ফিরোজ মাহবুব কামাল : মানবকে সঠিক ভাবে চেনা যায় তার রাজনীতির এজেন্ডা থেকে। চেনা যায় রাজনৈতিক অঙ্গণে সে কোন পক্ষে খাড়া হয় তা থেকে। রাজনৈতিক এজেন্ডা ভিন্ন হওয়ায় ঈমানদার ও বেঈমানদের কখনোই একই পক্ষে দেখা যায়না। বেঈমান ও মুনাফিকদের জীবনে ইসলামকে বিজয়ী করায় কোন আগ্রহ থাকে না। মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডা নিয়ে তারা ভাবে না। তাদের মূল লড়াইটি হলো নিজ দল, নিজ নেতা ও নিজ দলীয় আদর্শকে বিজয়ী করায়। মুসলিম দেশগুলিতে এদের পরিচয় হলো সেক্যুলারিস্ট, ফ্যাসিস্ট, রাজতন্ত্রী জাতীয়তাবাদী ও বামধারার রাজনীতিবিদ রূপে। অপর দিকে ঈমানদারের লড়াইটি আল্লাহর দ্বীন তথা শরিয়তকে বিজয়ী করায়। যে দেশে ঈমানদার ও বেঈমানদের বসবাস সে দেশে এ দু’টি বিপরীত এজেন্ডা নিয়ে রাজনীতির অঙ্গণে সৃষ্টি হয় প্রচন্ড মেরুকরণ। এমন মেরুকরণের রাজনীতিতে থাকে মাত্র দু’টি পক্ষ। একটি আল্লাহর পক্ষ, অপরটি শয়তানের পক্ষ। মহান আল্লাহর নিজের ভাষায় হিযবুল্লাহ (আল্লাহর দল) ও হিযবুশশায়তান (শায়তানের দল)। নিরপেক্ষ বলে কেউ থাকে না। বাংলাদেশে শয়তানের পক্ষটি বিজয়ী। তাদের বিজয়ের ফলেই মহান আল্লাহতায়ালার শরিয়তি আইন আজ পরাজিত। এবং আদালতে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে কাফেরদের রচিত আইন। এ শয়তানী পক্ষটি কখনোই চায় না বাংলাদেশের মত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর শরিয়তী আইন প্রতিষ্ঠা পাক। এদের অনেকে নিজেদের মুসলিম রূপে পরিচয় দিলেও তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডাটি অমুসলিম কাফিরদের থেকে আদৌ ভিন্নতর নয়। তারা চায় না, মুসলিমগণ পূর্ণ মুসলিম রূপে বাঁচুক বা বেড়ে উঠুক।
নিজেকে মুসলিম রূপে দাবী করে এমন মানুষের সংখ্যা বাংলাদেশে ১৬ কোটির বেশী। কিন্তু মুসলিম হওয়ার অর্থ কি -তা নিয়ে তাদের অজ্ঞতাটি গভীর। তাদের ইসলাম সীমিত কালেমা পাঠ এবং নামাজ-রোজা-হজ্জ-যাকাত পালনের মাঝে। তারা মনে করে রাজনীতি,বুদ্ধিবৃত্তি, আইন-আদালত, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও যুদ্ধবিগ্রহের অঙ্গণে ইসলামের দেয়ার কিছু নাই। অথচ মুসলিম হওয়ার অর্থটি বিশাল। সেটি মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডাকে আমৃত্যু হৃদয়ে ধারণ করে জীবনের প্রতি অঙ্গণে বাঁচা। সে এজেন্ডাটি প্রকট ভাবে ধরে পড়ে মু’মিন ব্যক্তির কথাবার্তা, লেখালেখি, রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি,বিচার-আচার, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও যুদ্ধ-বিগ্রহে। তাই সে সেক্যুলারিস্টদের ন্যায় তার বিশ্বাস ও এজেন্ডাকে জায়নামাজে, মসজিদে বা বসত ঘরে রেখে স্রেফ দেহখানি নিয়ে রাজনীতি, প্রশাসন, ক্লাসরুম ও বুদ্ধিবৃত্তিতে প্রবেশ করে না। বরং তাঁর হৃৎপিন্ডের ন্যায় তাঁর ইসলামী এজেন্ডাটিও সর্বত্র একত্রে চলাফেরা করে। সে এজেন্ডার বিজয়ে সে বিনিয়োগ ঘটায় তার নিজের জান, মাল, মেধা তথা সর্ব সামর্থ্যের। প্রয়োজনে প্রাণও দেয়।
ঈমানদারের রাজনৈতিক এজেন্ডার অপরিহার্য বিষয়গুলি হলো ৫টি। ১).এমন এক পরিপূর্ণ ইসলামী রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা যেখানে থাকবে একমাত্র মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব এবং সে রাষ্ট্রে বিলুপ্ত হবে জনগণ, পার্লামেন্ট, স্বৈরাচারি শাসক বা রাজার সার্বভৌমত্ব। সার্বভৌম না হয়ে রাষ্ট্রীয় প্রধান হবে নবীজী (সা:)’র খলিফা বা প্রতিনিধি। প্রায়োরিটি পাবে নবীজী (সা:)’র আদর্শের প্রতিষ্ঠা ২). রাষ্ট্র চলবে শুরা বা পরামর্শের ভিত্তিতে; সে লক্ষ্যে থাকতে হবে জনগণের নির্বাচিত মজলিসে শুরা। ৩). আইনের উৎস হবে পবিত্র কুর’আন, হাদীস ও ফিকাহ’র কিতাব। ৪). নানা ভাষা, নানা গোত্র ও নানা ভৌগলিক পরিচয়ের নামে গড়ে উঠা বিভক্তির দেয়ালের বিলুপ্তি এবং রাষ্ট্র সচেষ্ট হবে মুসলিম উম্মাহর একতার প্রতিষ্ঠায়। ৫), থাকবে অসত্য ও অন্যায়ের নির্মূল এবং ন্যায় ও সুবিচার প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্র অব্যাহত রাখবে লাগাতর জিহাদ। নবীজী (সা:) এবং তার খলিফাদের জীবনে ইসলাম বলতে বুঝাতো এ এজেন্ডাগুলি নিয়ে বাঁচা। কিন্তু মুনাফিকের জীবনে ইসলামের চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাদের জীবনে এর কোনটিই থাকে না। কেবল থাকে “আমিও মুসলিম” এ কপট দাবী। এবং রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তির ময়দানে তাদের দেখা যায় তাদের জান, মাল ও মেধার বিনিয়োগ করে ইসলামকে পরাজিত রাখার লড়াইয়ে।