নিউজ ডেস্ক,টিভি নাইনটিন অনলাইন
সিলেটে: সিলেটে ঈদুল আজহার আগ থেকেই ছিল বন্যা। সবকিছু পানির নিচে থাকায় বেগ পেতে হয়েছে ঈদ উদযাপনেও। তার রেশ না কাটতেই অতিভারী বর্ষণের ফলে ফের বন্যার চোখ রাঙানি। আবহাওয়া বিভাগের তথ্য বলছে— দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে আগামী ৭ দিন মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। ফলে বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা।এই অঞ্চলে দু’দফা বন্যার ক্ষত সারানোর আগেই তৃতীয় দফা বানের কবলে পড়েছেন লাখো মানুষ। রোববার (১ জুলাই) রাত থেকে পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন নদনদীর পানি বাড়ার পাশাপাশি প্লাবিত হতে শুরু করেছে নিম্নাঞ্চল। অব্যাহত আছে পানি বাড়ার ধারা। ফলে অঞ্চলটিতে দুর্ভোগের সীমা ছাড়িয়েছে।এদিকে উত্তরের জনপদেও বাড়ছে পানি। মাঝ আষাঢ়ে যে বর্ষণ চলছে, তা সপ্তাহজুড়ে চলতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। আর তাতে নদীর পানি বেড়ে দেশের উত্তর ও উত্তর পূর্বাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যার শঙ্কার কথা জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্র।গতকাল সোমবার এক দিনেই সিলেটের বিভিন্ন নদীর ১০ পয়েন্টের মধ্যে চারটির পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সুরমা নদীর গোলাপগঞ্জ এলাকা, জৈন্তাপুরের বড়গাঁঙ নদী, পিয়ান ও সারি নদীর বিভিন্ন এলাকায় পানি বেড়ে লোকালয়ে ঢুকতে দেখা গেছে। দু’দিনে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৫০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ জানিয়েছেন, বন্যার শঙ্কা করা হচ্ছে। পানি বাড়তে থাকলে আবারও বন্যা হবে। গতকাল সোমবার সিলেটে ১৭৯ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে জানান সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন।অপর দিকে বন্যা পরিস্থিতির কারণে সিলেট বিভাগে স্থগিত রাখা হয়েছে এইচএসসি পরীক্ষা। এনিয়ে চার বিষয়ের পরীক্ষার নতুন রুটিন প্রকাশ করা হয়েছে। নতুন রুটিনে এ চার বিষয়ের পরীক্ষা পিছিয়ে আগামী ১৩ আগস্ট থেকে অনুষ্ঠিত হবে। অন্য বিষয়ের পরীক্ষা আগের রুটিন অনুযায়ী চলবে।সুনামগঞ্জের তাহিরপুর ও বিশ্বম্ভরপুরে দেখা দিয়েছে বন্যা। তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের আনোয়ারপুর-বালিজুড়ি রাস্তা, শক্তিয়ারখলা ১০০ মিটার রাস্তা ও লালপুর সড়কটি এখন ৩ ফুট পানির নিচে। এ রাস্তায় চলাচলকারী লোকজন নৌকা কিংবা বিকল্প যানবাহনে চলাচল করছেন। তাহিরপুরে বানের পানিতে ডুবেছে চারটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সাতটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।মৌলভীবাজারের সীমান্তঘেঁষা জুড়ী নদীর (জুড়ী-ভবানীপুর) পানি বিপৎসীমার ১৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে কুশিয়ারা নদীর মৌলভীবাজার অংশের শেরপুর পয়েন্টে উজানের ঢলের প্রভাবে পানি বেড়ে বিপৎসীমার ১৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একইভাবে জেলার মনু-ধলাই নদীর পানি বাড়ছে। তবে এ দুই নদীর পানি বিপৎসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।এদিকে ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে রংপুরে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। গতকাল কাউনিয়ার তিস্তা রেলসেতু পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়দু’দিনের বৃষ্টি এবং উজানের ঢলে গাইবান্ধার প্রধান চার নদনদীর পানি আবারও বাড়তে শুরু করেছে। সেখানকার তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। তবে ব্রহ্মপুত্র, করতোয়া ও ঘাঘট নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টানা বৃষ্টিতে নেত্রকোনার প্রধান নদী উব্ধাখালী নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমা ছাড়িয়ে গেছে। এ ছাড়া সোমেশ্বরী ও কংশের পানিও বেড়ে চলেছে।কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে দু’দিনের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার ১৩ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে উপজেলা কমপ্লেক্সের ভেতরে সরকারি বেশ কয়েকটি অফিসে পানি ঢুকে আসবাবের ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় খাল ও নর্দমার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা সতর্কীকরণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, উত্তরাঞ্চলে নদীর পানি সমতলে কমছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র, যমুনার পানি সমতল স্থিতিশীল আছে। তবে আগামী ৭২ ঘণ্টায় এসব নদনদীর পানি সমতলে বাড়বে। আগামী কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টির প্রভাবে তিস্তা, ধরলা, দুধকুমারের পানি সমতলে দ্রুত বাড়বে।