কমিউনিটি ২৮ নভেম্বর ২০২৫

মাদক অপরাধ ও অসামাজিক আচরণ দমনে দেশের প্রথম নিজস্ব বিশেষজ্ঞ দল গঠন করেছে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল

post

* শীর্ষ ৫০ জন অপরাধীকে লক্ষ্য করে ব্যক্তিকেন্দ্রিক দমন অভিযান

* শুধুমাত্র স্থানের ওপর নয়, ব্যক্তির ওপর নজর

* সহায়তা ও রেফারালের সঙ্গে লক্ষ্যভিত্তিক প্রয়োগ - দলটি মাদক-সম্পর্কিত অপরাধ ও অসামাজিক আচরণে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে সাড়া দিতে সক্ষম

টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল দেশে প্রথমবারের মতো নিজেদের একটি বিশেষ ড্রাগ (মাদক) স্কোয়াড গঠন করেছে, যা মাদকদ্রব্য অপব্যবহার এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট অসামাজিক আচরণ মোকাবিলায় কাজ করবে।

সফল পাইলট প্রকল্প পরিচালনার পর আজ (১৮ নভেম্বর) এই স্পেশালিষ্ট ড্রাগ স্কোয়াডের উদ্বোধন করে টাওয়ার হ্যামলেটসের এক্সিকিউটিভ মেয়র লুৎফুর  রহমান বলেন, “বহু বছরের কৃচ্ছ্রসাধন নীতি এবং পুলিশের বাজেট কাটছাঁটের পর, এই উদ্ভাবনী এবং উচ্চ-প্রভাবযুক্ত মডেলটি কাউন্সিলকে কম খরচে দীর্ঘদিনের সমস্যাগুলো মোকাবিলায় নতুন সুযোগ দিচ্ছে। আশা করি অন্যান্য কাউন্সিলও আমাদের পথ অনুসরণ করবে।”

পাইলট প্রজেক্টের প্রাথমিক ফলাফযে দেখা গেছে যে মাদক-সংক্রান্ত অপরাধ ও অসামাজিক আচরণ মোকাবিলায় বিশেষায়িত এই টিমের নিবেদিত পদ্ধতি ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সহায়তার রেফারাল এবং লক্ষ্যভিত্তিক প্রয়োগ একত্রে ব্যবহার করে দলটি ব্যক্তিকেন্দ্রিকভাবে সাড়া দিতে পারছে।

পরীক্ষামূলক ভাবে কার্যক্রম পরিচালনার মাত্র তিন মাসের মধ্যে ৫০ হাজার পাউন্ড মূল্যের মাদক জব্দ, মাদকসেবীদের ব্যবহৃত একটি জায়গা পরিষ্কার, এবং অবৈধ মাদকের সঙ্গে জড়িত ঝুঁকিপূর্ণ বাসিন্দাদের সহায়তা দেওয়াসহ নানা সফলতা অর্জন করেছে টাওয়ার হ্যামলেটস মাদক স্কোয়াড।

গোটা যুক্তরাজ্যে স্থানীয় সরকারগুলো, অর্থাৎ কাউন্সিলগুলির মধ্যে প্রথম বিশেষায়িত দল হিসেবে বিবেচিত সাত সদস্যের এই স্কোয়াড বা টিম - যা প্রয়োগমূলক পদক্ষেপের সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের সহায়তা প্রদানকে একত্রিত করে মাদক অপব্যবহার এবং সংশ্লিষ্ট অসামাজিক আচরণ মোকাবিলায় কাজ করছে।

পুলিশ, কাউন্সিলের সিসিটিভি ও আইন প্রয়োগকারী দল, স্পেশালিস্ট সাবস্ট্যান্স মিসইউজ ইনভেস্টিগেশনস টিম (এসএসএমআইটি) এবং অন্যান্য স্থানীয় সেবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে স্কোয়াডটি কমিউনিটি সুরক্ষার নতুন মডেল ব্যবহার করছে, যা সবচেয়ে প্রভাবশালী অপরাধীদের লক্ষ্য করে পরিচালিত হয় এবং পাশাপাশি সহায়তার পথও দেখায়।

নতুন এই পদ্ধতিতে শুধু স্থান নয়, ব্যক্তিকেই কেন্দ্র করে কাজ করা হয়। ডেটাভিত্তিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে ৫০ জন উচ্চ-প্রভাবযুক্ত অপরাধীর তালিকা তৈরি করে তাদের আচরণ পর্যবেক্ষণ এবং ধাপে ধাপে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে।

প্রথম তিন মাসের মূল সাফল্য:

£৫০,০০০ মাদক জব্দ (ব্ল্যাকওয়াল ওয়ে কার পার্ক): মাদক স্কোয়াড এবং ডগ-ইউনিট (স্নিপার কুকুর) পরিত্যক্ত একটি গাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ ক্লাস বি মাদক, ক্যানাবিস, সরঞ্জাম এবং জাল নাম্বার প্লেট উদ্ধার করে। কাউন্সিল সিসিটিভি ও পুলিশের সহায়তায় এই অভিযান স্থানীয় মাদক সরবরাহ চক্রে বড় ধাক্কা দেয়।

