নুরুল হক রুনু , হাওরাঞ্চল প্রতিনিধিঃ হাওরাঞ্চলের হতদরিদ্রদের জীবন মান উন্নয়নের লক্ষে হাওরাঞ্চল সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প নিয়েছে সরকার। সেই প্রকল্পের আওতায় নেত্রকোনার মদন উপজেলার সুবিধাভোগীর মাঝে হাঁস পালনের জন্য ঘর বিতরণ করা হয়েছে। হাঁস পালনের ঘরের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ নয়ছয় করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ৬ হাজার টাকার বরাদ্দের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৫০০ টাকায়।
এ প্রকল্পের শুরু থেকেই অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। প্রকৃত হতদরিদ্র সুবিধাভোগীদের বাদ দিয়ে ধনী লোকদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের গাফিলতি ও অনিয়মের কারণে সরকারের মহৎ উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ওয়েভসাইট থেকে জানা গেছে, হাওরাঞ্চলের হতদরিদ্রদের স্বাবলম্বী করার লক্ষে ২০১৯ সালে হাওরাঞ্চল সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্প শুরু করা হয়। ২০২৩ সালে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সেই প্রকল্পের আওতায় নেত্রকোনার মদন উপজেলায় হাঁস পালনের জন্য ৩৭৯ জন সুবধাভোগী নির্বাচন করা হয়। প্রতিজন সুবধাভোগীকে একটি ঘর ও ১৫টি হাঁস দেওয়ার কথা রয়েছে। একটি হাঁসের ঘর নির্মাণের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৬ হাজার টাকা। সেই হিসাব মতে ৩৭৯ জন সুবিধাভোগীর ঘর নির্মাণের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ২২ লাখ ৭৪ হাজার টাকা। কিন্তু ঘর নির্মাণে খরচ হয়েছে ১৩ লাখ ২৬ হাজার ৫০০ টাকা। ৯ লাখ ৪৭ হাজার টাকা সংশ্লিষ্টরা লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
নিয়ম রয়েছে একজন ঠিকাদার ওই ঘরগুলো তৈরী করে বিতরণ করবেন। কিন্তু উপজেলা প্রাণিসম্পদ বলছেন ভিন্ন কথা। ঘর নির্মাণের কোন ঠিকাদারে তথ্য তাদেরঅফিসে নেই। এমনকি জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে ঠিকাদারের কোন তথ্য নেই। তবে স্থানীয় তাজুল ইসলাম নামের একজন কাঠ মিস্ত্রী মদন বুড়াপীর মাজার প্রাঙ্গনে হাঁস পালনের ৩৭৯টি ঘর সুবিধাভোগীর মাঝে বিতরণ করেন। প্রতি ঘরের মালপত্র ও মজুরী বাবদ তিনি ৩ হাজার ৫০০ টাকা নিয়েছেন।
সুবিধাভোগীরা জানান, আগে ঘর তৈরী করে পরে হাঁস দেওয়ার কথা। কিন্তু গত কয়েকমাস মাস আগে অফিস থেকে হাঁস দেওয়া হয়। বড় হাঁসের দেয়ার কথা থাকলেও ছোট হাঁস দেওয়া হয়। এ নিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানালে মাত্র ৭৯ জনকে হাঁস দেওয়া হয়। বাকি ৩০০ সুবিধা ভোগীদের হাঁস ফেরত নিয়ে যায়। যা আজ পর্যন্তও দেওয়া হয়নি। শুধু নিম্নমানের ঘর দেওয়া হয়েছে।
হাঁসের ঘর নির্মাণকারী কাঠ মিস্ত্রী তাজুল ইসলাম জানান,‘ নেত্রকোনার সদর উপজেলার লক্ষীগঞ্জের বাবুল মিয়া নামের এক ব্যাক্তি আমাকে ঘর নির্মাণ করতে বলে। প্রতি ঘর সম্পন্ন করার জন্য আমাকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা করে দিয়েছে। আমি ৩৭৯টি ঘর তৈরী করে বিতরণ করেছি। এর বেশী কিছু বলতে পারবো না।’
বাবুল মিয়া জানান, ‘ঢাকার এক ব্যাক্তির আমাকে এই কাজ দিয়েছে। কিন্তু আমি তাদের পরিচয় জানিনা। এর বেশী কিছু বলতে তিনি রাজি নন।’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ তায়রান ইকবাল জানান,‘ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে হাঁস পালণের ঘরগুলো সুবিধাভোগীদের মাঝে বিতরণ করেছি। কিন্তু এই প্রকল্পের ঠিকাদারের কোন তথ্য আমার অফিসে নাই। এই প্রকল্পের ৭৯ জন সুবিধাভোগী হাঁস পেয়েছে। আকারে ছোট থাকায় ৩০০ জন সুবিধাভোগীর হাঁস ফেরত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ৩৭৯ জনেই ঘর পেয়েছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ ওয়াহেদুল আলম বলেন, এই প্রকল্পটির তথ্য উপজেলা অফিস অথবা পিডি অফিসে থাকবে। কিন্তু ঘর নির্মাণের বরাদ্দ নয় ছয় হয়েছে বলে জানতে চাইলে তিনি জানান, ঘর নির্মাণে অনিয়ম হয়ে থাকলে বিষয়টি জেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।