বাংলাদেশ ২০ আগস্ট ২০২৫

জুলাই সনদের বিরোধ নিষ্পত্তি কোন পথে

post

নিউজ ডেস্ক
টিভি নাইনটিন অনলাইন

ঢাকাঃ
রাজনীতিতে বহুল আলোচিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’-এর সমন্বিত পূর্ণাঙ্গ খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে। তবে এ সনদকে সংবিধানের ওপরে স্থান দেওয়া না-দেওয়ার বিষয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য দিয়ে আসছে রাজনৈতিক দলগুলো। এ ক্ষেত্রে বিএনপির বিপরীতে অবস্থান জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির। বিএনপি মনে করে, জুলাই সনদকে সংবিধানের ওপরে জায়গা দেওয়ার সুযোগ নেই।এ ছাড়া নির্বাচিত সংসদে সব কিছুর বাস্তবায়ন হবে। আর ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে গণপরিষদ নির্বাচন বা গণভোটের মাধ্যমে সনদের বৈধতা জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি।জুলাই সনদের চূড়ান্ত হওয়া খসড়ায় ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলোর কার কী অবস্থান, তা সংযোজন করা হয়েছে। খসড়াটি গত শনিবার ৩০ রাজনৈতিক দল এবং জোটের কাছে পাঠিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। ২০ আগস্টের (আজ) মধ্যে মতামত জানাতে বলা হয়েছে। খসড়ায় বলা হয়েছে, সংবিধান ও আইনের ওপর প্রাধান্য পাওয়া সনদ নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না আদালতে। থাকছে আইনি ভিত্তিও। পটভূমিসহ সনদটি ছয়টি ভাগে বিভক্তÑপটভূমি, ছয় সংস্কার কমিশন গঠন, ঐকমত্য  কমিশন গঠন, কমিশনের কার্যক্রম, যে ৮৪ সুপারিশে রাজনৈতিক দলগুলোর নোট অব ডিসেন্টসহ ঐকমত্য হয়েছে সেগুলো এবং বাস্তবায়নের আট দফা অঙ্গীকারনামা রয়েছে।এদিকে জুলাই সনদ নিয়ে জামায়াত ও এনসিপির প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত সত্ত্বেও কিছু কিছু বিষয়ে সংসদ নির্বাচনের স্বার্থে জুলাই জাতীয় সনদে কিছু বিষয়ে ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। একই সঙ্গে সংসদ নির্বাচন বাধাগ্রস্ত বা বানচাল হতে পারেÑএমন সিদ্ধান্ত থেকেও বিরত থাকবে দলটি। গত সোমবার রাতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটি বৈঠকে এমন আলোচনা হয়েছে। দলটির নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে এ তথ্য।সূত্র জানায়, বৈঠকে জুলাই জাতীয় সনদের পূর্ণাঙ্গ সমন্বিত খসড়া নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার-বিশ্লেষণ করছে বিএনপি। বিশেষ করে বিএনপির ১০টি প্রস্তাবে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ নিয়ে আবারও আলোচনা হয়। এর মধ্যে সংসদে উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার কিছু ভারসাম্য, প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান একই ব্যক্তি থাকতে পারবেন না এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনপ্রণালি-এসব বিষয়ে ছাড় দেওয়া হতে পারে। এ তিন ইস্যুতে নোট অব ডিসেন্ট দেওয়ার আগের অবস্থানও পর্যালোচনা করা হয়। এ ছাড়া আরও কিছু কিছু বিষয় পর্যালোচনা করছে বিএনপির হাইকমান্ড। গতকাল রাতে আবারও বৈঠক করেন দায়িত্বশীল নেতারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জাতীয় সনদের চূড়ান্ত খসড়া বিস্তারিত বিষয় তুলে ধরেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা বলেন, সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকারনামায় জুলাই সনদকে সংবিধানের ওপরে স্থান দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো ডকুমেন্ট বা নথির অবস্থান সংবিধানের ওপরে হতে পারে না। অর্থাৎ জুলাই সনদকে সংবিধানের ওপরে জায়গা দেওয়ার সুযোগ নেই। যদি এমনটা করা হয়, তা হলে সেটা ভবিষ্যতের জন্য খারাপ নজির হবে। এ ছাড়া জুলাই সনদ নিয়ে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না বলে অঙ্গীকারনামায় যে কথা বলা হয়েছে, সেটাও গ্রহণযোগ্য নয়। দলটি মনে করে, এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা প্রয়োজন।সূত্র আরও জানায়, বৈঠকে জুলাই সনদের খসড়ার মতামত দেওয়ার জন্য সালাহউদ্দিন আহমেদসহ তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। ২০ আগস্ট জুলাই সনদের খসড়া জমা দেওয়ার শেষ দিন হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে সময় বাড়িয়েছে দলটি। আগামীকাল বৃহস্পতিবার কমিশনে চূড়ান্ত মতামত জমা দেবে বিএনপি। এ ছাড়া সমমনাদের কাছ থেকেও মতামত নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে। এরই অংশ হিসেবে গতকাল রাতে গুলশানে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বৈঠক বসে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা।বৈঠক সূত্র আরও জানিয়েছে, জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ খসড়া নিয়ে সামগ্রিকভাবে খুব বেশি আপত্তি নেই বিএনপির। জুলাই সনদের চূড়ান্ত খসড়ার সূচনা ও ২, ৩, ৪ দফায় আপত্তি দলটির। সনদে উত্থাপিত ৮৪ দফার মধ্যে যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন পদ্ধতি এবং যেসব বিষয়ে দলগুলো ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে, সেগুলোর সমাধানের পথ কী হবে, তা নিয়ে ঐকমত্য কমিশনে দলীয় মতামত তুলে ধরবে।জুলাই সনদের বাস্তবায়ন ও আইনি ভিত্তি নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির ২ জন সদস্য বলেন, আগের জুলাই সনদের খসড়ায় ২ বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন কথা থাকলেও এবারের খসড়া তা নেই। সাংবিধানিক ও আইনি ভিত্তি নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না এমন কথাও এবারের জুলাই সনদের খসড়া রয়েছে। সংবিধানের ওপরে সনদের স্থান দেওয়া হলে তা ঠিক হবে না।মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, জুলাই সনদে অনেক বিষয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে। সেগুলোর অনেক বিষয়ই অধ্যাদেশসহ সরকারের নির্বাহী আদেশে বাস্তবায়নযোগ্য। তবে সংবিধান সংশোধন এবং ঐকমত্য হওয়া সব বিষয় পরবর্তী সংসদ তাদের মেয়াদের ২ বছরের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে বলে অঙ্গীকারনামায় ছিল। কিন্তু নতুন সনদে তা নেই।

তিনি বলেন, ‘আমাদের জুলাই সনদে স্বাক্ষর করতে হবে। জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে গৃহীত সব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে। সংস্কারের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রকে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। জাতির প্রত্যাশা, আমাদের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করতে হবে। সুতরাং আমরা সবাই বসে এর একটা আইনগত বৈধতা ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়া বের করব।বিএনপির একসময়ের বড় মিত্র জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির দাবি জাতীয় সনদকে গণপরিষদ নির্বাচন বা গণভোটের মাধ্যমে বৈধতা দিতে হবে। নির্বাচিত সরকার সংসদে গিয়ে জুলাই সনদের বৈধতা দেবে-এমন আশ্বাসে বিশ্বাসী নয় তারা। জুলাই সনদের আইনগত ভিত্তি না পেলে তারা জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার বার্তা দিয়েছেন।এ প্রসঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজের কাছে আমরা প্রশ্ন তুলেছিলাম। জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টা তাদের টার্মসে নেই। তখন আমরা বলেছিলাম, প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে টার্মস নিয়ে আসেন অথবা আমাদের বক্তব্য প্রধান উপদেষ্টার কাছে জানান। একই কথা বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেনও। তিনি বলেন, জুলাই সনদকে যদি আমরা একটা আইনি ভিত্তির জায়গায় নিয়ে আসতে না পারি, সে ক্ষেত্রে সেই জুলাই সনদ পূর্বেকার মতো, তিন দলের রূপরেখার (৯১ সালের ঘটনা) মতো শুধু একটা ইতিহাসের দলিল হয়ে থাকবে। যা কোনো কার্যকারিতার জায়গা থাকবে না। আমরা একটা অকার্যকর অপূর্ণাঙ্গ মৌলিক সংস্কারবিহীন জুলাই সনদ চাই না।এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য শামসুজ্জামান দুদু সময়ের আলোকে বলেন, গণতন্ত্র উত্তরণের একমাত্র পথই হলোÑনির্বাচন। নির্বাচিত সংসদে সব কিছুর বাস্তবায়ন হবে। জুলাই সনদকে কোনো অবস্থাতেই আমরা ছোট করে দেখছি না। তবে এটি  যেন সংবিধানে ঊর্ধ্বে না হয়। এখন জামায়াত ও এনসিপি যা চাচ্ছে এটি তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডা। জনগণ কী চায় অর্থাৎ জনমত যাচাই করতে অবশ্যই নির্বাচন জরুরি।  নির্বাচনের মাধ্যমে সব ফয়সালা হবে। কেউ নির্বাচনে না যাওয়া তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। সেখানে বিএনপিকে টানা হচ্ছে কেন?

সমমনাদের এক  কাতারে আনার চেষ্টা


এদিকে জুলাই সনদ ঘিরে যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের এক কাতারে আনার চেষ্টা করছে বিএনপি। এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার রাতে গুলশানে গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। বৈঠকে গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতারা অংশ নেন। এ বিষয়ে মঞ্চের নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক সময়ের আলোক বলেন, বিএনপির প্রস্তাবের কিছু বিষয়ে আমাদের সঙ্গে দ্বিমত আছে। এগুলো মিনিমাইজ করে এক কাতারে আনতে চায় বিএনপি। এ নিয়ে আমরা বিএনপির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছি। জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন সময়ের আলোকে বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে বিশেষ করে বিএনপির দেওয়া ‘নোট অব ডিসেন্ট’ প্রস্তাবের সঙ্গে আমাদের কিছু মতপার্থক্য আছে। সম্প্রতি এক বৈঠকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বলেছিলেন বিএনপি এই পার্থক্য কীভাবে কমিয়ে আনতে পারে সেই চেষ্টা করবে।

আরো পড়ুন!

Sidebar Banner
Sidebar Banner