নিউজ ডেস্ক
টিভি নাইনটিন অনলাইন
বিনোদনঃ টিভিমাধ্যমের অভিনয়শিল্পীদের সংগঠন অভিনয়শিল্পী সংঘ। সাম্প্রতিক দেশে ঘটে যাওয়া ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সূত্র ধরে দারুণভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে আছে সংগঠনটির বেশ কয়েকজন শিল্পী ও নেতৃস্থানীয়রা।এরপর সংগঠনটির সংস্কার চেয়ে নেতাদের সঙ্গে বসতে চেয়েছিলেন সংস্কারকামী শিল্পীরা। কিন্তু নেতারা সেটা করেননি। এরপর ১০ সেপ্টেম্বর অভিনয়শিল্পী সংঘের কমিটি বিলুপ্ত করার কথা বলেন শিল্পীরা। সেটাও হয়নি।তবে থেমে নেই সংস্কারকামী শিল্পীদের প্রতিবাদের ভাষা। ‘দৃশ্যমাধ্যমের শিল্পী সমাজ’র ব্যানারে মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে উপস্থিত হয়েছিলেন শিল্পীদের একাংশ। ‘কথা বলতে চাই, কথা শুনতে চাই’ শিরোনামে ওই জমায়েতে অভিনয়শিল্পীরা সভায় শিল্পীরা সংস্কার নিয়ে নানা মতামত তুলে ধরেন।এ সময় উপস্থিত ছিলেন আজমেরী হক বাঁধন, শ্যামল মাওলা, খায়রুল বাসার, মনোজ প্রামাণিক, সাবেরী আলম, সোহেল মন্ডল, নাজিয়া হক অর্ষা, মোস্তাাফিজুর নূর ইমরান, ইমতিয়াজ বর্ষণ, সমাপ্তি মাসুক, এলিনা শাম্মি, নির্মাতা ইমেল হকসহ অনেকেই।এসময় খায়রুল বাসার বলেন, বৈষাম্যবিরোধী আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর যে হামলা হয়েছে তা নজিরবিহীন। জুলাই-আগস্ট মাসে ৬ শতাধিক প্রাণ ঝরেছে। এই আন্দোলনে স্বৈরাচারী সরকারের পক্ষ নিয়ে আমাদের শিল্পীদের সংগঠন ‘অভিনয়শিল্পী সংঘ’র কিছু নেতা ও সদস্য আলো আসবেই গ্রুপ খুলেছিলেন। এখন আমরা রাস্তা দিয়ে চলতে গেল বন্ধুরা আলো আসবেই বলে আমাদের অপমান করে। সরকার পতনের পর পুরো দেশে যখন সংস্কার চলছে তখন আমরা আমাদের শিল্পীদের সংগঠন ‘অভিনয়শিল্পী সংঘ’র সংস্কার চেয়েছি। আমরা তাদের সঙ্গে বসতে চেয়েছি। কিন্তু শিল্পী-অশিল্পী দোহাই দিয়ে তারা আমাদের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন তা শিল্পীসুলভ বলে আমরা মনে করি না। তাই তাদের সসম্মানে বিদায় নেওয়া উচিত।শ্যামল মাওলা বলেন, কয়েকদিন হলো শিল্পীদের একটি রাজনীতি পক্ষ প্রকাশ্যে এসেছে। কিন্তু এটাতো আমরা চাই না। আমরা একই পরিবার এক ছাতার নিচে সবাই থাকতে চাই। আমাদের কোন পক্ষ থাকতে পারে না। কারণ শিল্পীদের কোনো পক্ষ নেই। শিল্পীদের সব বিষয় নিয়ে আমরা শিল্পী সংঘের নেতাদের সঙ্গে আলাপে বসতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে বসছেন না। আমরা কি তাহলে শিল্পী না? এটা আসলে কীসের কারণ।