সবুজ জায়গায় মাদকসেবন বন্ধ: একটি বাস লে-বাই এর পাশে ঘন ঝোপের মধ্যে লুকানো সোফা, টেবিল, চেয়ারসহ আস্তানা খুঁজে পেয়ে স্কোয়াড ওই ব্যক্তিদের সহায়তা প্রদান, দুই সন্দেহভাজন বিক্রেতার তথ্য সংগ্রহ এবং ক্লিন অ্যান্ড গ্রিন টিমকে নিয়ে ভবিষ্যতে ব্যবহার রোধে জায়গাটি পুনর্গঠন করে।

প্রভাবশালী অপরাধীদের বিরুদ্ধে লক্ষ্যভিত্তিক প্রয়োগ: দলটি ২ হাজার ২৬০ ঘণ্টা টহল দিয়েছে এবং ৬৯ জন মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে এসএসএমআইটি-এ রেফার করেছে। ডেটা-নির্ভর প্রক্রিয়ায় ৫০ জন সবচেয়ে বেশি মাদক-সম্পর্কিত অসামাজিক আচরণে জড়িত ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা হয় এবং তাদের জন্য সহায়তা ও প্রয়োগের সমন্বিত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

কমিউনিটি-নেতৃত্বাধীন তথ্য ও দ্রুত সাড়া: পপলার ওয়ার্ড প্যানেলে উত্থাপিত অভিযোগের ভিত্তিতে দলটি এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে, যিনি একাধিক অসামাজিক আচরণের হটস্পটের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তাকে সতর্কবার্তা দেওয়া হয় এবং একটি ইনজাংশন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। দলটি দশটি কমিউনিটি সভায় অংশ নেয় এবং ১১টি এলাকায় বাড়ি-বাড়ি প্রচারণা চালায়।

শক্তিশালী কেসওয়ার্ক গঠন ও নেটওয়ার্ক ভাঙন: ১১ জন সন্দেহভাজন মাদক বিক্রেতাকে শনাক্ত করে পুলিশের কাছে রিপোর্ট করা হয়েছে। হোয়াইটচ্যাপেলে ক্লাস এ মাদক বেচাকেনার ওপর সিসিটিভিসহ দুটি পূর্ণাঙ্গ প্রমাণ প্যাকেজ জমা দেওয়া হয়েছে। দশটি গ্রেপ্তার এবং তিনটি ক্রিমিনাল বিহেভিয়ার অর্ডার (সিবিও) নিশ্চিত হয়েছে।

বিশেষায়িত এই ড্রাগ স্কোয়াড সম্পর্কে এক্সিকিউটিভ মেয়র লুৎফুর রহমান, “আমি গর্বিত যে আমরা দেশের প্রথম কাউন্সিল হিসেবে সংগঠিত মাদক অপরাধ মোকাবিলায় এবং মানুষকে আসক্তি থেকে মুক্তির পথ দেখাতে একটি নিবেদিত দল সৃষ্টি করেছি। বহু বছরের কৃচ্ছ্রসাধন ও পুলিশের বাজেট কমার পর, এই উদ্ভাবনী মডেলটি কম খরচে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার সমাধানে কার্যকর উপায়, এবং আমি আশা করি অন্য কাউন্সিলগুলোও আমাদের পথ অনুসরণ করবে।”

কাউন্সিলর আবু তালহা চৌধুরী, ক্যাবিনেট মেম্বার ফর পাবলিক প্রোটেকশন: “আজ আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে মাদক স্কোয়াড চালু করছি, পাইলট পর্যায়ে দ্রুত ফল পাওয়ার পর। কমিউনিটির কথা শোনা, তাদের উদ্বেগে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া, এবং নতুন কার্যকর পদ্ধতি প্রয়োগ করে আমরা আমাদের রাস্তাগুলোকে সবার জন্য নিরাপদ করতে চাই।”

টাওয়ার হ্যামলেটস্ কাউন্সিলের কমিউনিটি সেফটি ডিরেক্টর, সাবেক মেট চিফ সুপারিনটেন্ডেন্ট ডাল বাবু বলেন, “আমাদের ভিন্নভাবে চিন্তা করতে হবে। পুলিশ একা সবকিছু করতে পারে না। তারা অপরাধী, ডিলার ও সংগঠিত চক্রে মনোযোগ দিচ্ছে, যেটা প্রত্যাশিত। মাদক স্কোয়াড একটি নতুন ট্রমা-ইনফর্মড পদ্ধতি, যা অসামাজিক আচরণ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

পপলার রিক্রিয়েশন গ্রাউন্ডে আজ মঙ্গলবার নতুন মাদক স্কোয়াডটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। যেখানে উপস্থিত ছিলেন নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান, কমিউনিটি সেফটি বিষয়ক কেবিনেট মেম্বার কাউন্সিলর আবু তালহা চৌধুরী, ড্র্যাগ স্কোয়াডের সদস্যরা, ইন্টিগ্রেটেড এনফোর্সমেন্ট সার্ভিসের সদস্যরা এবং বিভিন্ন রেফারাল সেবার প্রতিনিধিবৃন্দ।

কমিউনিটি সেফটি অর্থাৎ সার্বিক জন-নিরাপত্তা খাতে ৮ মিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের অংশ হচ্ছে ড্রাগ বা মাদক স্কোয়াড। টাওয়ার হ্যামলেটস ২০২২ সাল থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় ৪ মিলিয়নের বেশি বিনিয়োগ করেছে, এবং ২০২৬ সালের মধ্যে আরও ৪ মিলিয়ন বিনিয়োগ করা হবে।


আরো পড়ুন!

Sidebar Banner
Sidebar Banner