নিউজ ডেস্ক
টিভি নাইনটিন অনলাইন
ঢাকাঃ বাংলাদেশের রাজনীতির অন্যতম নক্ষত্রের পতন হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন ‘মা, মাটি ও মানুষের নেত্রী’ হিসেবে পরিচিত বেগম খালেদা জিয়া। দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসনের এই প্রয়াণের মধ্য দিয়ে দেশের রাজনীতিতে বিশিষ্ট একজন নেত্রীর উপস্থিতির অবসান ঘটলো।খালেদা জিয়ার মৃত্যু সংবাদটি নিশ্চিত করেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।এ সময় হাসপাতালে বেগম খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান, ছেলের বউ ডা. জোবায়দা রহমান, নাতনী জাইমা রহমান, ছোট ছেলের বউ শার্মিলী রহমান সিঁথি, ছোট ভাই শামীম এসকান্দার, ছোট ভাইয়ের স্ত্রী, বড় বোন সেলিনা ইসলামসহ সব আত্মীয়স্বজন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন।ভোর ৭টার দিকে বিএনপি চেয়ারপার্সনের প্রেস উইং কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।মরহুমা খালেদা জিয়ার নামাজে জানাজার সময়সূচি পরবর্তীতে জানিয়ে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।এর আগে সোমবার দিবাগত রাত ২টার দিকে মাকে দেখে হাসপাতাল থেকে বের হন তারেক রহমান। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বের হন রাত ১২টা ২০ মিনিটের দিকে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালে সরকারের নির্বাহী আদেশে প্রাপ্ত শর্তসাপেক্ষ মুক্তিতে ছিলেন বেগম জিয়া। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত অসুস্থতার মধ্য দিয়েই সময় কাটে তার। মাঝে-মাঝে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি বিশিষ্টজনদের পাশাপাশি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ও বিরোধী কয়েকটি দলের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন তিনি। এ বছরের ২৩ নভেম্বর রাতে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। দফায়-দফায় তার শারীরিক পরিস্থিতির অবনতি ও স্বল্প-উন্নতির মধ্য দিয়ে হাসপাতালের সময় পার করছিলেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।এর আগে গত ১৫ অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপারসন এই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। একদিন থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। সেদিন সাংবাদিকদের সামনে তার মেডিক্যাল বোর্ড সদস্য অধ্যাপক ডা. এফ এম সিদ্দিকী বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বুকে ইনফেকশন, হার্ট এবং ফুসফুস আক্রান্ত হয়েছেন।গতবছরের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করেন। ওই সময় তিনি এভারকেয়ারেই চিকিৎসাধীন ছিলেন। এরপর তিনি এ বছরের ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডন যান। চার মাস পর ৬ মে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি’র দেওয়া এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তিনি দেশে ফেরেন। এই এয়ার অ্যাম্বুলেন্সেই লন্ডন যান খালেদা জিয়া। যাওয়ার আগে গুলশানের বাসায় তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামান।সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার কথা জেনে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি তখন এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দিয়েছিলেন।
নয়াবস্তির ‘শান্তি’ বাংলাদেশের খালেদা জিয়া
