নিউজ ডেস্ক,টিভি নাইনটিন অনলাইন
সিলেট: সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। টানা বর্ষণ এবং উজানের ঢলে পানি বাড়ছে। এ অবস্থায় সিলেটের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র জাফলং, রাতারগুল, বিছানাকান্দি ও পান্থুমাইসহ সব পর্যটনকেন্দ্র অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বন্যা পরিস্থিতির জন্য সিলেটের পর্যটনকেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে। এর আগে ৩০ মে সিলেটের সব কটি পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়া দেওয়া হয়েছিল। পরে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলে ৭ জুন থেকে খুলে দেওয়া হয়েছিল।বন্যা পরিস্থিতির কারণে তাহিরপুরের পর্যটন স্পটগুলোও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালমা পারভীন এ ঘোষণা দেন। তাহিরপুর উপজেলার অন্যতম পর্যটনস্পটগুলো হলো, টাঙ্গুয়ার হাওর, লাকমাছড়া, নীলাদ্রি লেক (শহীদ সিরাজলেক), বড়গুপটিলা, যাদুকাটা নদী ও শিমুল বাগান। বন্যার পানিতে তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের তিনটি জায়গা তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সড়কের ভেঙে যাওয়া স্থানগুলো হলো- তাহিরপুর উপজেলার বালিজুড়ি ইউনিয়নের আনোয়ারপুর সড়ক, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শক্তিয়ারখলা ১০০ মিটার সড়ক ও সুনামগঞ্জ সড়কের লালপুর সড়ক।তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালমা পারভীন বলেন, বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওরসহ সকল পর্যটনস্পট পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের তিন স্থানে ভাঙন দেখা গেছে। গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, টানা বৃষ্টি এবং ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। উপজেলার মধ্যে প্রবাহিত পিয়াইন, সারি ও গোয়াইন নদের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এরই মধ্যে উপজেলার পর্যটনকেন্দ্রগুলো প্লাবিত হয়েছে। এমন অবস্থায় জনস্বার্থে, জানমাল রক্ষার্থে ও জননিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দিয়ে জাফলং, বিছনাকান্দি, রাতারগুল, পান্থুমাইসহ সব পর্যটনকেন্দ্র পরবর্তীতে নির্দেশনা দেওয়া না পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানান ইউএনও।উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে বন্যার পানি বাড়ছে সিলেটে। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট ও জৈন্তাপুরের অবস্থা খুবই ভয়াবহ। সেখানকার অধিকাংশ এলাকার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। প্রধান সড়কগুলোও পানিতে তলিয়ে গেছে। এ চার উপজেলার পানিবন্দি মানুষ ছুটছেন আশ্রয়কেন্দ্রে। শুধু উপজেলা নয়, নগরীর অবস্থাও নাজুক। অধিকাংশ এলাকার মানুষ পানিবন্দি। সিলেট ছাড়াও সুনামগঞ্জের ছাতক, দোয়ারাবাজার, সদরসহ অন্যান্য উপজেলার অবস্থা নাজেহাল। মঙ্গলবার সকাল থেকে নগরীসহ সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলার মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে দেখা যায়।এদিকে সুরমা, কুশিয়ারা, সারি, পিয়াইন, লোভা, ডাউকিসহ সবকটি নদীর পানি বেড়েছে। ১০টি পয়েন্টের মধ্যে সুরমা ও কুশিয়ারার পয়েন্টসহ ৬টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপরে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর তীর উপচে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। ফলে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, আজ মঙ্গলবার দুপুরে সুরমা নদীর কানাই পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩৬ সেন্টিমিটার, সিলেট পয়েন্টে ২৪ সেন্টিমিটার, কুশিয়ার অমলশীদ পয়েন্টে ২৭ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৮০সেন্টিমিটার, সারিগোয়াইন পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।পাউবো সিলেটে নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, ভারতের মেঘালয়ে বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড়ি ঢল নেমে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসেন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টায়) সিলেটে ১৫৩ মিলিমিটার ও মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সিলেটের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি বিষয়ে জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকে লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে উঠছেন। বিকালে আশ্রয় নেওয়া লোকদের পরিমাণ জানা যাবে।