নিউজ ডেস্ক,টিভি নাইনটিন অনলাইন
ঢাকাঃ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম কোটা সংস্কার আন্দোলনের উদ্ভূত পরিস্থিতির মধ্যে রাজধানীর মিন্টু রোডের ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয় থেকে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। এ সময় তার সঙ্গে আরও পাঁচজন সমন্বয়ক উপস্থিত ছিলেন। তারা বর্তমানে ডিবির হেফাজতে রয়েছেন। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পোস্টে এটিকে প্রত্যাখ্যান করে বার্তা দিয়েছেন আত্মগোপনে থাকা সমন্বয়ক আব্দুল কাদের, আব্দুল হান্নান মাসউদ, মাহিন সরকার, রিফাত রশীদ এবং উমামা ফাতেমা। এ ছাড়া অন্যান্য সহসমন্বয়কদেরও প্রত্যাখ্যান করে পোস্ট দিতে দেখা যায়।রোববার রাতে এক ভিডিও বার্তায় নাহিদ ইসলামকে কম্পিউটারে কম্পোজ করা ঘোষণাটি পড়ে শোনান। এ সময় অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলম, আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শামসুন নাহার হলের সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুমকে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। পরে পঠিত ঘোষণাটিতে ওই ৬ সমন্বয়কের স্বাক্ষরিত পাওয়া যায়।
লিখিত ঘোষণাটিতে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রেক্ষিতে অদ্ভুত পরিস্থিতিতে অনেকে অপ্রত্যাশিতভাবে আহত এবং নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় অগ্নিসংযোগসহ নানান সহিংস ঘটনা ঘটেছে। আমরা এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে বিচারের দাবি জানাচ্ছি।তিনি আরও পড়ে শোনান, ‘আমাদের প্রধান দাবি কোটার যৌক্তিক সংস্কার, যা সরকার ইতোমধ্যে পূরণ করেছে। এখন শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষার্থে দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানাই। সার্বিক স্বার্থে এই মুহূর্ত থেকে আমরা আমাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করছি।এদিকে এটি প্রকাশিত হওয়ার পর সমন্বয়ক আব্দুল কাদের ফেসবুকে এক পোস্টে বক্তব্যটি প্রত্যাখ্যান করে তীব্র নিন্দা জানান। তিনি পোস্টে উল্লেখ করেন, ‘সমন্বয়কদের জিম্মি করে নির্যাতনের মুখে যে স্টেটমেন্ট দেওয়ানো হয়েছে, সেটা কখনই জাতির নিকট গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আটক করা সমন্বয়করা ভয়ভীতির মুখে গোয়েন্দা সংস্থার লিখে দেওয়া যে বক্তব্য কেবল রিডিং পড়ে গেছে, আমরা সেই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি এবং একই সঙ্গে জোরপূর্বক বক্তব্য আদায় করার মতো সরকারের এমন জঘন্য কাজের তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি।তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, পূর্বে উত্থাপিত ছাত্র হত্যার দায়ে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমা প্রার্থনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে। দেশবাসীর প্রতি আহ্বান, আপনারা কোনোপ্রকার বিভ্রান্ত হবেন না। যে কোটার জন্য সরকার এতোগুলো মানুষকে হত্যা করেছিল, সেই হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।এদিকে আব্দুল হান্নান মাসউদ ফেসবুকে এক পোস্টে উল্লেখ করেন, ‘অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বিবৃতি আদায় ছাত্রসমাজ মেনে নেবে না।তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহসমন্বয়ক রিফাত রশীদ তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, ‘জিম্মি করে অস্ত্রের মুখে ডিবি অফিসে হাতে স্ক্রিপ্ট ধরিয়ে জোরপূর্বক যে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে তা এ দেশের ছাত্রসমাজ প্রত্যাখ্যান করেছে।পরে আরেক স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, ‘সিনিয়ররা আগেই নির্দেশনা দিয়েছিলেন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই নীতিগত সিদ্ধান্ত ছিল, সমন্বয়কদের মাঝে এক গ্রুপকে তুলে নিয়ে গেলে বাকিরা নেতৃত্ব দেবে। কাউকে যদি আটক করে জোরপূর্বক কোনো বিবৃতি আদায় করা হয় তবে আমরা সেটা না মেনে যারা মাঠে থাকব তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে।’তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘গণস্বাস্থ্য থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার আগে নাহিদ ভাই, আসিফ ভাই এবং বাকের ভাই তিনজনই স্পষ্ট করে বলেছিল, "আমরা যদি না-ও থাকি আন্দোলন চালাইয়া নিবা, আন্দোলন যাতে থেমে না থাকে। আমাদের ওপর অনেক ঝড়-ঝাপটা যাবে, যারা বাইরে থাকবে তারাই অন-কমান্ডে থাকবে।'' তাই সিনিয়রদের শেষ কথাগুলোকে বুকে ধারণ করেই আমরা আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। জোরপূর্বক আদায় করা বিবৃতি বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ প্রত্যাখ্যান করছে।’আরেক সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, ‘কোনো আন্দোলন প্রত্যাহার হবে না। লাশের মিছিলের ওপর কোনো আন্দোলন বন্ধ হবে না। যে স্টেটমেন্ট বাকি সমন্বয়করা দিয়েছে তা তাদের জিম্মি করে আদায় করা হয়েছে। আমরা অত্যাচার, জুলুম, গ্রেপ্তার আতঙ্ক মিলিয়ে কেও কারও সাথে ঠিকভাবে কন্টাক্ট করতে পারছি না। ৬ সমন্বয়ক যে বিবৃতি দিয়েছে তা আমাদের পক্ষে কোনোভাবেই গ্রহণ করা সম্ভব না। এই সরকারি প্রোপাগান্ডায় কান না দেওয়ার আহ্বান রইল সকলের প্রতি।এর আগে রাত নয়টার দিকে ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদের ফেসবুক পেজে কয়েকটি ছবিযুক্ত করে একটি পোস্ট দেন, যেখানে হেফাজতে নেওয়া সমন্বয়কদের নিয়ে নাস্তা করতে দেখা যায় তাকে। এছাড়া গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে পরবর্তীতে ডিবিপ্রধানের সঙ্গে ডিনারও করতে দেখা যায় এই ছয় সমন্বয়ককে।ফেসবুক পোস্টে হারুন অর রশীদ লিখেছেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন। তাই ওদের ডিবি কার্যালয়ে এনে তাদের সাথে কথা বললাম। কি কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে! ওদের কথা শুনে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে আমাদের নানা পরিকল্পনার কথা জানানোর পর তাদের উদ্বেগ দূর হয়েছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টিম ডিবি ডিএমপি বদ্ধপরিকর।কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহকে শনিবার সন্ধ্যায় হেফাজতে নেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গতকাল রোববার রাতে মিরপুরের একটি বাসা থেকে নুসরাত তাবাসসুমকে তুলে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তার স্বজনরা।এর আগে গত শুক্রবার বিকালে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতাল থেকে চিকিৎসাধীন থাকা তিন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও আবু বাকেরকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদেরও নিরাপত্তার কারণে হেফাজতে নেওয়া হয় বলে গত শুক্রবার রাতে ডিবি জানায়।