‘নন্দিত নেত্রী: খালেদা জিয়া’ শীর্ষক গ্রন্থে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার উপ-প্রেস সচিব সৈয়দ আবদাল আহমেদ উল্লেখ করেন, ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট অবিভক্ত ভারত উপমহাদেশের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুঁড়ির নয়াবস্তি এলাকায় তার জন্ম। দিনটি সম্পর্কে আবদাল আহমেদ লিখেন, ‘তখন শরতের স্নিগ্ধ ভোর। নতুন শিশুর আগমনে পরিবারের সবাই আনন্দিত।বিএনপির দলীয়সূত্র ও তার জীবনীগ্রন্থগুলো থেকে জানা যায়, খালেদা জিয়ার পারিবারিক নাম খালেদা খানম। তার ডাকনাম পুতুল। পারিবারিকভাবে তার আরও ডাকনাম ছিল— টিপসি, শান্তি। বাবা ইস্কান্দর মজুমদারের বন্ধু চিকিৎসক অবনীগুহ নিয়োগী সদ্য প্রসূত কন্যাকে ‘শান্তি’ নামে সম্মোধন করেন।পৃথিবী তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধশেষে মাত্র কয়েকদিনে পড়েছে; দিনকয়েক আগে জাপানে ঘটে গেছে আমেরিকার আনবিক বোমার হত্যাযজ্ঞ। ভারতসহ নানা দিকেই তখন শান্তি মিছিল; মানুষের এই আকাঙ্ক্ষার মধ্যেই নতুন জন্ম নেওয়া শিশুকন্যার নাম হয়ে উঠলো ‘শান্তি’। পরবর্তী সময়ে মেজোবোন সেলিনা ইসলামের রাখা ‘পুতুল’ নামটিই জড়িয়ে যায় খালেদা জিয়ার ডাকনাম হিসেবে।প্রয়াত সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ অবশ্য খালেদা জিয়ার জন্ম দিনাজপুরে হয়েছে বলে তার জীবনীগ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।খালেদা জিয়ার আদিবাড়ি ফেনীর ফুলগাজী উপজেলায়। তার বাবার নাম ইস্কান্দর মজুমদার এবং মা বেগম তৈয়বা মজুমদার। তিন বোন (খুরশিদ জাহান হক চকলেট, সেলিনা ইসলাম বিউটি ও খালেদা খানম পুতুল) ও দুই ভাইয়ের (মেজর সাঈদ ইস্কান্দর ও শামীম ইস্কান্দর) মধ্যে খালেদা জিয়া তৃতীয়। এদের মধ্যে এক বোন সেলিনা রহমান, ভাই শামীম ইস্কান্দর জীবিত আছেন।তারেক রহমান পিনো ও প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর জননী খালেদা জিয়া মৃত্যুকালে অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও ভক্ত-অনুরাগী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
রাজনীতিতে খালেদা জিয়া, বিএনপিতে যোগদান
স্বামী জিয়াউর রহমানের বধূ হিসেবেই জীবনের অর্ধেক সময় কাটিয়েছেন খালেদা জিয়া। রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালে ৩০ এপ্রিল চট্টগ্রামে সার্কিট হাউজে কিছু সেনা সদস্যের গুলিতে নিহত হওয়ার পর বিএনপিতে যোগ দেন খালেদা জিয়া। ১৯৮২ সালে ৩ জানুয়ারি বিএনপিতে যোগ দেন তিনি। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন। ১৯৮৩ সালের ১ এপ্রিল দলের বর্ধিত সভায় তিনি প্রথম বক্তৃতা রাখেন। বিচারপতি সাত্তার অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন তিনি।১৯৮৪ সালের ১০ মে দলের চেয়াপারসন নির্বাচিত হন খালেদা জিয়া। সেই থেকে মৃত্যু অবধি তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ওয়ান-ইলেভেনের মঈন উদ্দীন ও ফখরুদ্দীন সরকারের সময় দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালে নিম্ন আদালতে পাঁচ বছরের সাজা হলে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। বিশেষ ব্যবস্থায় পুরোনো ঢাকার পরিত্যক্ত কারাগারে তাকে রাখা হয়। এরপর ওই বছরের ১ এপ্রিল তাকে তৎকালীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। পরবর্তী সময়ে নিম্ন আদালতের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট।
তিনবারের প্রধানমন্ত্রী
খালেদা জিয়া ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এরমধ্যে দ্বিতীয়দফার দায়িত্বকাল ছিল একমাস। বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে খালেদা জিয়া, তার দল বিএনপিও বিজয়ী হয়। ওই বছরই বেগম জিয়া পঞ্চম সংসদে প্রধানমন্ত্রী হন। তার নেতৃত্বেই সংবিধানে দ্বাদশ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারপদ্ধতি থেকে সংসদীয় গণতান্ত্রিক সরকার পদ্ধতি প্রবর্তন হয়। এরপর ১৯৯৬ সালে ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পর এক মাসের জন্য ষষ্ঠ সংসদের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রণয়নের পর ওই বছরে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হেরে যায় খালেদা জিয়ার দল বিএনপি; তিনি হন বিরোধীদলীয় নেতা।১৯৯৯ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত গোলাম আজমের নেতৃত্বাধীন জামায়াতে ইসলামী ও শায়কুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোটের সমন্বয়ে গঠিত চারদলীয় ঐক্যজোটের ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নিয়ে ২০০১ সালে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হন খালেদা জিয়া। জোটে চারদল থাকলেও সরকারগঠনে বিএনপির সঙ্গে শুধু একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জামায়াতকে সঙ্গে নেন তিনি।২০০৮ সালের নির্বাচনের পর ফের বিরোধীদলীয় নেতা হন খালেদা জিয়া। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেন তিনি। একইসঙ্গে অধিকাংশ রাজনৈতিক দলই সে বছর নির্বাচন থেকে বিরত থাকে। ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় খালেদা জিয়া যখন কারাগারে, তখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের মধ্যে সমন্বয় করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে বিএনপি। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে কারাগারে থাকায় সেই নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি খালেদা জিয়া। এমনকি, এই নির্বাচনে জিয়া পরিবারের কোনও সদস্যই অংশগ্রহণ করেননি।
মুক্তির পর থেকে বাসা-হাসপাতালে যাতায়াত
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকে অসুস্থতা ক্রমাগত বাড়তে থাকে। বন্দি থাকা অবস্থায় তিনি দীর্ঘদিন তৎকালীণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষ মুক্তি পেয়ে বাসায় ফেরেন যান খালেদা জিয়া।২০২১ সালের ১২ অক্টোবর রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তির পর ওই বছরের ৭ নভেম্বর বাসায় ফেরেন খালেদা জিয়া। তখন তার শারীরিক পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। ছয় দিন পর আবারও ১৩ নভেম্বর হাসপাতালে ফিরতে হয় তাকে। এরপর থেকেই আবারও এভারকেয়ারে ভর্তি ছিলেন খালেদা জিয়া।২০২১ সালের ১১ এপ্রিল করোনাভাইরাসের নমুনা টেস্ট রেজাল্ট ‘পজিটিভ’ আসে খালেদা জিয়ার। ২৭ এপ্রিল রাতে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকার এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ২৮ এপ্রিল বিএনপি প্রধানের চিকিৎসার জন্য ১০ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়। এরপর ১৯ জুন রাতে গুলশানের বাসভবন ফিরোজায ফেরেন বেগম জিয়া। ওই সময় তার মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান চিকিৎসক অধ্যাপক ফখরুদ্দিন মোহাম্মদ সিদ্দিকী (এফএম সিদ্দিকী) বলেন, ‘লিভারের সমস্যাগুলোকে সমাধানে যে চিকিৎসা ও টেকনোলজি এবং প্রস্তুতি ও প্রক্রিয়া দরকার তা আমরা এখনও পরিপূর্ণভাবে করতে পারিনি।’ ওই সময় চিকিৎসক সিদ্দিকী উল্লেখ করেন, হাসপাতালে কিছু জীবাণু দ্বারা বেগম জিয়া সংক্রমিত হচ্ছিলেন। এই ঝুঁকির আশঙ্কা থেকে বাসায় আনা হয়।এরপর ১৯ জুলাই মহাখালীর শেখ রাসেল ন্যাশনাল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালে করোনা প্রতিরোধক টিকার প্রথম ডোজ নেন বিএনপিপ্রধান। ১৮ আগস্ট টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেন তিনি।দ্বিতীয় দফায় ২০২১ সালের ১২ অক্টোবর শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে আবার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন খালেদা জিয়া। ক্রমাগত শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন তিনি। ২৫ অক্টোবর তার শরীর থেকে নেওয়া টিস্যুর বায়োপসি করা হয়। ৩১ অক্টোবর বায়োপসি রিপোর্ট হাতে পায় মেডিকিউ সেন্টার। ২৭ দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর সন্ধ্যার পর বাসায় ফেরেন খালেদা জিয়া।তৃতীয় দফায় ২০২১ সালের ১৩ নভেম্বর এভারকেয়ারে ভর্তি করানোর পর সেদিন রাতেই সিসিইউ’তে নিতে হয় খালেদা জিয়াকে। চিকিৎসকদের ভাষ্য অনুযায়ী, এই পর্যায়ে এসে বেগম জিয়ার শারীরিক পরিস্থিতি চূড়ান্ত খারাপ হয়। ২৮ নভেম্বর (সোমবার) খালেদা জিয়ার ছয়জন চিকিৎসক যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে তার পরিস্থিতির কথা জানায়। সেদিনই প্রথমবারের মতো চিকিৎসকেরা সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী লিভার সিরোসিসের বিষয়টি প্রকাশ করেন। (লিংক বসবে হাইপার/নিচে)এদিন বাংলা ট্রিবিউনকে তার অন্যতম চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন জানান, বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মিলিয়ে অন্তত ১৭-২৩ জনের চিকিৎসক কাজ করেছেন বেগম জিয়ার মেডিক্যাল টিমে।উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে একবার, ২০১৮ সাল একবারসহ এরপর থেকে প্রতিবছরই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে খালেদা জিয়াকে।
