নিউজ ডেস্ক
টিভি নাইনটিন অনলাইন
ঢাকাঃ আসছে সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য আরও ৩৬ আসনে দলীয় প্রার্থীর
নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের
কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন দলটির মহাসচিব
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর আগে গত ৩ নভেম্বর বিএনপি প্রথম পর্যায়ে ২৩৭ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা
করেছিল। এক দিন পরই মাদারীপুর-১ আসনের ঘোষিত প্রার্থী কামাল জামাল মোল্লার
নাম স্থগিত করে দলটি। এবার সেই আসনে নতুন প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। এর মধ্য
দিয়ে ২৭২ আসনে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করল বিএনপি।বাকি ২৮ আসনের তালিকা যথাসময়ে ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন দলের
মহাসচিব। তিনি বলেন, আমাদের সমমনা মিত্র যারা আছেন, তাদের এবং দুই-একটা
দলীয় প্রার্থীর সিদ্ধান্ত আসতে পারে। সেগুলো আমরা আরও পরে ঘোষণা করব।৩৬ প্রার্থী– ঠাকুরগাঁও-২ আসনে বিএনপি বেছে নিয়েছে ডা. আব্দুস সালামকে,
যিনি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সাবেক মহাসচিব। দিনাজপুর-৫
আসনে একেএম কামরুজ্জামান, নওগাঁ-৫ আসনে জাহিদুল ইসলাম ধলু, নাটোর-৩ আসনে
মো. আনোয়ারুল ইসলাম, সিরাজগঞ্জ-১ আসনে সেলিম রেজাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
২০১৮ সালে সিরাজগঞ্জ-১ আসনে জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপাকে বেছে নিয়েছিল
বিএনপি।
যশোর-৫ আসনে এম ইকবাল হোসেন, নড়াইল-২ আসনে মনিরুল ইসলাম, খুলনা-১ আসনে আমীর এজাজ খানকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত খুলনা-১ আসনে জামায়াতে ইসলামী একজন সংখ্যালঘু নেতাকে মনোনয়ন দিয়েছে। পটুয়াখালী-২ আসনে শহীদুল আলম তালুকদার, বরিশাল-৩ আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি জয়নুল আবেদীনকেই প্রার্থী করা হয়েছে।
ঝালকাঠি-১ আসনে রফিকুল ইসলাম জামাল, টাঙ্গাইল-৫ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু মনোনয়ন পেয়েছেন।
ময়মনসিংহ-৪ আসনে আবু ওয়াহাব আখন্দ ওয়ালিদ, কিশোরগঞ্জ-১ আসনে মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে শেখ মজিবর রহমান ইকবাল, মানিকগঞ্জ-১ আসনে এসএ জিন্নাহ কবির, মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনে মো. কামরুজ্জামান, ঢাকা-৭ আসনের হামিদুর রহমান, ঢাকা-৯ আসনে হাবিবুর রশীদ ও ঢাকা-১০ আসনে শেখ রবিউল আলম মনোনয়ন পেয়েছেন।
ঢাকা-১৮ আসনে ধানের শীষ চেয়েছিলেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর যমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ। যিনি নভেম্বরের শুরুতে বিএনপিতে যোগ দেন। শেষ পর্যন্ত ওই আসনে মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম জাহাঙ্গীর হোসেনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
গাজীপুর-১ আসনে কালিয়াকৈরের সাবেক পৌর মেয়র মো. মজিবুর রহমান, রাজবাড়ী-২ আসনে মো. হারুন অর রশীদ, ফরিদপুর-১ খন্দোকার নাসিরুল ইসলাম, মাদারীপুর-১ আসনে নাদিরা আখতার, মাদারীপুর-২ আসনে জাহান্দার আলী খান, সুনামগঞ্জ-২ আসনে নাসির হোসেন চৌধুরী ও সুনামগঞ্জ-৪ আসনে নুরুল ইসলাম মনোনয়ন পেয়েছেন।
সিলেট-৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী কে হচ্ছেন তা নিয়ে নানা আলোচনা চলছিল। শেষ পর্যন্ত সেখানে মনোনয়ন পেয়েছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বিএনপিতে যোগ দিয়েই হবিগঞ্জ-১ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি এ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন। সেবার তিনি ছিলেন গণফোরামে, জাতীয় ঐকফ্রন্ট থেকে নির্বাচন করায় বিএনপির প্রতীক নিয়ে লড়ার সুযোগ পেয়েছিলেন।
কুমিল্লা-২ আসনে সেলিম ভুঁইয়া, চট্টগ্রাম-৩ আসনে সাবেক এমপি মোস্তফা কামাল পাশাকে মনোনয়ন দিয়েছে বিএনপি। যদিও ১৭ বছরে তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না। এমনকি ২০১৮ সালে তিনি ঘোষণা দিয়ে রাজনীতি থেকে অবসরের কথা বলেছিলেন। ৮০ বছরের বেশি বয়স্ক সাবেক এই এমপিকে নিয়ে তৃণমূলে ক্ষোভ রয়েছে। চট্টগ্রাম-৬ আসনে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৯ আসনে মো. আবু সুফিয়ান, চট্টগ্রাম-১৫ আসনে নাজমুল মোস্তফা আমীন ও কক্সবাজার-২ আসনে আলমগীর মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ মনোনয়ন পেয়েছেন।
জোটের তিন নেতা বঞ্চিত
ঘোষিত ৩৬ আসনের মধ্যে বিএনপির দীর্ঘদিনের মিত্র তিন দলের তিন নেতাকে বঞ্চিত
করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২ দলীয় জোটের শরিক ও জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ
এহসানুল হুদা কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে নির্বাচন করার জন্য কাজ করছিলেন। দল
থেকে এর আগে তার জন্য চিঠিও দিয়েছিল। যাতে বিএনপির নেতাকর্মীদের নির্দেশনা
দেওয়া হয়েছিল এহসানুল হুদাকে সহযোগিতার জন্য।
নড়াইল-২ আসনে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকে তিনি ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন। এবারও এই আসনে তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে মনে করেছিলেন এনপিপি নেতাকর্মীরা। তবে এই আসনে বিএনপি নেতা মনিরুল ইসলামকেই বেছে নিয়েছে দলটি।
একইভাবে বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ঝালকাঠি-১ আসন থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। যদিও ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি পিরোজপুর-২ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন। তাঁর বাড়িও এই জেলায়। তবে এবার তিনি ঝালকাঠি-১ আসন থেকে মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
জোটের প্রার্থী হতে পারেন যারা
পিরোজপুর-১ আসনে জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার,
বগুড়া-২ আসনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ঢাকা-১৭ আসনে
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ,
লক্ষ্মীপুর-১ আসনে বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, জাতীয়
সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব অসুস্থ হওয়ায়
লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে তাঁর স্ত্রী তানিয়া রব লড়তে পারেন।
এ ছাড়া ঢাকা-১৩ আসনে এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, চট্টগ্রাম-১৪ আসনে এলডিপির চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদের ছেলে অধ্যাপক ওমর ফারুক, কুমিল্লা-৭ আসনে দলটির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ। পটুয়াখালী-৩ আসনে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর এবং ঝিনাইদহ-২ আসনে দলটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানের নাম আলোচনায় আছে।








