নিউজ ডেস্ক
টিভি নাইনটিন অনলাইন
ঢাকাঃ জামায়াতে ইসলামী দেশে প্রপোরশনাল রিপ্রেজেন্টেশন (পিআর) বা আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন ব্যবস্থা চালুর পক্ষে জোরালো মতামত ব্যক্ত করেছে বলে জানিয়েছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান।তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি এই ব্যবস্থা জনগণের মতামতকে সঠিকভাবে প্রতিফলিত করবে এবং ফ্যাসিবাদী শাসন পুনরায় ফিরে আসার পথ রুদ্ধ করবে। এছাড়া, লাখ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশিকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির দাবিও আমরা তুলে ধরেছি, কারণ তাদের মতামতও গুরুত্বপূর্ণ। আশা করি, অন্তর্বর্তী সরকার আমাদের এই আহ্বানে সাড়া দেবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।রাজধানীর একটি হোটেলে জামায়াতের আয়োজনে কূটনীতিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াত আমির বলেন, আমরা সর্বপ্রথম মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি, যিনি আমাদের দীর্ঘ ১১ বছর পর এই আয়োজনের সুযোগ করে দিয়েছেন। জামায়াতে ইসলামী দীর্ঘদিন ধরে আমাদের বিদেশি বন্ধুদের সম্মানে ইফতার আয়োজনের ঐতিহ্য ধরে রেখেছিল। কিন্তু ২০১৪ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগ সরকার আমাদের এসব আয়োজন করতে দেয়নি। এমনকি কিছু অনুষ্ঠানের জন্য ভেন্যু বুকিং ও অতিথিদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও শেষ পর্যন্ত সরকারের বাধার কারণে আমাদের সেসব আয়োজন বাতিল করতে হয়েছে। আজ আমরা আবারও আপনাদের এই মর্যাদাপূর্ণ ইফতার মাহফিলে স্বাগত জানাচ্ছি এবং এজন্য মহান আল্লাহর দরবারে গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। একই সঙ্গে আমরা জুলাই বিপ্লবের সব শহীদ ও নির্যাতিতদের স্মরণ করছি, যাদের আত্মত্যাগের ফলে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো মুক্ত হয়েছে।তিনি বলেন, আমরা এমন এক সময়ে একত্রিত হয়েছি, যখন সমগ্র মুসলিম বিশ্ব পবিত্র রমজানের মাহাত্ম্য উপভোগ করছে। রমজান শুধু সিয়াম সাধনার মাস নয়, এটি আত্মশুদ্ধি, আত্মসংযম ও আত্মনিবেদন করার মাস। রোজা রাখার মাধ্যমে আমরা নিঃস্ব ও অভাবগ্রস্ত মানুষের কষ্ট অনুধাবন করি এবং আমাদের হৃদয়ে সহমর্মিতার বীজ বপন হয়। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকা শুধু শারীরিক অনুশীলন নয়, বরং এটি আত্মার পরিশুদ্ধি, আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করা এবং ন্যায়পরায়ণতার প্রতি আমাদের অঙ্গীকার নবায়ন করার মাধ্যম।বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা অত্যন্ত জরুরি উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে সহনশীলতা ও পারস্পরিক সম্প্রীতি যেন বজায় থাকে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই জামায়াতে ইসলামী গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল। ৯০ এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে দলটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। জামায়াত স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রস্তাব দেয় ও এর পক্ষে জনমত তৈরি করে।‘কিন্তু গত ১৫ বছরের দুঃশাসনে আওয়ামী লীগ সরকার জামায়াতকে দমন করার সব ধরনের অপচেষ্টা চালিয়েছে। জামায়াতের পাঁচজন শীর্ষ নেতাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, ছয়জন নেতাকে কারাগারে বা পুলিশের হেফাজতে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, অনেকে গুমের শিকার হয়েছেন এবং অনেকেই স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়েছেন।’জামায়াত আমির আরও বলেন, এই নিষ্ঠুরতার মধ্যেও জামায়াতে ইসলামী এবং এর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির জুলাই বিপ্লবে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোর নিরাপত্তা এবং সাধারণ মানুষের জানমালের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সংগঠনের নেতাকর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।তিনি বলেন, বাংলাদেশ যেন আর কখনো পথ হারিয়ে না ফেলে, সেজন্য বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী এই সংস্কার উদ্যোগকে স্বাগত জানায় এবং এরই মধ্যে বিভিন্ন পরামর্শ ও সুপারিশ প্রদান করেছে।তিনি বলেন, আমরা মনে করি, একটি সুষ্ঠু রাজনৈতিক ব্যবস্থা টেকসই শান্তি ও উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। আমাদের দায়িত্ব হলো—প্রত্যেক নাগরিকের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া, প্রতিটি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা এবং দেশ গঠনে সবাইকে সমান সুযোগ দেওয়া। এই লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামী দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, বাংলাদেশে সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘু বলে কিছু নেই—এ দেশের প্রতিটি নাগরিক সমান অধিকারভুক্ত। ইসলাম আমাদের শেখায় বৈচিত্র্য এক আশীর্বাদ, আর অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজব্যবস্থার মাধ্যমেই আমরা ন্যায়সংগত ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তুলতে পারি।ইফতার মাহফিলে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতসহ জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
আনুপাতিক ভোটের পক্ষে সাড়া দেবে সরকার, আশা জামায়াত আমিরের