শর্তসাপেক্ষে মুক্তি
প্রায় দুই বছর কারাবন্দি থাকার পর ২০২০ সালের ২৫ মার্চ বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সময় পারিবারিব আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছয় মাসের জন্য শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি পান খালেদা জিয়া। পরে ওই বছরের সেপ্টেম্বরে তার মুক্তির সময় আরও ছয় মাস বাড়ায় সরকার। এরপর চলতি বছরের মার্চে তৃতীয়বারের মতো ছয় মাসের মেয়াদ বাড়ানো হয়। এর আগে, ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলে ওই বছরের ৩ সেপ্টেম্বর কারারুদ্ধ হন তিনি। পরে ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পান খালেদা জিয়া।২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যাওয়ার পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ১৪টি ঈদ কেটেছে একটি রুমের ভেতরে অবস্থান করেই। সর্বশেষ ২০২৪ সালের ১৭ জুন ঈদুল আজহার দিনটিও ব্যতিক্রম ছিল না। গুলশান-২-এর বাসা ‘ফিরোজা’তেই নিজের কক্ষে কাটান ঈদের সময়। প্রসঙ্গত, এক-এগারোর মঈনউদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকারের সময় সংসদ ভবন এলাকায় সাবজেলে বন্দি থাকাকালে দুটি ঈদ কাটিয়েছেন খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়ার ‘সর্বশেষ’
বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, প্রয়াত বিএনপিনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সর্বশেষ বিদেশে যান ২০১৭ সালের জুলাইয়ে, তিন মাস পর ১৮ অক্টোবর দেশে ফেরেন তিনি। ওই বছরই তিনি ৩০ অক্টোবর রোহিঙ্গা ক্যাম্প সফর করেন। সেখানে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ৪৮ ট্রাক ত্রাণ বিতরণ করেন খালেদা জিয়া। ২০১৫ সালের ১৫ আগস্ট সর্বশেষ তার জন্মদিনের কেক কাটেন। ২০১৬ সালে জাতীয় নেতাদের প্রতি সর্বসম্মত শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের বিষয়টি সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেন বেগম জিয়া।সর্বশেষ, ২০১৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া সিলেট সফর করেন। সিলেটে হযরত শাহজালালসহ আরও একাধিক মাজার জিয়ারত করেন তিনি। ২০১৬ সালে ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর ২০১৮ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি দলের নির্বাহী কমিটির বৈঠক করেন হোটেল রাজধানীর লা মেরিডিয়ানে। সেখানে দল নিয়ে ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা করে নেতাদের তিনি সতর্ক করেন। একইসঙ্গে দলের সঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন খালেদা জিয়া।২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ে কারাগারে যাওয়ার আগে ৭ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া নিজে শেষ সংবাদ সম্মেলন করেন। এই মাসের শুরুতেই তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটি, বিলুপ্ত ২০ দলীয় জোটেরও সভাও করেন। ওই সময়েই তিনি তার স্বামী, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজার জিয়ারত করেন।শায়রুল কবির খান উল্লেখ করেন, বেগম জিয়া সর্বশেষ সমাবেশ করেন ২০১৭ সালে। সর্বশেষ ইফতার ও ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন ২০১৬ সালে।রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান হিসেবে বেগম খালেদা জিয়া ২০২৪ সালে এবং ও এ বছর স্বশস্ত্র বাহিনী দিবসে অংশগ্রহণ করেন। উভয় অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে কুশল বিনিময় ও আলোচনা করেন।








