নিজস্ব প্রতিবেদকঃ নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের কেশবপুর উপজেলার সাবেক সভাপতি কাজী আজহারুল ইসলাম মানিকের হাতে ক্রিকেট টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন ট্রফি তুলে দিচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন ও সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আকরাম হোসেন খান।
খোজ নিয়ে জানা যায়, শুক্রবার (০৩ জানুয়ারি) সাগরদাঁড়ি মাইকেল মধুসূদন ইনস্টিটিউশন এর মাঠে মধুসূদন সমাজ কল্যাণ সংঘ আয়োজিত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের অনুষ্ঠিত হয়। ফাইনাল খেলায় মধুসূদন সমাজকল্যাণ সংঘকে হারিয়ে চিংড়া একাদশ চ্যাম্পিয়ন হয়।
মধুসূদন সমাজ কল্যাণ সংঘের সভাপতি সুভাষ কুমার নাথের সভাপতিত্বে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ২ নং সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন বিএনপি'র সভাপতি আকরাম হোসেন খান, ১১নং হাসানপুর ইউনিয়ন বিএনপি'র সভাপতি আলমগীর হোসেন, সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম, মধু পল্লীর কাস্টোডিয়ান হাসানুজ্জামান, বাগেরহাট প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের কাস্টোডিয়ান মো. যায়েদসহ স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ।
খেলাটির সার্বিক পরিচালনা করেন শাহজাহান হোসেন।
নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের কেশবপুর উপজেলার সাবেক সভাপতির হাতে ট্রফি তুলে দেওয়ার বিষয়ে ০২নং সাগরদাড়ী ইউনিয়ন বিএনপি'র সভাপতি আকরাম হোসেন খান মুঠোফোনে বলেন, ইউএনও সাহেবের তত্ত্বাবধানে এই কাজ হয়েছে। প্রধান অতিথি হিসেবে চ্যাম্পিয়ন ট্রাফি ইউএনও দিচ্ছিলেন। ঐ ট্রফি আমার ধরার কথা না তবুও তিনি (ইউএনও) আমাকে দিয়ে ঐ ট্রফি ধরাইছে।
সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন বিএনপি'র সভাপতি আকরাম হোসেন খান এই দায় এড়াতে পারেন না বলে মন্তব্য করে মুঠোফোনে ১১নং হাসানপুর ইউনিয়ন বিএনপি'র সভাপতি আলমগীর হোসেন বলেন, সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আকরাম ভাইয়ের আগে থেকে খোজ খবর নিতে হত।
কেশবপুর উপজেলা বিএনপি'র সাধারণ সম্পাদক আঃ রাজ্জাক মুঠোফোনে বলেন, ঘটনাটি আমার জানা নেই। তবে নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের সভাপতির হাতে ট্রফি তুলে দেওয়া দুঃখজনক।
সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন জামায়াতে ইসলামীর আমীর রফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, খেলাটি বিএনপির লোকজন উদ্বোধন করেছেন এবং তারাই খেলাটি পুরস্কার বিতরণ করেন। আমি বা আমার দলের কেউ ছিল না। তাই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চায়না।
এদিকে সাগরদাঁড়ি ওয়ার্ডের জামায়াতে ইসলামীর নেতা সোহরাব হোসেন ঐ খেলায় উপস্থিত থাকার কথা শিকার করে বলেন, আমরা সেখানে উপস্থিত ছিলাম কিন্তু পুরস্কার বিতরণের সময় ছিলাম না।
এই ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজক কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করা শর্তে মুঠো ফোনে বলেন, সে প্লেয়ার হিসেবে একটি টাই কিনেছিল এবং চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় তাকে ট্রফি দেওয়া হয়েছে। এখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ইউনিয়ন বিএনপি'র সভাপতিসহ স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কেশবপুরে নেতৃত্ব দানকারী শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে মুঠোফোনে বলেন, এই ধরনের ছাত্রলীগ বা নিষিদ্ধ যে সংগঠন আছে। এদের সাথে ইউএনও স্যারের সম্পর্ক বা ইউএনও স্যারের কোন কর্মকাণ্ডের ফলে যদি কেশবপুরে আবার অরাজগতা অশান্তি সৃষ্টি হয়। তাহলে এর সম্পূর্ণ দায়ভার ইউএনও স্যারকে নেওয়া লাগবে।
এ বিষয়ে কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন মুঠোফোনে বলেন, চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় তাকে ট্রফি তুলে দিয়েছি। সে কোন দলের সেটি আমার জানা নেই।
এ বিষয়ে যশোর জেলা প্রশাসক মোঃ আজাহারুল ইসলামের মুঠোফোনে বারবার মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিএনপির নেতৃবৃন্দের হাত থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সভাপতির ট্রপি নেওয়ার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তে সেটি ভাইরাল হয় এবং ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এটিই এখন কেশবপুরজুড়ে টক অফ দ্য টাউন।