ধর্ম/আইন-আদালত ১১ ডিসেম্বর ২০২৪

আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীকে পছন্দ করেন না! হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী

post

আল্লাহ রব্বুল আলামিন তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাদের পছন্দ করেন না তাদের ধরন হচ্ছে : সীমালঙ্ঘনকারী, অকৃতজ্ঞ, অহংকারী, অপব্যয়কারী, আমানতের খেয়ানতকারী ও জুলুমকারী। আল কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! আল্লাহ তোমাদের জন্য উৎকৃষ্ট যেসব বস্তু হালাল করেছেন সেগুলোকে তোমরা হারাম কোরো না এবং সীমালঙ্ঘন কোরো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীকে পছন্দ করেন না।’ সুরা মায়েদা আয়াত ৮৭।

আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনজন লোক রসুল (সা.)-এর সহধর্মিণীদের ঘরে এসে তাঁর ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। তাদের তা জানানো হলে তারা সেসবকে অল্প মনে করল। তারা বলল, আমরা কোথায় আর রসুল কোথায়? রসুলের সমস্ত গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন বলল, আমি সারা রাত জেগে সালাত আদায় করব।

অন্যজন বলল, আমি সারা বছর রোজা রাখব, অন্যজন বলল, আমি নারী সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকব এবং বিয়েই করব না। রসুল (সা.) তাদের এ সিদ্ধান্তের কথা জানতে পেরে বললেন ‘তোমরা এসব কথা বলেছ? জেনে রাখ, আল্লাহর শপথ! আমি তোমাদের সবার চেয়ে বেশি আল্লাহকে ভয় করি এবং বেশি তাকওয়ারও অধিকারী। কিন্তু আমি সিয়াম পালন করি আবার সিয়াম থেকে বিরতও থাকি। সালাত আদায় করি আবার নিদ্রাও যাই এবং নারীদের বিয়েও করি। যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত থেকে বিমুখ হবে সে আমার দলভুক্ত নয়।’ বুখারি।

যারা বারবার পাপ করে, কবিরা গুনাহ করে, বিয়ের আগে প্রেম করে নারীর সংস্পর্শে আসে, সুদ খায়, জুলুম করে, আমানত খেয়ানত করে, এতিমের হক খায়, অহংকারী, অপব্যয়কারী এরা সবাই সীমালঙ্ঘনকারী।

আল্লাহ বলেন, ‘আর আল্লাহ জালিমদের পছন্দ করেন না।’ সুরা আলে ইমরান আয়াত ৫৭। ‘তোমরা আল্লাহ ও রসুলের আনুগত্য কর। তারপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফিরদের পছন্দ করেন না।’ সুরা আলে ইমরান আয়াত ৩২।

এ আয়াত থেকে বোঝা গেল আল্লাহ ও তাঁর রসুলের আনুগত্য করা ফরজ। আল্লাহর নির্দেশ যেমন মানতে হবে তেমনি রসুলের নির্দেশও মানতে হবে। আর তা না মানলে হবে সীমালঙ্ঘনকারী। আল্লাহ কোরআনে আরও বলেন, ‘অহংকার কোরো না, আল্লাহ অহংকারীদের পছন্দ করেন না।’ সুরা আল কাসাস আয়াত ৭৬।

আমাদের সবার উচিত আল্লাহ আমাদের সবাইকে যা দিয়েছেন- সম্পদ, আয়ু, শক্তি, স্বাস্থ্য ইত্যাদি আখিরাতের কল্যাণে কাজে লাগানো। এসব ব্যাপারে কখনই গাফিলতি করা উচিত নয়। আল্লাহ আরও বলেন, ‘জমিনের বুকে বিপর্যয় সৃষ্টি করতে চেও না, নিশ্চয়ই আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের ভালোবাসেন না।’ সুরা কাসাস আয়াত ৭৭।

আল্লাহ আরও বলেন, ‘যারা নিজ সহধর্মিণী ও মালিকানাভুক্ত দাসী ছাড়া অন্য কাউকে কামনা করল তারা সীমালঙ্ঘনকারী হবে।’ সুরা মুমিনুন আয়াত ৬-৭। সুরা বাকারায় আল্লাহ বলেন, ‘আর যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তোমরাও আল্লাহর পথে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর। কিন্তু সীমালঙ্ঘন কোরো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীকে ভালোবাসেন না।’ আয়াত ১৯০। ‘আর আল্লাহ ফ্যাসাদ বিপর্যয় ভালোবাসেন না।’ আয়াত ২০৫।

আল্লাহ আরও বলেন, ‘তিনি কোনো বিশ্বাসঘাতক ও অকৃতজ্ঞকে ভালোবাসেন না।’ সুরা আল হাজ আয়াত ৩৮। উপরোক্ত সংক্ষিপ্ত আলোচনায় যা প্রতীয়মান হলো সবই সীমালঙ্ঘনের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ রব্বুল আলামিন আমাদের তাঁর নেক বান্দা হিসেবে জীবন গড়ার তাওফিক দিন, সীমালঙ্ঘনকারী হিসেবে নয়।

লেখক: বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও কলামিস্ট হাফিজ মাছুম আহমদ দুধরচকী। সাবেক ইমাম ও খতিব কদমতলী হযরত দরিয়া শাহ্ (রহ.) মাজার জামে মসজিদ সিলেট। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জকিগঞ্জ উপজেলা সচেতন নাগরিক ফোরাম সিলেট।


আরো পড়ুন!

Sidebar Banner
Sidebar Banner