আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থাকে ধোকা দিয়ে বোকা বানিয়ে ইরান পরমাণু বোমা বানানোর জন্য ইউরেনিয়ামের সমৃদ্ধকরন ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে। যদিও গতকাল বুধবার ভিয়েনায় আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রোসি ‘ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরনকে ‘সঠিক পথে কংক্রিট পদক্ষেপ’ হিসেবে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, ইরান তাদের উচ্চহারে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরন বন্ধ করার পদক্ষেপ নিয়েছে। আইএইএ’র সাথে দূর্বল সহযোগিতার জন্য ইরানের প্রতি নিন্দা জানিয়ে পশ্চিমা শক্তিগুলো একটি প্রস্তাব পেশ করার পর রাফায়েল গ্রোসি এই মন্তব্য করেছেন।ভিয়েনা থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এই খবর জানিয়েছে।ভিয়েনায় গ্রোসি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমি মনে করি এটি সঠিক পথের একটি কংক্রিট পদক্ষেপ। কারণ আমরা যাচাই করেছি এটাই সত্য।’ তিনি বলেছেন, ‘প্রথমবারের মতো আমি বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছি, কারণ তার অতীতের বাধ্যবাধকতা থেকে সরে ভিন্ন দিকে অগ্রসর হচ্ছে।’ গ্রোসি আরো বলেছেন, ‘ইরান যে তাদের প্িরতশ্রুতি থেকে সরে ভিন্ন দিকে যাবে না, তা-ও আমি অস্বীকার করতে পারি না।ইসরাইলের সঙ্গে ইরানের চলমান উত্তেজনার মধ্যেই এমন বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা আইএইএ। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এরইমধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ উচ্চ মাত্রার ইউরেনিয়াম মজুত করেছে তেহরান।এক বছরের বেশি সময় ধরে চলছে হামাস-ইসরাইল সংঘাত। আর সম্প্রতি সহস্রাধিক দিন অতিক্রম করলো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। দ’ুটি যুদ্ধেই প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সমর্থন দিচ্ছে মিত্র দেশগুলো। মধ্যপ্রাচ্য আর ইউরোপে চলমান এসব সংঘাতের মধ্যেই আলোচনায় পারমাণবিক বোমা।১৯ নভেম্বর মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা আইএইএ’র প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য ইউরেনিয়ামের মজুত ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে ইরান। পরমাণু অস্ত্র নির্মাণে প্রয়োজন হয় ৯০ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়ামের যেটির পরিমাণ প্রায় ১৮৫ কেজি।প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, এরইমধ্যে ৬০ শতাংশ উচ্চ মাত্রার ইউরেনিয়াম মজুত করে ফেলেছে তেহরান। যা, ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তিতে নির্ধারিত সীমার চেয়েও ৩২ গুণ বেশি।ইরানের পরমাণু সক্ষমতার লাগাম টানতে ২০১৫ সালে দেশটির সঙ্গে চুক্তি করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, রাশিয়া ও জার্মানি। তবে, বিভিন্ন দেশের সংঘাতের জেরে শেষ পর্যন্ত সাফল্যের মুখ দেখেনি চুক্তিটি।২০১৮ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর এই চুক্তি থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। এরপর থেকেই গোপনে পরমাণু কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তেহরান, এমনটাই দাবি আইএইএ’র।বিশেষজ্ঞের উদ্ধৃতি দিয়ে কাতার-ভিত্তিক আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরান যদি কোনভাবে পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত হয় সেক্ষেত্রে শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয় বৈশ্বিক শক্তির ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। বিশেষ করে ইসরাইলে ইরানের হামলার ঘটনার পর থেকে দেশটির পরমাণু সক্ষমতার মাত্রা নিয়ে উদ্বিগ্ন পশ্চিমা দেশগুলো।গত সপ্তাহেই ইরান সফর করেছেন আইএইএ প্রধান রাফায়েল গ্রোসি। এরপরই তেহরানের ইউরোনিয়াম সক্ষমতা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংস্থাটি।এছাড়া, অক্টোবরে তেল আবিবে তেহরানের হামলার প্রায় এক মাস পর পরমাণু মজুতের বিষয়ে সতর্ক করেছে ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাজ্য। পাল্টা জবাব দিয়েছে ইরানও।ইউরোপের এই তিন দেশের হস্তক্ষেপ কূটনৈতিকভাবে মোকাবিলার কথা জানিয়েছে দেশটি।