নিউজ ডেস্ক,টিভি নাইনটিন অনলাইন
ঢাকাঃ সোমালিয়া উপকূলে দেশটির জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশের পতাকাবাহী বাণিজ্যিক জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর অদূরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেভাল ফোর্সের একটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১২টা ২০ মিনিটে ইইউ নেভাল ফোর্সের এক্স হ্যান্ডেলে (সাবেক টুইটার) এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।ইইউ নেভাল ফোর্সের এক্স হ্যান্ডেলে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের তিনটি স্থিরচিত্র এবং একটি ভিডিওচিত্রও প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে দেখা যায়, ইইউ নেভাল ফোর্সের অপারেশন আটলান্টার মোতায়েন করা যুদ্ধজাহাজটি বাংলাদেশের জিম্মি জাহাজের কয়েক নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছে। যুদ্ধজাহাজ থেকে একটি হেলিকপ্টার জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজের ওপর দিয়ে উড়ে যেতেও দেখা যায়।একটি ছবিতে দেখা যায়, ইইউ নেভাল ফোর্সের দুজন সদস্য যুদ্ধজাহাজটি থেকে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের দিকে তাকিয়ে আছেন।গত ১২ মার্চ ২৩ জন নাবিকসহ বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ জিম্মি করে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। সর্বশেষ অবস্থান অনুযায়ী জাহাজটি বর্তমানে সোমালিয়ার গদভজিরান উপকূল থেকে দেড় নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করে রাখা হয়েছে।এমভি আবদুল্লাহর অদূরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজটি এমন সময়ে মোতায়েন করা হলো, যার এক দিন আগে দস্যুরা জিম্মি জাহাজটির মালিকপক্ষের সঙ্গে প্রথমবার যোগাযোগ করেছে। এরপর মালিকপক্ষ জাহাজসহ নাবিকদের মুক্ত করতে দস্যুদের সঙ্গে সমঝোতার কাজ শুরু করেছে।এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনী যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করলেও এমভি আবদুল্লাহতে কোনো অভিযানের কথা জানায়নি। এর আগে ইইউ নেভাল ফোর্স উদ্ধার অভিযানের কথা বললেও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সম্মতি দেওয়া হয়নি। নাবিকদের নিরাপদে মুক্ত করতে সামরিক অভিযানে সম্মতি দিচ্ছে না এমভি আবদুল্লাহর মালিকপক্ষ।ইইউ নেভাল ফোর্স যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করলেও বাংলাদেশের সম্মতি ছাড়া বাংলাদেশি জাহাজে অভিযান চালানোর সুযোগ নেই। বাংলাদেশ সরকার ও জাহাজ মালিকপক্ষ এখন পর্যন্ত জিম্মি জাহাজে সামরিক অভিযানের সম্মতি দেয়নি। তবে ইইউ নেভাল ফোর্সের যুদ্ধজাহাজটি মোতায়েনের ফলে দস্যুদের ওপর মনস্তাত্ত্বিক চাপ তৈরি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে জিম্মি সমস্যার দ্রুত সমাধান হতে পারে।হুতিদের হামলায় সুবিধা সোমালিয়ার জলদস্যুদের : সোমালিয়ার জলদস্যুরা চলতি শতকের শুরুতে ছিল এক বড় আতঙ্কের নাম। গত দশকে এর ব্যাপকতা কমে এলেও একেবারে বন্ধ হয়নি। তবে নব্বইয়ের দশক থেকে গত দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত এর ভয়াবহতা ছিল ব্যাপক। আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা ও ওই পথ এড়িয়ে যাওয়ার কারণে পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়েছিল। সম্প্রতি গাজা যুদ্ধের কারণে জাহাজগুলো ঘুরপথে যাওয়ার কারণে সুবিধা হয়েছে সোমালিয়ার ওই দস্যুদের।ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদসু্যুরা যখন বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর সামনে সংকেত পাঠায়, তখন জাহাজটি থেকে জরুরি সংকেত পাঠানো হয়েছিল সহায়তার জন্য। কিন্তু কেউ সাড়া দেয়নি। শেষমেশ দস্যুরা ফাঁকা গুলি ছুড়তে ছুড়তে জাহাজের ক্যাপ্টেন ও সেকেন্ড অফিসারকে আটক করে। জাহাজের মালিককে প্রধান ক্যাপ্টেন আতিক উল্লাহ খান অডিওবার্তায় এই ঘটনাপ্রবাহই জানান। জাহাজের সব ক্রুর ফোন জলদস্যুরা নিয়ে নেওয়ার আগে আতিক উল্লাহ খান জানান, ‘সৌভাগ্যবশত আল্লাহর ইচ্ছায় কারও কোনো ক্ষতি হয়নি।সপ্তাহখানেক পর জাহাজটিকে নোঙর করানো হয় সোমালিয়ার উপকূলে। বাংলাদেশি জাহাজের এমন বিপাকে পড়ার ঘটনায় আন্তর্জাতিক শিপিং যোগাযোগের কর্তাব্যক্তিরা নতুন করে দস্যুতা বিপদ বাড়ার আতঙ্কে রয়েছেন।ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর গাজা আগ্রাসনের কারণে লোহিত সাগর ও তার আশপাশের সামুদ্রিক এলাকায় ইয়েমেনের শিয়া মতাবলম্বী হুতি বিদ্রোহীদের হামলা বেড়েছে। সে কারণে এমনিতেই পণ্যবাণিজ্যে প্রতিবন্ধকতা দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থায় দস্যুদের তৎপরতা নতুন করে সংকট ঘনীভূত করবে।পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের সূত্র জানিয়েছে, গত নভেম্বরের পর ২০টিরও বেশি জাহাজে দস্যুতার চেষ্টা করা হয়েছে। এ কারণে অস্ত্রধারী রক্ষীদের নিয়োগ করতে গিয়ে ব্যয় বেড়েছে, বীমা কাভারেজ বেড়েছে এবং মুক্তিপণের ভীতিও বেশ জোরালো হয়েছে। সোমালিয়ার জলদস্যুদের দুই সদস্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করেছে, হুতিদের হামলা তাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। ওইসব হামলার কারণে আন্তর্জাতিক জাহাজ যোগাযোগের যে বিশৃঙ্খল অবস্থা, তার সুযোগ নিয়ে এক দশক পর ফিরে এসেছে দস্যুতার প্রেক্ষাপট।দস্যুদের অর্থায়নকারী ইসমাইল (ছদ্মনাম) জানান, তিনি গত ডিসেম্বরেও একটি জাহাজ আটক করতে অর্থায়ন করেছিলেন। নতুন সংকট সম্পর্কে তিনি চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন। তার ভাষ্য, সোমালিয়ার উপকূল ব্যবহার করে যেসব জাহাজ চলাচল কমিয়ে দিয়েছিল, তারা এখন আবারও এই পথে আসছে। এর ফলে তারা সেই সুযোগটি নিচ্ছেন। সোমালিয়ার পুন্টল্যান্ড অঞ্চলের একটি জায়গা হুল অ্যানড থেকে কথা বলছিলেন ইসমাইল। এই জায়গায় রুয়েন নামের জাহাজটিকে কয়েক সপ্তাহ আটক করে রাখা হয়েছিল। জাহাজ মালিকরা জানান, ২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ব্যাপক ঝুঁকিপূর্ণ ছিল এই পথ। অবশ্য বর্তমানে আগের মতো ব্যাপক ঝুঁকিতে এটি নেই। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সমস্যাটি এখন আবারও বাড়তে পারে।সোমালিয়ার প্রেসিডেন্ট হাসান শেখ মোহাম্মদ বলেন, ‘আমরা এটিকে অঙ্কুরেই থামাতে না পারলে, ভবিষ্যতে অতীতের জায়গায় চলে যেতে পারে এই সমস্যা।’