শীর্ষ খবর ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

৮০০ কোটি টাকা হাতিয়ে পুরোটাই পাচার করে নাফিসা সিন্ডিকেট

post

নিউজ ডেস্ক

টিভি নাইনটিন অনলাইন

ঢাকাঃ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আবারও ঘটল এক ভয়াবহ কেলেঙ্কারি, যেখানে দেশের ৮০০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ হাতিয়ে নিয়ে তা বিদেশে পাচার করার অভিযোগ উঠেছে স্মার্ট টেকনোলজিস ও নাফিসা কামাল সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কন্যা নাফিসা কামালের নেতৃত্বে পরিচালিত এই সিন্ডিকেট সরকারের একাধিক বিমা উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ করে তা বিদেশে পাচার করেছে।বিশ্বব্যাংক ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার অর্থায়নে পরিচালিত এই প্রকল্পগুলোর কাজের আড়ালে দুর্নীতির মাধ্যমে দেশীয় ও বিদেশি সফটওয়্যার কোম্পানির সাহায্যে এই বিশাল অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ ধরনের অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারি শুধু দেশের অর্থনীতির জন্য ধ্বংসাত্মক নয়, দেশের ভাবমূর্তির জন্যও অত্যন্ত ক্ষতিকর।

দুর্নীতির মূল অভিযুক্তরা

এই কেলেঙ্কারির মূল হোতাদের মধ্যে রয়েছে স্মার্ট টেকনোলজিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম এবং পরিচালক মো. তানভীর হোসেন। অভিযোগ অনুযায়ী, নাফিসা কামালের নেতৃত্বে তারা ৬৭ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ আত্মসাৎ করে বিদেশে পাচার করেছেন।এ অভিযোগগুলো সরকার থেকে প্রাপ্ত নথি, মিডিয়া রিপোর্ট এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার তদন্ত থেকে উঠে এসেছে, যা পরিস্থিতির ভয়াবহতা এবং অপরাধের পরিধি বোঝায়।

প্রকল্প বাস্তবায়নের আড়ালে লুটপাট

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত বিমা খাতের উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে অন্তত ১০টিরও বেশি প্রকল্পে কাজ পেয়েছিল নাফিসা কামালের এনকে সফট এবং স্মার্ট টেকনোলজিসের মতো কোম্পানিগুলো। সরকারি নথি অনুযায়ী, স্মার্ট টেকনোলজিস সর্বনিম্ন দরদাতা না হয়েও প্রকল্পের কাজ পেয়েছে এবং চুক্তি অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন না করেই পুরো অর্থ আত্মসাৎ করেছে।সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের ফলে তারা সরকারি নিয়মানীতির তোয়াক্কা না করে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।

বিদেশি সংস্থার যোগসূত্র

এই কেলেঙ্কারির অন্যতম আলোচিত দিক হলো বিদেশি সফটওয়্যার কোম্পানির সম্পৃক্ততা। চীনা সফটওয়্যার কোম্পানি সিনোসফটের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করার আড়ালে নাফিসা কামাল ও স্মার্ট টেকনোলজিসের সিন্ডিকেট বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছে। সিনোসফটের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে লেনদেনের আড়ালে দেশের সম্পদ পাচার করে সিন্ডিকেট তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করেছে।

দায়িত্বে অবহেলা: সরকারি প্রকল্প পরিচালকের ভূমিকা

স্মার্ট টেকনোলজিস ও নাফিসা কামালের সিন্ডিকেটকে সহযোগিতা করেছেন প্রকল্প পরিচালক মো. কামরুজ্জামান। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি সিন্ডিকেটের পরিকল্পনায় সহযোগিতা করে অতিরিক্ত বরাদ্দ অনুমোদন দিয়েছেন। সরকারি প্রকল্পের নিয়ন্ত্রক হয়েও তিনি সিন্ডিকেটের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে ভূমিকা রেখেছেন এবং লুটপাটে তাদের সহায়তা করেছেন।

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে অসম্পূর্ণ প্রকল্প

বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নেওয়া এই প্রকল্পগুলো দেশের বিমা খাতের উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তবে দুর্নীতির কারণে আজ পর্যন্ত এসব প্রকল্পের বেশির ভাগই অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। অথচ সিন্ডিকেটের সদস্যরা প্রকল্প থেকে অর্জিত অর্থের বেশির ভাগই বিদেশে পাচার করেছেন, যা দেশের আর্থিক অগ্রগতিতে বিশাল ধাক্কা দিয়েছে।


নাফিসা কামালের দেশত্যাগ

সরকার পরিবর্তনের পরপরই নাফিসা কামাল ও তার পিতা সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সপরিবারে সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমিয়েছেন। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, তারা আগে থেকেই এই কেলেঙ্কারির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এবং পালানোর পরিকল্পনা করেছিলেন। সরকারের পর্যবেক্ষণ এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর দুর্বলতার কারণে তারা এ সুযোগ নিতে পেরেছেন।

রাজনীতির প্রভাব এবং সম্পদের লুটপাট

এই কেলেঙ্কারির পেছনে রাজনীতির একটি গভীর প্রভাব রয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্মার্ট টেকনোলজিস এবং নাফিসা কামালের মতো কোম্পানিগুলোর সাথে সরকারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে তারা সব ধরনের সুবিধা পেয়েছে। ফলে সরকার তাদের কার্যক্রমের ওপর তেমন কোনো নজরদারি করেনি।

প্রতিকারের জন্য করণীয়

এই ঘটনা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আর্থিক নিরাপত্তার প্রতি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনা এবং সংশ্লিষ্টদের শাস্তির আওতায় আনা এখন সরকারের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে প্রথমেই এই সিন্ডিকেটের সদস্যদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।সরকারের উচিত দ্রুত এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা, যেন ভবিষ্যতে এ ধরনের কেলেঙ্কারি আর না ঘটে। এছাড়া, প্রকল্প পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারের আরো স্বচ্ছতা এবং দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

বিচার এবং শাস্তির দাবি

দেশের সম্পদ লুটপাটের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা না হলে এ ধরনের দুর্নীতি থামানো সম্ভব হবে না। অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে বিচারব্যবস্থা এবং সরকারের দুর্নীতি দমন বিভাগকে আরো শক্তিশালী করে তুলতে হবে। এর পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় দেশের বাইরে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থা করতে হবে।এই কেলেঙ্কারি শুধু একটি অর্থনৈতিক অপরাধ নয়, বরং এটি দেশের জনগণের প্রতি এক ভয়াবহ প্রতারণা।


আরো পড়ুন!

Sidebar Banner
Sidebar Banner