শীর্ষ খবর ১৪ জুলাই ২০২৪

কোটা নিয়ে আদালতের রায় ছাড়া সরকারের কিছুই করার নেই : প্রধানমন্ত্রী

post

নিউজ ডেস্ক,টিভি নাইনটিন অনলাইন

ঢাকাঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোটা নিয়ে আদালত থেকে সমাধান না আসলে সরকারের কিছু করার নেই। তিনি বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরা চাকরি পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা পবে?রোববার (১৪ জুলাই) বিকেলে চীন সফর নিয়ে গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।২০১৮ সালে আন্দোলন ও সহিংসতার ঘটনায় বিরক্ত হয়ে কোটা বাতিল করেছিলেন বলে এসময় উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দিলেও উচ্চ আদালতের নির্দেশে আবারও কোটা চালু হওয়ার খবরে আন্দোলন শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। তারা পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত বহালের দাবি করলেও সরকারপ্রধান বলেন, ২০১৮ সালে আন্দোলন ও সহিংসতার ঘটনায় বিরক্ত হয়ে কোটা বাতিল করেছিলেন। কোটা বাতিল করায় সমস্যা হয়েছে বলেও মনে করেন সরকার প্রধান।প্রধানমন্ত্রী বলেন, একবার তারা (শিক্ষার্থীরা) এ ধরনের আন্দোলন করছিল। আন্দোলন তো না সহিংসতা। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করেছিল। তখন আমি বিরক্ত হয়ে বলেছিলাম সব কোটা বাদ দিয়ে দিলাম। তখনই বলেছিলাম যে কোটা বাদ দিলে দেখেন কী অবস্থা হয়। এখন দেখেন কী অবস্থা তৈরি হয়েছে?শেখ হাসিনা বলেন, কোটা নিয়ে যারা আন্দোলন করছে তারা আইন মানে না, সংবিধান বোঝে না। আদালতে বিষয়টি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত কিছু করার নেই। তবে কোনো ধ্বংসাত্মক কাজ করা যাবে না।

