নিউজ ডেস্ক,টিভি নাইনটিন অনলাইন
ঢাকাঃ রাজধানীর বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডের পর নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। ঢাকার রেস্টুরেন্ট গুলোতে প্রতিদিনই অভিযান চালাচ্ছে। রেস্টুরেন্টগুলোতে ঝুঁকিপূর্ণ সিলিন্ডার ও অনিয়ম তদারকি করতে একযোগে মাঠে নেমেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিসসহ সরকারি বেশ কয়েকটি সংস্থা। এতে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে রেস্টুরেন্ট মালিকদের মধ্যে। দেখা দিয়ে রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় ধস। অভিযান এড়াতে অনেকেই বন্ধ রেখেছে রেস্টুরেন্ট।গেল মঙ্গলবার রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় সিটি করপোরেশনের অভিযানের খবর পেয়ে রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে পালিয়ে যান অনেক মালিক। এ সময় ‘উন্নয়ন কাজের জন্য প্রতিষ্ঠানটি সাময়িক বন্ধ’ এমন ব্যানার ঝুলতে দেখা যায় এসব রেস্টুরেন্টে। ওই দিন সিটি করপোরেশনের অভিযান দল কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে অভিযান চালাতে আসে। কিন্তু সেখানে আগে থেকেই একটি ব্যানার ঝুলিয়ে রেস্টুরেন্ট বন্ধ রেখেছে কাচ্চি ভাই কর্তৃপক্ষ। একই ভবনে ‘সিরাজ চুইগোস্ত’ নামে একটি রেস্টুরেন্টেও একই ব্যানার টানানো দেখা যায়। যেখানে লেখা- ‘রেস্টুরেন্টের উন্নয়ন কাজের জন্য প্রতিষ্ঠানটি সাময়িক বন্ধ’।এর আগে ওই এলাকার বহুতল একটি ভবনে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ম্যাজিস্ট্রেট। সাত তলা এই ভবনের প্রতিটি তলায়ই রেস্টুরেন্ট ছিল। পরে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় পুরো ভবন সিলগালা করে দেওয়া হয়। ওই সময় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে খিলগাঁও এলাকার অভিযানে এসেছিলাম। খবর পেয়ে সকাল থেকে রেস্টুরেন্ট বন্ধ রেখেছে। তারা রেস্টুরেন্টগুলোর সামনে টাঙিয়ে দিয়েছে, উন্নয়ন কাজের জন্য রেস্টুরেন্ট আপাতত বন্ধ আছে। রেস্টুরেন্টগুলো বন্ধ থাকায় আমরা খিলগাঁও এলাকায় আজ আর অভিযান পরিচালনা করতে পারছি না।এছাড়া ওই এলাকায় বিভিন্ন আবাসিক ভবনে গড়ে ওঠা রেস্তোরাঁয় অভিযান চালায় রাজউক। এ সময় সুলতানস ডাইন, নবাবী ভোজ, রোস্টার ক্যাফে ও পিজ্জা মাস্টান নামে চারটি রেস্টুরেন্ট সিলগালা করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের সনদ না থাকায় সুইস বেকারি ও ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার শপিংমলের মালিককে জরিমানা করা হয়। অভিযানে কোনো রেস্টুরেন্টেই গণমাধ্যমকর্মীদের ঢুকতে দেননি রাজউকের কর্মকর্তারা।একই দিনে রাজধানীর বেইলি রোডের একটি ভবনের নিচতলায় নবাবী ভোজ রেস্টুরেন্টে অভিযানের খবর পেয়ে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রেস্তোরাঁ বন্ধ করে পালিয়ে যান। পাশেই সুলতানস ডাইন রেস্টুরেন্টটিও বন্ধ দেখা যায়। সেখানে একটি নোটিশে লেখা রয়েছে, ‘রেনোভেশন কাজের জন্য সাময়িকভাবে সুলতানস ডাইন বন্ধ রয়েছে’। রেস্টুরেন্ট দুটি সিলগালার সময় মালিকপক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি।অভিযান পরিচালনাকারী রাজউকের অঞ্চল-৭-এর পরিচালক মনির হোসেন হাওলাদার বলেন, সুলতানস ডাইনসহ তিনটি রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষের কাছে কাগজপত্র চাওয়া হয়। কিন্তু তারা সরবরাহ করতে না পারায় সিলগালা করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র সরবরাহ করলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যথাযথ অনুমতি না থাকায় নবাবী ভোজ রেস্টুরেন্টটি সিলগালা করা হয়েছে। অগ্নিনিরাপত্তা সংক্রান্ত কাগজপত্রের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ক্যাপিটাল সিরাজ সেন্টার শপিংমলের মালিককে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থায় না থাকায় সুইস বেকারিকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।এদিকে গত তিন দিনে হোটেল-রেস্তোরাঁয়, ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার, দোকান ও কেমিকেল গোডাউনে শুধুমাত্র ডিএমপি ১ হাজার ৩৪৭টি অভিযান পরিচালনা করেছে। এসব অভিযানে এখন পর্যন্ত ৮৭২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়াও মামলা হয়েছে ২০টি। বুধবার (৬ মার্চ) ডিএমপির মিডিয়া বিভাগ জানিয়েছে, গত ৩ মার্চ থেকে তাদের অভিযান শুরু হয়েছে। সেদিন তারা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ২৭৫টি হোটেল ও রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়েছে। এ সময় নানা অসংগতি পেয়ে পাঁচটি মামলা হয় ও ৩৭৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। আর তাৎক্ষণিক সাজা দেওয়া হয় ২০৪টি প্রতিষ্ঠানকে। তবে প্রথম দিন অভিযানে কোনো ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার ও গোডাউন পায়নি অভিযান চালানো টিমগুলো।পরদিন ৪ মার্চ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ৫৬২টি হোটেল ও রেস্তোরাঁয় অভিযান চালানো হয়। অভিযানের সময় ৪৫৫টি হোটেল রেস্তোরাঁয় ১০৪টি ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার ও তিনটি কেমিকেল গোডাউন পাওয়া যায়। ফলে মামলা হয় ৫টি এবং বিভিন্ন অপরাধে ২৭০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযানে ২২৯টি প্রতিষ্ঠানকে তাৎক্ষণিক সাজা ও জরিমানা করা হয়।সর্বশেষ মঙ্গলবার ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ৫১০টি হোটেল ও রেস্তোরাঁয় অভিযান চালানো হয়। অভিযানের সময় ৪০২টি হোটেল রেস্তোরাঁয় ১০৩টি ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার ও পাঁচটি কেমিকেল গোডাউন পাওয়া যায়। ফলে মামলা হয় ১০টি এবং বিভিন্ন অপরাধে ২২৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। অভিযানে ১৯২টি প্রতিষ্ঠানকে তাৎক্ষণিক সাজা ও জরিমানা করা হয়। এছাড়াও ডিএমপি জানায়, গত তিন দিনে ১ হাজার ১৩২টি হোটেল ও রেস্তোরাঁয় তারা অভিযান চালিয়েছে। এ সময় সেগুলো থেকে ২০৭টি ঝুঁকিপূর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার জব্দ করা হয় ও ৮টি কেমিকেল গোডাউনের সন্ধান পান তারা।উল্লেখ্য, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের নিচতলায় আগুন লাগে। আগুন ছড়িয়ে যায় পুরো ভবনে। ভয়াবহ এই আগুনে মারা গেছেন ৪৬ জন। এ ঘটনায় ১ মার্চ পুলিশ রমনা থানায় মামলা করে। এরপর থেকেই রাজধানীজুড়ে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন।