কমিউনিটি ০৯ মে ২০২৫

বর্ণবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যের আহ্বানের মধ্য দিয়ে পালিত হলো আলতাব আলী দিবস

post

৪ মে রবিবার ছিল শহীদ আলতাব আলী দিবস। ৪৭ বছর আগে পূর্ব লন্ডনে বর্ণবাদীদের হাতে নৃশংসভাবে প্রাণ হারিয়েছিলেন বাংলাদেশী যুবক আলতাব আলী। যার মৃত্যু বর্ণবাদের বিরুদ্ধে কমিউনিটির সর্বস্তরের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলো এবং বর্ণবাদ—ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সৃষ্টি করেছিলো এক ঐতিহাসিক গণজাগরণের।

টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের উদ্যোগে প্রতি বছর ৪ মে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালন করা হয় আলতাব আলী দিবস। এরই ধারাবাহিকতায় গত রবিবার পূর্ব লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেল রোডস্থ আলতাব আলী পার্কে পালিত দিবসটি। বর্ণবাদের বিরুদ্ধে বাঙালি কমিউনিটির প্রথম সংগঠিত প্রতিবাদের স্মৃতিচারণে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল আয়োজিত এই স্মরণ অনুষ্ঠানে অংশ নেয় বিভিন্ন সংগঠন এবং বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারীদের অনেকেই।

উল্লেখ্য, ১৯৭৮ সালের ৪ মে ব্রিকলেন থেকে কাজ শেষে হেঁটে ওয়াপিং যাওয়ার পথে শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী কতিপয় যুবকের হামলার শিকার হন আলতাব আলী। মূলত সে সময় ন্যাশনাল ফ্রন্ট পূর্ব লন্ডনে নির্বাচন করছিলো এবং এলাকাজুড়ে বর্ণবিদ্বেষের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল। হত্যাকান্ডের ১০ দিন পর লন্ডনের রাস্তায় ৭ হাজার মানুষ নিহত আলতাব আলীর কফিনের পেছনে পদযাত্রা করে।

আলতাব আলী পার্কের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সন্ধ্যা ৬টায় আলতাব আলীর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মধ্য দিয়ে তাকে স্মরণ করা হয়। শুরুতেই টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন কেবিনেট মেম্বার কাউন্সিলর আব্দুল ওয়াহিদ। বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রেস মিনিস্টার আকবর হুসেন। এছাড়াও যৌথভাবে শ্রদ্ধা জানান কেবিনেট মেম্বার কাউন্সিলর কামরুল হোসাইন মুন্না ও সাবেক স্পিকার কাউন্সিলর শাফি আহমেদ। অনুষ্ঠানে আরও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আলতাব আলী মেমোরিয়াল ট্রাস্ট, আলতাব আলী ফাউন্ডেশন, স্ট্যান্ড আপ টু রেসিজম এবং জিউইশ সোশ্যালিস্ট গ্রুপের প্রতিনিধিরা। আলতাব আলীর স্মরণে অনুষ্ঠানে এক মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়।

স্মরণসভা পরিচালনা করেন সংস্কৃতি বিষয়ক কেবিনেট মেম্বার কাউন্সিলর কামরুল হোসাইন মুন্না। এরপর আগত অতিথিরা আলতাব আলীকে স্মরণ করে বক্তব্য রাখেন।

কেবিনেট মেম্বার কাউন্সিলর আব্দুল ওয়াহিদ বলেন, “আলতাব আলী একজন বাংলাদেশি অভিবাসী ছিলেন এবং পোশাক শিল্পে কাজ করতেন। কাজ শেষ করে বাসায় ফেরার পথে বিনা কারণেই তাকে হত্যা করা হয়েছিলো। তাই এইদিনটি স্মরণ করে একটি শক্ত বার্তা দিতে চাই আমরা। যারা এখনও আমাদের মাঝে বিভাজন তৈরি করতে চায়, বিশেষ করে টাওয়ার হ্যামলেটসের মানুষের মধ্যে, তারা যেন এটা বুঝে নেয়, তারা কোন ধরনে বিভক্ত করতে পারবে না। অন্যায়, বৈষম্য ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমরা একসাথে লড়াই করবো।” 

কেবিনেট মেম্বার কাউন্সিলর কামরুল হোসাইন মুন্না, “আলতাব আলীর জন্যই আমরা ব্রিটিশ বাংলাদেশি হিসেবে এই পর্যায়ে পৌঁছাতে পেরেছি। টাওয়ার হ্যামলেটসে আজ আমাদের একজন নির্বাহী মেয়র আছেন, রয়েছেন অনেক কাউন্সিলর। বর্নবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কারনে আমরা আমাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়েছি। তাই আমাদের হৃদয়ে চিরকাল বীর হিসেবেই বেঁচে থাকবেন আলতাব আলী।”

বাংলাদেশ হাই কমিশনের প্রেস মিনিস্টার আকবর হোসেন বলেন, “আলতাব আলী ফ্যাসিবাদ ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন এবং মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে লড়েছেন। তাই আত্মত্যাগের অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে আলতাব আলী অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে যুগ যুগ ধরে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

এদিকে আলতাব আলী দিবসের কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঐদিন সন্ধ্যায় ব্র্যাডি আর্টস সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও আলোচনা সভা। আলোচনা সভায় “টেল মি মোরঃ প্রজন্মের প্রতিবাদ” শীর্ষক ১৯৭৮ সালের আন্দোলনের প্রত্যক্ষদর্শী ও শিল্পকর্মীরাও অংশ নেন। এই আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আনসার আহমেদ উল্লাহ, রাজন উদ্দিন জালাল এবং তাসনিম সিদ্দিকা আমিন। 

উল্লেখ্য, ১৯৯৮ সালে সেন্ট মেরী পার্কের নামকরণ করা হয় ‘আলতাব আলী পার্ক’। আলতাব আলীর গ্রামের বাড়ি বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলায়। প্রতি বছর ৪ মে শহীদ আলতাব আলীর আত্মত্যাগের স্মরণে দিবসটি পালিত হয়ে থাকে, যা নতুন প্রজন্মের কাছে বর্ণবাদবিরোধী সচেতনতার প্রতীক হিসেবে অনুপ্রেরণা জোগায়।


 

আরো পড়ুন!

Sidebar Banner
Sidebar Banner