নিউজ ডেস্ক,টিভি নাইনটিন অনলাইন
ঢাকাঃ আগামীকাল পর্দা উঠছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার ২৮তম আসরের। পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে (বিবিসিএফইসি) তৃতীয় বারের মতো আয়োজিত এ মেলা রোববার ২১ জানুয়ারি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মেলাকে কেন্দ্র করে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
শনিবার (২০ জানুয়ারি) পূর্বাচল বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টার মেলাপ্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, আগামীকাল সকাল সাড়ে ১০ টায় প্রধানমন্ত্রী মেলার উদ্বোধন করবেন। তাই আজকের দুপুরের মধ্যেই স্টলের কাজ শেষ করতে বলা হয়েছে। ফলে বাণিজ্য মেলা উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে অনেকটা তড়িঘরি করে চলছে স্টল নির্মাণের প্রস্তুতি। অনেক স্টল পুরোপুরি গোছানো হলেও কিছু স্টলে চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি।এবারের বাণিজ্য মেলার লে-আউট প্ল্যান (সংশোধিত) অনুযায়ী বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্যাভিলিয়ন, রেস্টুরেন্ট ও স্টলের মোট সংখ্যা ৩৫১টি এবং দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ইতোমধ্যে প্রায় সবগুলো প্যাভিলিয়ন, রেস্টুরেন্ট ও স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অত্যাধুনিক সুযোগ- সুবিধা সংবলিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত এক্সিবিশন সেন্টারের ১ লাখ ৬৬ হাজার ৩০০ বর্গফুট আয়তনের ০২টি হলে ১৭৪টি স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সেন্টারের মেইন গেইটের পূর্বপাশে বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্যাভিলিয়নসহ প্রিমিয়ার ও সংরক্ষিত ক্যাটাগরির মোট ৬২টি স্টল রয়েছে। হল-এ ও হল-বি -এর পেছনে ফরেন ক্যাটাগরির প্যাভিলিয়ন এবং প্রিমিয়ার ক্যাটাগরির প্যাভিলিয়নসহ প্রিমিয়ার ও সংরক্ষিত ক্যাটাগরির মোট ৩৫ স্টল রয়েছে। সেন্টারের মূল কম্পাউন্ডের বাইরে সেন্টারের ৬ একর জমির একাংশে ফুড জোন (৩২টি রেস্টুরেন্ট ও মিনি রেস্টুরেন্ট) এবং কিছু সাধারণ ও সংরক্ষিত ক্যাটাগরির স্টল রয়েছে (মোট সংখ্যা-৬২টি)।বরাবরের ন্যায় এবারও মেলায় বঙ্গবন্ধু প্যাভিলিয়ন নির্মাণ করা হচ্ছে। এই প্যাভিলিয়নের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, স্বাধিকার আন্দোলন ও স্বাধীনতা সংগ্রামে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অবদান, বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন ও আদর্শের বিভিন্ন দিক ছাড়াও যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে নেয়ার প্রকৃত ইতিহাস সকলের নিকট বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের নিকট তুলে ধরারও প্রয়াস নেয়া হয়েছে। জানা গেছে, এবারের বাণিজ্য মেলায় দেশীয় পণ্যের পাশাপাশি ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, ইরান, হংকং ইন্দোনেশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশ অংশ নেবে। মেলায় এসব দেশের বস্ত্র, মেশিনারিজ, কার্পেট, কসমেটিক্স অ্যান্ড বিউটি এইডস, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক্সস, ফার্নিচার, পাট ও পাটজাত পণ্য, গৃহ সামগ্রী, চামড়া/আর্টিফিসিয়াল চামড়া ও জুতাসহ চামড়াজাত পণ্য, স্পোর্টস গুডস, স্যানিটারিওয়্যার, খেলনা, স্টেশনারি, ক্রোকারিজ, প্লাস্টিক, মেলামাইন পলিমার, হারবাল ও টয়লেট্রিজ, ইমিটেশন জুয়েলারি, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, ফাস্টফুড, হস্তশিল্পজাত পণ্য, হোম ডেকর ইত্যাদি পণ্য মেলায় প্রদর্শীত হতে যাচ্ছে। পণ্য প্রদর্শনের পাশাপাশি দেশীয় পণ্য রপ্তানির বড় বাজার খোঁজার লক্ষ্য রয়েছে।
