বাংলাদেশ ০৯ ডিসেম্বর ২০২৫

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে চিকিৎসকদের স্বস্তি

post

নিউজ ডেস্ক
টিভি নাইনটিন অনলাইন

ঢাকাঃ
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত আছে। কিছুটা উন্নতি হচ্ছে। তবে তা খুবই ধীরে। চিকিৎসকরা বলছেন, খালেদা জিয়ার বয়স প্রায় আশি। দ্রুত সেরে না ওঠায় বয়স বড় একটা ফ্যাক্টর। এছাড়া এই বয়সে নানা রোগে আক্রান্ত তিনি। কারাগারে যাওয়ার পর থেকে সময়মতো সঠিক চিকিৎসা পাননি। খালেদা জিয়ার নতুন করে শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে না। এটাই চিকিৎসকদের কাছে স্বস্তির বিষয়। এভার কেয়ার হাসপাতালে সর্বোচ্চ চিকিৎসা পাচ্ছেন। তবে উন্নত চিকিৎসায় কবে নাগাদ বিদেশে নেওয়া হবে তা বলতে পারছে না মেডিকেল বোর্ড।মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক সময়ের আলোকে বলেন, ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) উন্নতি হচ্ছে কিছুটা। তবে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে বলা যাবে না। বয়সজনিত কারণটা অনেক বড় হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই বয়সে সব চিকিৎসা একসঙ্গে করতে গেলেও উচ্চ ঝুঁকি থেকে যায়। এই দফায় ম্যাডামের চেস্ট ইনফেকশনটা (বুকে সংক্রমণ) বড় ভুগিয়েছে। এটা থেকে সেরে উঠতেই ওনার অনেক ধকল যাচ্ছে। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার নতুন করে শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে না। এটাই চিকিৎসকদের কাছে ইতিবাচক দিক। উন্নত চিকিৎসায় উনাকে শিগগিরই দেশের বাইরে নেওয়ার পরিকল্পনা নেই মেডিকেল বোর্ডের। এভারকেয়ার হাসপাতালে পৃথিবীর সেরা চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

এর ব্যাখ্যায় এই চিকিৎসক বলেন, বিদেশের হাসপাতালে চাইলে তৎক্ষণাৎ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব হয় না। চাইলে যথাসময়ে পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া যায় না। এগুলো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার দেশের বাইরে। আর দেশে উনি একজন ‘খালেদা জিয়া’। এটাই যথেষ্ট। দেশের শীর্ষ বিজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে মেডিকেল বোর্ডে যুক্ত আছেন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল।  তাদের সমন্বয়ে বোর্ড খালেদা জিয়ার চিকিৎসার তদারকি করছে। বিএনপি চেয়ারপারসন আগের চেয়ে কিছুটা ভালো আছেন জানিয়ে তার একান্ত সচিব এবিএম আব্দুস সাত্তার মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সময়ের আলোকে বলেন, উনার অবনতি হয়নি। এটাই আমাদের কাছে শুকরিয়া। আমি নিয়মিত হাসপাতালে যাচ্ছি। কিছু নিয়ম কানুনের কারণে সিসিইউ’র ভেতরে যাওয়া যায় না। বাইরে চিকিৎসকদের কাছ থেকে খোঁজখবর নিই।বিএনপি চেয়ারপরসন খালেদা জিয়া গত ২৩ নভেম্বর থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ৮০ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘ দিন থেকে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসের পাশাপাশি কিডনি, লিভার, ফুসফুস, হৃদযন্ত্র, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। পরে অবস্থার অবনতি হলে গত ২৭ নভেম্বর তাকে নেওয়া হয় ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ)। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত দেশি-বিদেশি দুই ডজনের মতো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড প্রতিদিন বৈঠক করে চিকিৎসায় পরিবর্তন আনছেন। এদিকে সোমবার একজন চিকিৎসক সময়ের আলোকে জানান, লিভার সমস্যার নিয়ন্ত্রণে থাকলেও খালেদা জিয়া কিনডি জটিলতায় বেশ ভুগছেন। কিডনির ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বর্ডার লাইন (ঝুঁকিপূর্ণ সীমা) অতিক্রম করেছে বেশ আগেই। এট নিয়ন্ত্রণে রাখাই কষ্ট হচ্ছে। এখানে বয়স একটা বড় ফ্যাক্টর। প্রতিনিয়ত ডায়ালাইসিস দিতে হচ্ছে। ডায়ালাইসিস বন্ধ করলেই কিনডির অবস্থা অবনতি হয়। তিনি বলেন, সিসিইউতে নেওয়ার পর থেকে প্রতিদিন নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। প্যারামিটারগুলো খারাপ আসছে না, তবে একেবারে ঝুঁকিমুক্তও হচ্ছেন না। সিসিইউতে অ্যাডভান্স টিট্রমেন্ট দেওয়া হচ্ছে। জানা গেছে, দেশে ফেরার পর মেডিকেল বোর্ডের বৈঠকে সশরীরে অংশ নেন খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান। তিনি বৈঠক শেষ করে বাসায় ফেরেন। বলা যায় দিনের বেশিরভাগ সময় হাসপাাতলে শ্বাশুড়ির শয্যাপাশে কাটান। বাসায় থাকার সময়ও টেলিফোনে টাইম টু টাইম উনি তার শাশুড়ির স্বাস্থ্যের খোঁজখবর রাখছেন। চিকিৎসার বিষয়গুলোর তিনি সমন্বয় করেন। ডা. জুবাইদা বেশ কয়েকদিন দেশেই থাকবেন।মেডিকেল বোর্ডের আরেকজন সদস্য জানান, চিকিৎসকদের পরামর্শে গুলশানের বাসা থেকে প্রতিদিন খাবার পাঠানো হচ্ছে। সার্বক্ষণিক খালেদা জিয়ার সঙ্গে আছেন পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা, সৈয়দা শামিলা রহমান, গৃহপরিচারিকা ফাতেমা এবং স্টাফ রূপা আক্তার। বিএনপি চেয়ারপারসনের ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার, ভাইয়ের স্ত্রী কানিজ ফাতেমা সার্বক্ষণিক পাশে আছেন। তাদের সঙ্গে মাঝেমধ্যে কথা বলার চেষ্টা করেন খালেদা জিয়া। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে এভারকেয়ার হাসপাতালের খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে।

মঙ্গলবারও আসেনি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স

উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিতে ভাড়া করা এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি মঙ্গলবারও আসেনি। এয়ার অ্যাম্বুলেন্স অপারেটরের আবেদনের প্রেক্ষিতে সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার সকালে তাদের ঢাকায় নামার অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু এয়ার অ্যাম্বুলেন্স অপারেটর সোমবার বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কাছে মঙ্গলবারের ওই স্লট বাতিল করার আবেদন করেছে বলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন।এ নিয়ে পঞ্চমবারের মতো পেছাল খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা। বিএনপি নেতারা বলছেন, তার লন্ডন যাত্রার বিষয়টি নির্ভর করছে তার শারীরিক অবস্থার ওপর। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন তার চিকিৎসক দল।চিকিৎসার জন্য কাতার আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে গত শুক্রবার ভোরে তাকে লন্ডনে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল দলের তরফে। পরে ‘কারিগরি ত্রুটির কারণে’ সেই অ্যাম্বুলেন্স আসতে বিলম্ব হওয়ার কথা জানায় দলটি। কিন্তু শুক্রবার কাতার দূতাবাস থেকে বলা হয়, তাদের আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স আসছে না। তার বদলে কাতারের আমির জার্মানি থেকে ভাড়া করে একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠাবেন। সেই অ্যাম্বুলেন্স কবে আসবে কিংবা খালেদা জিয়াকে কবে লন্ডনে নেওয়া হবে, তা বিএনপির পক্ষ থেকে এখনও জানানো হয়নি।

আরো পড়ুন!

Sidebar Banner
Sidebar Banner