বাংলাদেশ ০৭ জুলাই ২০২৪

কোটাবিরোধী আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই: প্রধানমন্ত্রী

post

নিউজ ডেস্ক,টিভি নাইনটিন অনলাইন

ঢাকাঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোটা বাতিল আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা নেই। আন্দোলনের নামে যা করা হচ্ছে, তার যৌক্তিকতা আছে বলে মনে করি না। রোববার (৭ জুলাই) বেলা পৌনে ১১টার দিকে গণভবনে যুব মহিলা লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।রোববার (৭ জুলাই) যুব মহিলা লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে গণভবনে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে দেওয়া বক্তব্যে কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে এ কথা বলেন তিনি।প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা কথা না বলে পারছি না। আমি দেখছি যে কোটা আন্দোলন। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যে কোটা সেটা বাতিল করতে হবে, নারীদের কোটা বাতিল করতে হবে, অমুক-সমুক। সেটা কিন্তু একবার বাতিল করা হয়েছিল। কিন্তু ফলাফলটা কী? পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষার হিসাব যদি দেখা যায়, দেখা যাবে যে আগে যেখানে কোটা থাকত মেয়েরা যে পরিমাণ সুযোগ পেত সেই পরিমাণ সুযোগ কিন্তু এই কয় বছরে আর পায়নি। এটা হলো বাস্তবতা।তিনি বলেন, এমনকি অনেক অনেক জেলা প্রত্যন্ত অঞ্চল, সেই অঞ্চলের মানুষগুলো কিন্তু বঞ্চিত থেকে গেছে। তারাও চাকুরি পাচ্ছে না। হাইকোর্ট ইতোমধ্যে, এইরকম বঞ্চিত হওয়ার কারণে যে মামলা করে হাইকোর্ট একটা রায় দেয়। হাইকোর্টের রায় আমরা সবসময় মেনে নিই। কিন্তু আমরা দেখলাম যে এখন কোটাবিরোধী আন্দোলন আবার গড়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। ছেলে মেয়েরা লেখাপড়া বাদ দিয়ে এখন কোটাবিরোধী আন্দোলন করে। সেখানে মেয়েরাও করে। এখানে আমার একটা প্রশ্ন আছে। যারা এর আগে কোটাবিরোধী আন্দোলন করেছিল, তারা যে পাবলিক সার্ভিস কমিশনে কতজন পরীক্ষা দিয়েছিল আর কতজন পাস করেছিল?- সেই হিসাবটা একটু বের করা দরকার। তারা দেখাক যে পরীক্ষা দিয়ে তারা বেশি পাস করেছিল। মেয়েরা বেশি পাস করে বেশি চাকরি পেয়েছে কিনা। সেটা আগে তারা প্রমাণ করুক। আর হাইকোর্টের রায় এটার বিরুদ্ধে এভাবে আন্দোলন করা এটা তো সাবজুডিস। কারণ আমরা সরকারে থেকে এভাবে কিন্তু কোনো কথা বলতে পারি না। কারণ হাইকোর্ট রায় দিলে হাইকোর্ট থেকেই আবার আসতে হবে। কিন্তু আজকে আন্দোলনের নামে যেটা আবার করা হচ্ছে, পড়াশোনার সময় নষ্ট করা এটারও কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে আমি মনে করি না।  সবার জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর কথা উলেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা আমাদের নির্বাচনি ইশতেহারে ছিল (২০০৮ সালের নির্বাচনে)। শুধু সরকারি চাকরিজীবীরা পেনশন পায়, বাকিরা বঞ্চিত থাকে। কেউ যাতে বঞ্চিত না থাকে, সে জন্য বিভিন্ন স্তরভেদে সর্বজনীন পেনশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।যুব মহিলা লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, যুব মহিলা লীগের প্রত্যেক নেতাকর্মী সর্বজনীন পেনশন স্কিমে যুক্ত হতে পারো নিজেদের ভবিষ্যতের জন্য। যখন মানুষ বয়স্ক হয়ে যাবে, কর্মক্ষম থাকবে না, তখন একটা নিশ্চিত অর্থপ্রাপ্তির সুযোগ আছে। জীবন-জীবিকা চালানোর সুযোগ আছে। সেটা একেবারে নিম্নস্তরের তাদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছি। তারা যদি ৫০০ টাকা রাখে, তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে আরও ৫০০ টাকা দিয়ে তারাও যেন ভালোভাবে পেনশন পায় এবং আজীবন পাবে।দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমি মনে করি আমাদের রাজনীতির সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমে ঢোকা দরকার। তাহলে অন্তত জীবনের একটা নিশ্চিয়তা পাওয়া যাবে। বৃদ্ধ বয়সে কারও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হবে না। ছেলের ঘাড়ের বোঝা হবে না, মেয়ের ঘাড়ের বোঝা হবে না। নিজেরটা নিজে করে খেতে পারবে।মেয়েরা সমাজের অর্ধেক উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা পেছনে পড়ে থাকলে সেই সমাজ কখনও উঠে দাঁড়াতে পারে না, সেই দেশের উন্নতি হতে পারে না। এই কথাটা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই বলতেন।বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, মেয়েদের শিক্ষা তিনি অবৈতনিক করে দিয়েছিলেন, সংসদে মেয়েদের জন্য আলাদা সিটের কোটা করে দিয়েছেন। চাকরি ক্ষেত্রে নির্যাতিত (মুক্তিযুদ্ধে) মেয়েদের ও নারীদের জন্য আলাদা ১০ শতাংশ কোটার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন, এই জন্য নারীরা যাতে যথাযথভাবে নিজেদের স্থানটা করে নিতে পারে। নারীরা যদি অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে এবং চাকরি ক্ষেত্রে তাদের যে মেধা বিকশিত হওয়ার সুযোগ পেলে দেশ গড়ে উঠবে।তিনি বলেন, যুব মহিলা লীগ সবসময় আন্দোলন সংগ্রামে ছিলো। বিএনপি-জামায়াত যুব মহিলা লীগের নেতা-কর্মীদের অকথ্য নির্যাতন করেছে।বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় যেভাবে নিযার্তন করেছে তা নিন্দারও যোগ্য নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, দলটি ভোট চুরি করে মাত্র দেড় মাস টিকেছে। গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ২০০১ সালে ক্ষমতায় গিয়েছিল বিএনপি। ভোট চুরির অবপাদে ২ বার ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে তারা। শেখ হাসিনা আরও বলেন, বিএনপির নির্যাতনের চিত্র মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে। তারা সমাজের অভিশপ্ত বোঝা। তাদের অত্যাচার-নির্যাতন যেন আবার ফিরে না আসে, সেদিকে সজাগ থাকতে হবে।বিএনপির উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, তার সরকার জনগণের ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছে। বিএনপি ভোটচুরি করে ক্ষমতা এসেছিল। দেশের মানুষ ভোট চোরদের ক্ষমতায় থাকতে দেয় না। ভোট চুরির অপরাধে খালেদা জিয়াকে দুইবার পদত্যাগ করতে হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।এদিন অনুষ্ঠানে যুব মহিলা লীগের ওয়েবসাইট উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় যুব মহিলা লীগের সভাপতি আলেয়া সরোয়ার ডেইজী, সাধারণ সম্পাদক শারমিন সুলতানা লিলিসহ সংগঠনের কেন্দ্রীয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন!

Sidebar Banner
Sidebar Banner