মেলার সার্বিক নিরাপত্তা এবং মেলায় আগত দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণার্থে মেলা প্রাঙ্গণে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও র্যাব নিয়োজিত থাকবে। পুলিশ, র্যাব মেলা প্রাঙ্গণ ও প্রাঙ্গণের বাইরে নিয়মিত টহল দিবে। এছাড়া সার্ভিস গেইট ও ভিআইপি গেইট এর শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য প্রাইভেট সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগ করা হয়েছে। নিরাপত্তা অগ্রাধিকার বিবেচনায় মেলা প্রাঙ্গণের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান, প্রবেশ গেইট, পার্কিং এরিয়া এবং সংশ্লিষ্ট সকল এলাকায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক সিসিটিডি স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া, মেলার প্রবেশ গেইটে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। একইভাবে যে কোন ধরনের অগ্নি দুর্ঘটনা প্রতিরোধে মেলায় সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবে ফায়ার ব্রিগেড।
এবারের মেলায় পর্যাপ্ত সংখ্যক পরিচ্ছন্ন কর্মী সার্বক্ষণিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কাজে নিয়োজিত থাকবে। এক্সিবিশন হলে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুরুষ ও মহিলা আলাদা টয়লেট রয়েছে যা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য আলাদাভাবে পুরুষ ও মহিলা পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। মেলা প্রাঙ্গণের বাইরেও পর্যাপ্ত সংখ্যক টয়লেট তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া, মেলা প্রাঙ্গণ পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য শতাধিক পরিচ্ছন্নতা কর্মী সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবে।
খাদ্য দ্রব্যের মান নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এর পৃথক বুথ রয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্তৃক নিয়োজিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এর নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ গঠিত টিম মেলা চলাকালীন প্রত্যহ ভেজাল বিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হবে।মেলায় ১২টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে প্রিমিয়ার রেস্টুরেন্ট/প্রিমিয়ার মিনি রেস্টুরেন্ট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া,মেলায় এক্সিবিশন সেন্টারের ভিতরে ৫০০ আসন বিশিষ্ট একটি ক্যাফেটেরিয়া রয়েছে যাতে মেলায় আগত দর্শনার্থীগণ সুলভ মূল্যে চমৎকার পরিবেশে মানসম্মত খাবার খেতে পারবেন।এদিকে মেলার রয়েছে পর্যাপ্ত কার পার্কিং এর সুবিধা। ভিআইপি পার্কিং এর জন্য রয়েছে বিল্ট-ইন দ্বিতল কার পার্কিং বিল্ডিং যেখানে পাঁচ শতাধিক গাড়ির পাকিং সুবিধা রয়েছে। এছাড়াও, এক্সিবিশন হলের বাইরে ৬ একর জমিতে বিস্তর পার্কিং এর ব্যবস্থা করা হয়েছে।মেলার সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিং এর জন্য মেলায় স্থাপন করা হয়েছে একটি অস্থায়ী সচিবালয়। দর্শনার্থীদের সকল প্রকার তথ্য প্রদানের জন্য রয়েছে একটি তথ্য কেন্দ্র। ব্যাংকিং সার্ভিসের জন্য মেলায় থাকছে ডাচ বাংলা ব্যাংক লি. ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ-এর একাধিক ব্যাংক বুথ। এছাড়া, মেলায় থাকছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংক-এর সার্ভিস বুথ। মেলায় প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের বিষয়টিও নিশ্চিত করা হয়েছে। মা ও শিশুদের কথা বিবেচনা করে মেলায় স্থাপন করা হয়েছে ০২টি মা ও শিশু কেন্দ্র। অন্যান্য প্রয়োজনীয় সেবার মধ্যে রক্ত সংগ্রহ কেন্দ্র, মসজিদ, নিউট্রিশন এন্ড অটিজম সেবা, দর্শনার্থীদের বিশ্রামের জন্য আরামদায়ক ও শোভন চেয়ার বেঞ্চ ইত্যাদির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।এছাড়াও, সাধারণ দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে কুড়িল বিশ্বরোড হতে মেলা প্রাঙ্গণ পর্যন্ত বিআরটিসি ও কয়েকটি যাত্রীবাহী বাসের ডেডিকেটেড সার্ভিসের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। মেলা চলাকালীন এ বাস সার্ভিস চালু থাকবে। মেলার প্রবেশ টিকেটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০.০০ (পঞ্চাশ) টাকা (প্রাপ্ত বয়স্ক) এবং শিশুদের (১২ বছরের নীচে) ক্ষেত্রে ২৫.০০ (পঁচিশ) টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিবন্ধীগণ তাঁদের কার্ড প্রদর্শণপূর্বক বিনামূল্যে মেলায় প্রবেশ করতে পারবেন। মেলার টিকেট অন-লাইনেও বিক্রয় করা হবে। এছাড়াও বিকাশের মাধ্যমে ডিসকাউন্টে টিকেট বিক্রয় করা হবে।