ‘ইলেক্ট্রোলাইট’ গ্রহণের মাধ্যমে কিটো ফ্লু থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আর ধীরে ধীরে প্রচলিত খাদ্যাভ্যাসে ফিরে আসলে এই সমস্যা দূর হয়।
দেহে ভিটামিন ও খনিজের স্বল্পতা
বিভিন্ন ধরনের ফল ও সবজি খাওয়ার পরিমাণ কিটো পদ্ধতিতে কমিয়ে দেওয়া হয়। বেশি মাত্রায় কার্ব খাওয়া পরিমাণ কমানোর ফলে শরীরে নানান পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি দেখা দেয়। যেমন- ক্যালসিয়াম, আঁশ, লৌহ, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম ও বিভিন্ন রকম ভিটামিন।
বিশেষ করে যারা কিটো অনুসরণ করেন তাদের ফোলাট ও থিয়ামিনের পাশাপাশি ভিটামিন এ, বি-সিক্স, বি-টুয়েল্ভ, সি, ই এবং কে’র অভাব দেখা দেয়। ফলে হাড়, বিপাক প্রক্রিয়া, মাড়ি, লোহিত রক্ত কণিকা কমে যাওয়া সংক্রান্ত সমস্যা বাড়ে।
ওজন বৃদ্ধি
খাবার খাওয়ার পরিমাণ বেশি মাত্রায় সীমিত করা হয় কিটো ডায়েটে। তবে এই পদ্ধতি অনুসরণ করে ওজন কমার পর, নিয়মিত খাদ্যাভ্যাসে ফিরে আবারও ওজন বেড়ে যায়। কারণ দীর্ঘমেয়াদে কিটো করা সম্ভব নয়।
সাধারণত দুই থেকে তিন সপ্তাহ, অনেক সময় ১২ মাসের জন্য কিটো ডায়েট করার পরামর্শ দেওয়া হয়। তাই এই পদ্ধতিতে ওজন কমাতে চাইলে নিজে নিজে নয় বরং অভিজ্ঞ পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিয়ে করতে হবে।
News Source : bdnews24.com