নাজিয়া হক অর্ষা বলেন, ৫ আগস্টের পর নতুনভাবে আমাদের দেশের পথচলা শুরু হয়েছে। আমাদের সিনিয়র শিল্পীদের গত দুই মাসে যেসব কুকর্ম করেছেন তার কটুকথা আমাদেরও হজম করতে হয়েছে। এখন দেশের সবখানে সংস্কার চলছে। আমরা মনে করি, আমাদের শিল্পীদের জন্য সেটা আগে জরুরি। শিল্পী হিসেবে আমি তো কোনো দলভিত্তিক কাজে ছিলাম না। আমি তো ন্যায়কে ন্যায় বলবো অন্যায়কে বলবো অন্যায়। যদি সেটা না করতে পারি তাহলে আমি কিসের শিল্পী। কিন্তু আমাদের সংগঠনের কিছু শিল্পী-নেতাদের কারণে আজ আমরা জনগণের প্রশ্নে মুখে পড়েছি। সেজন্য আমরা শিল্পী সংঘের কিছু বিষয় নিয়ে নেতাদের সঙ্গে বসতে চেয়েছি। কিন্তু তারা আমাদের সঙ্গে বসতে নারাজ। শেষে আমি বলতে চাই, আপনার যদি আমাদের সঙ্গে না বসেন তবে এতদিন আপনারা যা করেছেন সেগুলোর উত্তর আপনাদের দিতেই হবে।আয়োজনে আজমেরী হক বাঁধন বলেন, স্বৈরাচারী সরকারের পতন হলেও তাদের কিছু দোসররা কিন্তু এই দেশেই রয়ে গেছেন। তারা বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে আমদের ওপর চড়াও হচ্ছেন। শিল্পীসমাজও এর বাইরে না। এখানেও অনেক দোসর আছেন নানানভাবে সুযোগ সুবিধাগুলো নিয়েছেন তাদের জায়গা শক্ত করেছেন। আমাদের জন্য কিছু করেননি। কিছু তরুণ এক হয়েছে যারা এই মিডিয়াকে সুন্দর করে সাজাতে চায়। যারা এখন জায়গা ধরে রেখেছেন তারা তরুণদের জন্য জায়গাটা ছেড়ে দেন। এখানে অনেক সংস্কার প্রয়োজন।এই আয়োজনে সংগঠনের কাছে বেশ কিছু দাবিও উপস্থাপন করেন শিল্পীরা। দাবিগুলো- অভিনয়কে রাষ্ট্রীয়ভাবে পেশা হিসেবে স্বীকৃত এবং অন্তর্ভুক্ত করার জন্য যা যা পদক্ষেপ গ্রহণ, কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, নতুন করে রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম চালু, তিন ধরনের কোর্সের ভিত্তিতে ইন্ডাস্ট্রিতে অভিনয়ের যাত্রা শুরু করা, প্রফেশনাল কার্ডের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা। রিফর্মেশন অ্যাক্ট চালু, অভিনয়শিল্পীদের কাজের সুষ্ঠু, নিরাপদ, স্বাস্থ্যসম্মত ও সম্মানজনক পরিবেশ নিশ্চিত করা, শিফট সিস্টেম, ওভারটাইম চার্জ, ডেট ক্যান্সেলশন চার্জ চালু করেত হেব। ন্যূনতম রেম্যুনারেশন নির্ধারণসহ ইত্যাদি চাওয়া দাবি করেন তারা।এর আগে ৭ সেপ্টেম্বর দুপুরে রাজধানীর নিকেতনের ‘গ্রাউন্ড জিরো’তে একটি জরুরি বৈঠকে অভিনয়শিল্পী সংঘের সংস্কারের দাবি তোলেন এই শিল্পীরা। সেখানে পারস্পরিক আলোচনা ও প্রস্তাবের ভিত্তিতে পাঁচটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেখানে অভিনয়শিল্পী সংঘের বর্তমান কমিটিকে দুঃখ প্রকাশ ও জুলাই বিপ্লবের বিপক্ষে অবস্থানকারীদের জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে বলা হয়েছে। অভিনয়শিল্পী সংঘের কোনো সদুত্তর না পাওয়ায় এই 'কথা বলতে চাই, কথা শুনতে চাই' শিরোনামের আয়োজন করা হয়।