শীর্ষ খবর ২৭ জুলাই ২০২৪

পর্দা উঠল ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ প্যারিস অলিম্পিকের

post

নিউজ ডেস্ক,টিভি নাইনটিন অনলাইন

স্পোর্টস ডেস্কঃ ক্রীড়া জগতের সবচেয়ে বড় উৎসব ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ অলিম্পিকের পর্দা উঠেছে আজ।প্রথমবারের মতো মাঠের বাইরে উন্মুক্ত স্থানে হয়েছে অলিম্পিকের উদ্বোধন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ এই ক্রীড়া উৎসবে কালো ছায়া ফেলে রেলওয়ে নেটওয়ার্কে দুষ্কৃতকারীদের অগ্নিহামলা। আয়োজকদের প্রত্যাশা, সব কিছু পেছনে ফেলে অলিম্পিক হবে উৎসবমুখর।প্রথা ভেঙে একেবারে ভিন্ন এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। স্টেডিয়ামের গণ্ডির বাইরে প্যারিসের মাঝ দিয়ে বয়ে চলা সেইন নদী ঘিরে ২০২৪ অলিম্পিকের বোধন হয়েছে বাংলাদেশ সময় গত রাতে। পুরো শহর নিয়েই মেতে ওঠার এই আয়োজন ঘিরে অবশ্য শঙ্কার চোরাস্রোতও বয়ে গেছে প্রতিক্ষণে। উদ্বোধনী দিনের সকালে ঘুম ভেঙেই যে প্যারিসবাসী পেয়েছে নাশকতার খবর। তাদের দ্রুতগামী ট্রেন নেটওয়ার্ক ভেঙে পড়েছে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্থানে আগুন দেওয়ায়। এক সপ্তাহ লেগে যাবে তা পুরোপুরি সচল হতে।২০১২ লন্ডন অলিম্পিকের আয়োজক কমিটির অন্যতম হিউজ রবার্টসন বলেন, ‘এ ধরনের আয়োজনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটাই মূল সুর বেঁধে দেয় যে আগামী ১৭টি দিন কেমন যাবে। ’ সেই উদ্বোধনী থেকেই অ্যাথলেটদের নিরাপত্তা প্রকট হলো প্যারিসে।ফ্রান্সের ক্রীড়ামন্ত্রী এমেলি ওদেয়া-কাস্তেরা তো সরাসরিই বলেছেন, ‘এই নাশকতা অ্যাথলেটদের বিরুদ্ধে, যারা চারটি বছর ধরে কঠোর পরিশ্রমে তৈরি হয় এই মঞ্চে নিজেদের মেলে ধরার জন্য।এটা গেমসের বিরুদ্ধে। ’ প্যারিসে এখন সাড়ে ১০ হাজার অ্যাথলেটের মিলনমেলা। আজ থেকে ৩৫টি ভেন্যুতে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের লড়াইয়ে নেমে যাবেন তাঁরা।তার আগে উদ্বোধনী আয়োজনে সবার একসঙ্গে হওয়াটাই গেমসের সবচেয়ে বর্ণিল কয়েক ঘণ্টা। এবার অ্যাথলেটিকস ট্র্যাকের বদলে সেইন নদীতে নৌকায় অ্যাথলেটদের প্যারেড এনেছিল ভিন্ন আমেজ।সংযোগ সেতুগুলো যেন উৎসবের মঞ্চ। সেখানে নেচেগেয়ে পারফরম করেছেন শিল্পীরা। দুই তীরে দর্শকরা বসে উপভোগ করেছে তা। স্টেডিয়ামের আয়োজনে যেখানে লাখখানেক দর্শক থাকতে পারত, সেখানে প্যারিসে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের টিকিটই বিক্রি হয়েছে তিন লাখ। আশপাশের বাড়িগুলো থেকে দেখার সুযোগ তো ছিলই।


আয়োজনের মূল পারফরমার ছিলেন আমেরিকান তারকা লেডি গাগা এবং ফ্রেঞ্চ ভাষার এই মুহূর্তে সবচেয়ে জনপ্রিয় শিল্পী আয়া নাকামুরা; সঙ্গে তিন হাজার নৃত্যশিল্পীর মনোমুগ্ধকর পারফরম্যান্স তো ছিলই। তবে এই সব কিছুর ছায়ায় নিরপাত্তা নিয়ে উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা ছিল প্রবল। শুরুতে ৪৫ হাজার নিরাপত্তাকর্মী থাকার কথা থাকলেও নাশকতার পর আরো ১০ হাজার সেনা এবং ২২ হাজার বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করা হয়। উৎসবের শহরে সকাল থেকেই ভর করেছিল আতঙ্ক, অনিশ্চয়তা। নিরাপত্তার চাদরে পুরো এলাকা ঢেকে ফেলায় অনেকটাই লকডাউন পরিস্থিতি তৈরি হয়। আয়োজক কমিটিকে বারবার আশ্বস্ত করতে হয় যে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরিকল্পনায় কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। আবহাওয়াও এদিন বিরুদ্ধাচরণ করে, মিষ্টি রোদের বদলে হানা দেয় মেঘ-বৃষ্টি। তবু ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ বলে কথা। সেই ‘শো’রই পর্দা উঠেছে গতকাল।উসাইন বোল্ট, মাইকেল ফেলপস, মাইকেল জনসন, জেসি ওয়েন্স, কার্ল লুইস, নাদিয়া কোমানিচি, অ্যালিসন ফেলিক্স—এমন কত কত কিংবদন্তি মাতিয়েছেন এই মঞ্চ। প্যারিসে এবার বোল্ট-ফেলপসের মতো অত বড় নাম নেই। তবে টেনিসে নোভাক জোকোভিচ, রাফায়েল নাদালের মতো তারকা আছেন। ২০১৬ সালে চারটি সোনা জেতা জিমন্যাস্ট সিমোন বাইলসেরও এই আসর নিজের করে নেওয়ার কথা। স্প্রিন্টে জন্ম হতে পারে নতুন তারকার, জ্যামাইকার কিশান থম্পসন দিয়ে রেখেছেন সেই ইঙ্গিত।করোনা মহামারিতে গত টোকিও অলিম্পিক ছিল রংহীন। এমনকি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানও হয়েছিল দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে। শিল্প-সংস্কৃতির শহর প্যারিসে এবার হওয়ার কথা তাই প্রাণের মেলা। কিন্তু এখানেও নাশকতার কালো ছায়া। অলিম্পিক বাস্কেটবল দলে লেব্রন জেমস, স্টিফেন কারির মতো বিশ্বতারকারা উপস্থিত। প্যারিসের দ্রুতগামী ট্রেনে চড়েই লিলেতে নিজেদের ম্যাচ খেলতে যাওয়ার কথা। নিশ্চিতভাবেই এখন সেই পরিকল্পনায় বদল আনতে হচ্ছে তাঁদের। ইসরায়েল দলকে এই আসরে অংশ নিতে দেওয়া নিয়ে প্রতিবাদ করা হয়েছে। তবে তারা অংশ নিচ্ছে, তেমনি আছে ফিলিস্তিন দলও। উদ্বোধনী এই আয়োজনে এই দুই দলকে ঘিরেই বাড়তি প্রহরা ছিল। তবে অন্য অনেক আসরের মতো মাঠের খেলা শুরু হলে সেই উন্মাদনা,উত্তেজনা সব শঙ্কাকে পেছনে ফেলে প্যারিস অলিম্পিককেও হয়তো সার্থক করে তুলবে।

আরো পড়ুন!

Sidebar Banner
Sidebar Banner