তিনি বলেন, মেধা কার কত সেটা পরীক্ষায় দেখা যায়, সবসময় সব কোটা পূর্ণও হয় না। তখন মেধা তালিকা থেকেই নিয়োগ দেওয়া হয়।সরকারি চাকরিতে বীর মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা কোটা সুবিধা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি-নাতনিরা কোটা সুবিধা পাবে? এমন প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা কোটা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিরা কোটা পাবে? তা তো আমরা দিতে পারি না।’তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার তাদের কে দিয়েছে? তারা (মুক্তিযোদ্ধারা) দেশ স্বাধীন করার জন্য জীবনপণ লড়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পায় কীভাবে? মুক্তিযুদ্ধ তাদের এখন ভালো লাগে না।কোটা সংস্কারের আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, যারা আন্দোলন করছে, আইন মানবে না, আদালত মানবে না। সরকার কীভাবে চলে কোনো ধারণা নেই। জ্ঞান নেই। ভবিষ্যতে এরা নেতৃত্ব দেবে। পড়াশোনা করছে। ভালো রেজাল্ট করছে। কিন্তু সংবিধান কী বলে জানা উচিত। রাষ্ট্র কীভাবে পরিচালনা হয় কোনো ধারণা আছে? আদালত সুযোগ দিয়েছে। সেখানে যাক, বলুক। না, তারা রাজপথে সমাধান করবে। আদালত যখন বলেছে, এখন আমার কিছু বলার অধিকার নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত আদালত থেকে সমাধান না আসে কিছু করার নেই।হুঁশিয়ার করে সরকারপ্রধান বলেন, কোনো ধ্বংসাত্মক কাজ করতে পারবে না। পুলিশের গায়ে হাত দেওয়া, গাড়ি ভাঙা তখন আইন আপন গতিতে চলবে।শেখ হাসিনা বলেন, চীন সফর থেকে ছয় ঘণ্টা আগে ফিরে এসেছি। কারণ আমার মেয়ে সায়েমা ওয়াজেদ পুতুল অসুস্থ হয়ে পড়ে। চীন সফর থেকে দ্রুত ফিরে আসি। কারণ চীন সফরে আমাদের কাজ শেষ হয়ে যায়। এখন ঘোরাফিরা না করে দ্রুত ফিরে আসি। এটা নিয়ে এত তোলপাড় হয়ে যাবে বুঝতে পারিনি। চীন সফর থেকে শেখ হাসিনা আপসেট হয়ে ফিরেছেন ভারতের গণমাধ্যমে এমন মন্তব্য প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের গণমাধ্যমে এসেছিল তা নিয়ে যদি আমাদের গণমাধ্যমে সংবাদ হয় তাহলে তো চলবে না।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি একজন মা, মেয়ে অসুস্থ। ছয় ঘণ্টার মধ্যে এত তোলপাড় হয়ে যাবে তাতো বুঝতে পারিনি। যারা সমালোচনা করে তাদের দৃষ্টিতে আমার সবই তো খারাপ। মেট্রোরেলে উঠে তারাই বলে দেশ সর্বনাশ হয়ে গেছে। গ্রাম এখন শহর হয়ে গেছে; সেটাও তারা বলে খারাপ। যারা জাতির পিতাকে হত্যা করেছে, দেশ রাজাকারদের হাতে তুলে দিয়েছে তাদের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি কিছু আসে যায় না।চীন-ভারত সফর নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনাকে মানসিক অসুস্থতা বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীন আমাদেরকে কিছুই দেয় নাই, ভারতের সঙ্গে আমরা গোলামি চুক্তি স্বাক্ষর করে এসেছি; কিছু মানুষের মুখ থেকে এগুলো আমাদেরকে নিয়মিত শুনতে হচ্ছে। এগুলো হলো সম্পূর্ণ মানসিক অসুস্থতা, এ ছাড়া কেউ সফর নিয়ে অন্য কোনো প্রশ্ন করতে পারেন না।প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীন সফরে ২১টি সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি হয়েছে। আমি জানি না এরপরও যারা সমালোচনা করছেন, তারা জেনে বুঝে করছেন কি-না। কিছুদিন আগেও ভারত সফরে আমরা দেশ বিক্রির চুক্তি করে আসছি, এমনটা বলা হয়েছে। তিনি বলেন, এখন আমি এসবকে খুব বেশি একটা গুরুত্ব দিই না। কারণ, আমি বাংলাদেশে আসার পর প্রতিটি ক্ষেত্রেই নেগেটিভ কথা শুনে আসছি। এতসব গুজব আমাকে নিয়ে হয়েছে, যেগুলো আমি শুনে আসছি, এসব নিয়ে আর কিছুই বলার নেই। যারা বলছে বলুক তাদেরকে বলতে দিন। সরকারি চাকরিতে প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং নিয়মের যেসব ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় হচ্ছে সেগুলোর সূচনা বিএনপির আমলে বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জিয়াউর রহমান এসব অনিয়মের শুরু করেন এবং খালেদা জিয়ার আমলে তা গতি পায় বলে দাবি করেন সরকারপ্রধান।বিএনপির আমলে প্রশ্নপত্র ফাঁসের শুরু দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ২৪ বিসিএস হয় ২০০২ সালে। তখন পরীক্ষা-টরিক্ষা হতো না। হাওয়া ভবন থেকে তালিকা যেতো। ঢাকা কলেজে একটা বিশেষ কামরা ছিল। সেখানে বসে পরীক্ষা দিয়ে তাদের লোকজন চাকরি পেত। প্রশ্নপত্র ফাঁস ও অনিয়ম তখন থেকেই।প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক সময় বলা হয়, এসব ধরতে গেলে ইমেজ নষ্ট হবে। আমি এটা মানি না। অন্যায় অবিচার ধরবই। তাদের ধরতেই হবে। ছেড়ে দিলে তো চলতেই থাকবে।সরকার আন্তরিক বলেই সম্প্রতি প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ধরা পড়েছে বলে জানান তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, অনেক দিন ধরে লেগে থেকে থেকে ধরতে পেরেছি।ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে কেউ ভেনিফিশিয়ারি হলে তাদেরও ধরা হবে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, কিন্তু তাদের খুঁজে বের করে দেবে কে। অমুকের কাছে বিক্রি করেছি বললে এবং প্রমাণ করতে পারলে ধরা যাবে।এ সময় প্রধানমন্ত্রী জানান, ঘুষ যে দেবে আর ঘুষ যে নেবে উভয়ই অপরাধী। যারা ফাঁস করে আর যারা কিনে উভয়ই সমান অপরাধী। সরকার কাউকে ছাড় দেবে না।

আরো পড়ুন!

Sidebar Banner
Sidebar Banner