নিউজ ডেস্ক,টিভি নাইনটিন অনলাইন
ঢাকাঃ লুটপাট ও মহাদুর্নীতি ঈদুল ফিতরের আনন্দ কেড়ে নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ধনী—গরীব নির্বিশেষে সকলেই এই উৎসব পরিবার স্বজন—শুভাকাঙ্খীদের নিয়ে উপভোগ করেন। কিন্তু এই বছরেও আবার জনগণের ভোটের অধিকার, গণতন্ত্র কেড়ে নেওয়ায় জনজীবনের এই উৎসব ম্লান হয়ে হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে ডামি সরকারের রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি হরিলুট আর মহাদুর্নীতির কারণেই মানুষের শেষ হাসিটুকুও বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ঈদে আনন্দ উদযাপনের বিপরীতে মুখ লুকিয়ে কাঁদছেন মধ্যবিত্ত মানুষেরা। সমাজে তৈরি হয়েছে ধনী ও গরীবের বিশাল ব্যবধান। অধিকাংশ মানুষের সামান্য প্রয়োজন মিটানোই যেন দুঃস্বপ্ন।মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেড় যুগের বেশি সময় ধরে গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক বৈষম্যের কারণে স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও গণতন্ত্রের ধ্বংসস্তুপের ওপর দাঁড়িয়ে কতৃর্ত্ব করছে এক নিষ্ঠুর নাৎসী সরকার। দুঃশাসনের ছোবলে সমাজে নেমে এসেছে নৈরাজ্যের এক ঘন অন্ধকার। দ্রব্যমূল্যের চরম উর্ধ্বগতির কষাঘাতে জনজীবনে নিম্ন আয়ের মানুষের আর্তি শোনা যাচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের লাগাম না টেনে বাজার সিন্ডিকেটের হোতাসহ সরকারের আস্থাভাজন ক্ষমতাধর ব্যক্তিবর্গ ব্যস্ত রয়েছে লুটপাট, দুর্নীতি ও বিরোধী মতকে দমন—পীড়নে।তিনি বলেন, ৬ বছরের বেশি সময় ধরে অসুস্থ অবস্থায় বিনা অপরাধে মৌলিক মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে বন্দী রাখা হয়েছে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপার্সন আপোষহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে। যিনি দেশের পাঁচটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৩টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সব কটিতেই জনগণের ভোটে জয়ী হয়েছেন। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ঘোষকের সহধর্মিণী, সাবেক তিনবারের সফল প্রধানমন্ত্রী যিনি দেশের অধিকারহারা জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনতে এবং স্বাধীনতা—সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার আত্মবিশ^াসী উচ্চারণ থেকে বিচ্যুৎ হননি। তাঁর উন্নত চিকিৎসা অতীব জরুরী। অথচ হিংসাশ্রয়ী সরকার গায়ের জোরে গুরুতর অসুস্থ দেশনেত্রীকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসা নিতে দিচ্ছে না। এই ঈদও পরিবার ছাড়া বন্দী অবস্থায় তাঁকে পালন করতে হবে। রিজভি বলেন, প্রতিদিন আমাদের কেউ না কেউ হত্যা, না হয় গুম, না হয় জেলে বন্দী করা হচ্ছে, না হয় মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে। প্রতিদিন ইউনিয়ন পর্যায় থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ পযার্য়ের নেতাদের সারাদিন ধরে প্রায় প্রতিদিন আদালতে সময় পার করতে হচ্ছে। ফলে অধিকাংশ মানুষের চাকুরি নেই, বন্ধ হয়ে গেছে ব্যবসা। ১ লাখ ৫০ হাজারের ওপরে মিথ্যা মামলায় প্রায় ৫০ লাখ নেতাকর্মীর মধ্যে কেউ কারাগারে কেউ মানবেতর অবস্থায় ঘরছাড়া—বাড়িছাড়া হয়ে জীবনযাপন করছে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি, সীমান্ত অরক্ষিত, ভিন্ন রাষ্ট্রের সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশকে অভয়ারণ্য মনে করা, তাদের দ্বারা ব্যাংক লুট, থানা আক্রমণ এখন বাংলাদেশে নিত্যদিনের ছবি। দখলদার সরকার নিজেদের ঘরে ভোট ডাকাতিসহ অহরহ রাষ্ট্রীয় অর্থবিত্ত ডাকাতি করতে পারে, অথচ নিজের ঘরকে বহিঃশত্রু থেকে রক্ষা করতে পারে না। তিনি আরও বলেন, এইবারের ঈদ যাত্রায় কেবল ঢাকা ছাড়তেই ৯৮৪ কোটি টাকা অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হবে যাত্রীদের। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় বাসের টিকিটের দাম আকাশছেঁায়া। বাস পরিবহন খাত আপাদমস্তক অনিয়ম দুর্নীতির কারখানা। ঈদ উপলক্ষে চলছে সড়কে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি। শ্রমিকলীগ—ছাত্রলীগের কালোবাজারি টিকিটের ব্যবসা নামে চলছে লুটতরাজ। ঈদ যাত্রায় এখন ব্ল্যাক টিকিটের চড়া দাম। জীবনের প্রতিশব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভোগান্তি আর হয়রানি। অথচ সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলছেন, ‘সড়ক—মহাসড়কে কোন যানজট বা হয়রানী নেই। মানুষ নির্বিঘ্নে বাড়ী যেতে পারছে।’ এ যেন ডামি দায়িত্বশীলের মুখে দায়িত্বজ্ঞানহীন তামাশার মন্তব্য, এ যেন জনগণের সাথে এক ডাহা মিথ্যাবাদীর ইয়ার্কি—তামাশা। কিন্তু বাস্তবতা হলো—ঈদের প্রাক্কালে বিভিন্ন রুটে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটে ঘরমুখো যাত্রীরা এক দুর্বিষহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে। বিমানের ভাড়া কল্পনাতীত। ট্রেনে টিকিট পাচ্ছে না মানুষ। ট্রেনের টিকিট কাটার প্রক্রিয়াকে দিন দিন জটিলতর করা হচ্ছে। এতে ধীরে ধীরে এলিট শ্রেণির বাহনে পরিণত হচ্ছে রেলওয়ে।বিএনপির এই নেতা বলেন, যারা তুলনামুলকভাবে পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক মানুষ, তারা আসলে অনলাইনের এই জটিল ব্যবস্থা বুঝতে সক্ষম নয়। ফলে একটা নিম্ন—মধ্যম আয়ের বিপুল সংখ্যক মানুষ ট্রেনে চড়ারই অধিকার হারিয়ে ফেলছে। অথচ এরাই ছিল ট্রেনের প্রকৃত যাত্রী। বিএনপির এই নেতা বলেন, তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ৬০ শতাংশ কারখানার শ্রমিকেরা গত মার্চ মাসের বেতন গতকাল সোমবার বিকেল পর্যন্ত পাননি। ঈদের উৎসব ভাতা বা বোনাস পাননি ১৪ শতাংশ কারখানার শ্রমিক। শ্রমিকরা বেতন না পেয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে। ওদের ঈদের আনন্দ চোখের পানিতে ভাসছে। সারাদেশে গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ সংকট চরমে। শুধু রাজধানীতেই ৫ থেকে ৬ ঘন্টা লোডশেডিং, আর গ্রামে—গঞ্জে ১৮ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে না। তাহলে বিদুৎ খাতের লাখ লাখ কোটি টাকা গেল কোথায়?এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ।