মেহেদী হাসান, খুলনা প্রতিনিধিঃ খুলনার দাকোপ উপজেলার বাজুয়া ইউনিয়নের চুনকুড়ি গ্রামে সংখ্যালঘু পরিবারের ইজারাকৃত ডাকাতিয়ার খালে পূর্ব শত্রুতার জেরে রহস্যজনকভাবে বিষ প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে। এতে প্রায় সাড়ে ১৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন দাকোপ উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক প্রসেনজিৎ রায়ের ছোট ভাই ইজারাকৃত খালের মালিক দীপ্ত রায়। ঘটনাটি চালনা পৌর বিএনপির সদ্য বহিস্কৃত আহ্বায়ক মোজাফফর হোসেনের নেতৃত্ব উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও পরিকল্পিত বলে দাবি তার পরিবারের। এর আগেও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় নাম জড়িয়েছে তিনি। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে মোজাফফরকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে।
এ ঘটনায় দাকোপ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানাযায়, ভুক্তভোগী দীপ্ত রায় সরকারিভাবে ইজারা নিয়ে বাজুয়া ইউনিয়নের ডাকাতিয়া খালে মাছ চাষ করছিলেন। গত ১৩ মে রাতের কোনো এক সময় খালে বিষ প্রয়োগ করা হয়, যার ফলে রুই, গলদা, পাতারি, তেলাপিয়াসহ ভিবিন্ন প্রজাতির সকল মাছ মারা যায়।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ঘটনার আগে চালনা পৌর বিএনপির সদ্য বহিস্কৃত আহ্বায়ক মোজাফফর হোসেনের নেতৃত্বে একটি পক্ষ স্থানীয়ভাবে ঘেরটি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি করে এবং একাধিকবার ঘেরকর্মীদের হুমকি-ধমকি দেয়।
দাকোপ উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক প্রসেনজিৎ রায় বলেন, এই খালটি আমার বাড়ির সামনেই অবস্থিত। আমি ছাত্রদল করায় আমার নামে ইজারা না দিয়ে আমার ছোট ভাইয়ের নামে সরকারিভাবে ইজারা নিয়েছিলাম। কিন্তু শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসন শেষ হওয়ার পর থেকেই চালনা পৌর বিএনপির সদ্য বহিষ্কৃত আহ্বায়ক মোজাফফর হোসেনের নেতৃত্বে একটি পক্ষ এই খাল ঘিরে বিরোধ সৃষ্টি করে।
তিনি আরও বলেন, ঘেরটি ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে চলা বিরোধের জেরে গত সোমবার বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়, যেখানে পুলিশ সদস্যরাও আহত হন। এখন আবার আমাদের বৈধভাবে ইজারাকৃত খালে বিষ প্রয়োগ করে ১৬ লাখ টাকার ক্ষতি করা হয়েছে। এটা নিছক প্রতিহিংসা নয়, বরং একটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। আমরা মোজাফফর হোসেনকে বিএনপি থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবি জানাই।
দীপ্ত রায়ের মা নন্দীতা রায় বলেন, আমরা তারেক রহমানের কাছে হাত জোড় করে অনুরোধ করছি—এমন নেতৃত্ব আমাদের জন্য ভয়ঙ্কর। মোজাফফর হোসেনকে বিএনপি থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হোক।
ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্যরা বলেন, আমরা সংখ্যালঘু ও আইনি ইজারাধারী হয়েও বারবার হুমকি ও বাধার মুখে পড়েছি। এরই ধারাবাহিকতায় আমাদের এই খালে বিষ দিয়ে মাছ মেরে ফেলা হয়েছে। আমরা মনে করি, শুধু সংখ্যালঘু হয়েই এ ধরনের নিপীড়নের শিকার হচ্ছি।
খালের কর্মচারীরা বলেন, ঘটনার একদিন আগে হানিফ শেখ ও শাওন মোল্যা আমাদের খালের পাশে অবস্থিত ঘর থেকে বের করে দেন এবং বিভিন্নভাবে হুমকি দেন।
স্থানীয়দের দাবি, দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনতে হবে এবং সংখ্যালঘু ঘের মালিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
দাকোপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।