নিউজ ডেস্ক,টিভি নাইনটিন অনলাইন
সুনামগঞ্জ: ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে সৃষ্ট বন্যায় সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। ঝড়-বৃষ্টি, বজ্রপাতসহ দমকা হাওয়া বয়ে যাচ্ছে সুনামগঞ্জের ওপর দিয়ে।হাওর অঞ্চলের মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।বুধবার (১৯ জুন) সকালে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, ছাতক উপজেলায় বিপৎসীমার ১৪৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এবং দিরাই উপজেলায় ১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১০০ মিলিমিটার, লাউড়ের গড়ে ৭৮ মিলিমিটার, ছাতকে ৮৪ মিলিমিটার এবং দিরাইয়ে ৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। নদীর পানি কমলেও বর্ষণ অব্যাহত থাকায় পানি বাড়তে পারে।গত তিন ধরে জেলার প্রতিটি উপজেলা বন্যা আক্রান্ত হয়ে সড়ক পানিতে ডুবে যাওয়ায় জেলার সাথে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সুরমা নদীর পানি প্রতি মুহূর্তে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জেলার পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকার ৮০ ভাগ প্লাবিত হয়েছে। সুরমা, যাদুকাটা, চেলাসহ সীমান্তের নদীগুলো দিয়ে পানি ভাটির দিকে প্রবাহিত হওয়ায় তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, মধ্যনগর, বিশ্বম্ভরপুর, ধর্মপাশা, জগন্নাথপুর, দিরাই, শাল্লা, শান্তিগঞ্জ উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। অনেকেই নিজ নিজ বসতবাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্র ও উঁচু স্থানে যাচ্ছেন। জেলার পৌর শহরের সাহেববাড়ি ঘাটের বাসিন্দা সাকিল আহমেদ জানিয়েছেন, রাতে বৃষ্টি না হলেও সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টি, বজ্রপাত ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি বৃদ্ধি পাওয়ার আতংকে আছেন। বাসাবাড়ি, দোকানপাটে সকাল থেকে আবারও পানি বাড়তে শুরু করেছে। সুনামগঞ্জে আবারও ২০২২ সালের জুন মাসের মতো দুর্যোগ দেখা দিয়েছে।জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা ভাটিপাড়া এলাকার বাসিন্দা জামিল মিয়া বলেন, পানি বাড়ছেই। আমরা আছি চরম দুর্ভোগের মধ্যে। আরও পানি বাড়লে পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ঢলের পানি উঠে যাওয়ায় সব কিছু ফেলে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে মানুষজন।জেলার তাহিরপুর উপজেলার টাংগুয়ার হাওর পাড়ের কৃষক সাদেক মিয়া জানান, বৃষ্টি, বজ্রপাত ও ঢলের পানি সব মিলিয়ে হাওরের অবস্থা খুবই খারাপ। বসতবাড়িতে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। হাওরের ঢেউ বাড়িঘরে আঘাত করছে, পানিও বাড়ছে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুনামগঞ্জের ৬৯টি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভার প্রায় চার লাখের অধিক মানুষ বন্যাকবলিত। এর মধ্যে প্রায় ১২ হাজার ৪৩৯ জন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। পানিতে ডুবে আছে তাহিরপুর-বিশ্বম্ভরপুর-সুনামগঞ্জ সড়ক। ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ সড়ক, দোয়ারাবাজার-ছাতক সড়ক, জামালগঞ্জ-সুনামগঞ্জ সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ৫ হাজার জন, বিশ্বম্ভরপুরে ২২ হাজার, শান্তিগঞ্জে ১৫ হাজার, তাহিরপুরে ১ লাখ ৪০ হাজার, জামালগঞ্জে ১২ হাজার ৬৭০, জগন্নাথপুরে ৩৭ হাজার ৩১০, দিরাইয়ে ৭৮ হাজার ২৫০, শাল্লায় ১১৭, ছাতকে ২ লাখ ও দোয়ারা বাজার উপজেলায় ৫০ হাজার লোক বন্যা কবলিত হয়েছে। বন্যার্তদের জন্য ৫৩১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত আছে। এর মধ্যে ১২ হাজার ৪৩৯ জন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানিয়েছেন, আগামী ৬ দিন বৃষ্টি ও মেঘালয় থেকে পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকবে। নিম্নাঞ্চলে পানি বাড়ছে। বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। সবাইকে সর্তক থাকতে হবে।সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী জানান, প্রশাসন বন্যার্তদের জন্য প্রতি উপজেলায় ত্রাণ, শুকনো খাবারসহ সরকারি সহায়তা পাঠিয়েছে এবং সার্বক্ষণিক বন্যা পরিস্থিতি নজরদারিতে রাখা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ছাতক, দোয়ারাবাজার, বিশ্বম্ভরপুর ও জগন্নাথপুরে ৫ টন করে জিআর চাল দেওয়া হয়েছে। ৬০০ টন জিআর চাল মজুদ রয়েছে। শুকনো খাবার, শিশুখাদ্য ও গো-খাদ্যের জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেছি। এছাড়াও এ পর্যন্ত নগদ ১০ লাখ টাকা বিভিন্ন উপজেলায় দেওয়া হয়েছে।