নিউজ ডেস্ক
টিভি নাইনটিন অনলাইন
ঢাকাঃ ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে বসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সুযোগ পাবে কিনা এ বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন তিনি।সম্প্রতি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু’র সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি। ড. মুহাম্মদ ইউনূস ঢাকায় তার বাসভবনে বসে এই সাক্ষাৎকার দেন।ওই সাক্ষাৎকার সোমবার (১৮ নভেম্বর) হিন্দুর অনলাইন সংস্করণে প্রকাশ করা হয়েছে।সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘আপাতত ভারতে বসবাস করাটা সমস্যা নয়। সমস্যা হচ্ছে বাংলাদেশের সঙ্গে তার যোগাযোগ। তিনি বাংলাদেশি জনগণের সঙ্গে কথা বলছেন এবং সেটা রাজনৈতিক রূপ নিচ্ছে। এটিই সমস্যা।ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) বাংলাদেশিদেরকে ঢাকা ও অন্যান্য শহরের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করতে উৎসাহিত করছেন। তার এসব বক্তব্য প্রচারিত হয়েছে। তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে বলছেন- যেন পুলিশ বাধা দেয়, যাতে তারা বলতে পারে বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কাজ করছে। এটি আরেকটি দেশের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ।’ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে প্রত্যর্পণ চুক্তি থাকা সত্ত্বেও শেখ হাসিনাকে ফেরত আনতে কেন আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করা হয়নি, এমন প্রশ্নে ড. ইউনুস বলেন, ‘আমার মনে হয় আমরা আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করছি, তবে সে পর্যায়ে এখনো পৌঁছাইনি।রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিচার করা হচ্ছে- এমন যুক্তি দেখিয়ে ভারত যদি (বাংলাদেশের) অনুরোধ না রাখে তাহলে কী হবে?জবাবে ড. ইউনূস বলেন, ‘আপনি কি বলছেন, ভারত চুক্তি লঙ্ঘন করবে? হ্যাঁ, (চুক্তিতে) এমন কিছু ধারা রয়েছে। কিন্তু ভারত সরকার যদি তাকে (শেখ হাসিনা) সেখানে রাখতে এগুলো প্রয়োগ করে, তাহলে সেটা আমাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলবে না। আমাদের অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ খুব কম। তাই এই সময়ে হয়তো বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সবকিছু মীমাংসা করা যাবে না। তবে আমাদের পরে যে সরকারই আসুক না কেন, তারা এটা ক্ষমা করবে না।’ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ৫ আগস্টের ঘটনাগুলো কীভাবে প্রভাব ফেলছে? এমন প্রশ্নে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বন্ধুপ্রতিম দেশ হিসেবে ভারতের উদযাপন করা উচিত যে, বাংলাদেশ এমন একটি শাসন থেকে মুক্ত হয়েছে, যেখানে মানুষ চরম কষ্টে ছিল, অনেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছিলেন, অনেকে গুম হয়েছিলেন এবং অনেক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। আমাদের তরুণ প্রজন্মের উদযাপনের সঙ্গে ভারতেরও অংশ নেওয়া উচিত এবং একসঙ্গে উদযাপন করা উচিত, যেমনটা অনেক রাষ্ট্র করছে।আওয়ামী লীগকে আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ দেয়া হবে কি না, প্রশ্নের উত্তরে ড. ইউনূস বলেন, ‘এটা ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা রাজনৈতিক দলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চাইনি। বিএনপি এটা করেছে, বলেছে সব রাজনৈতিক দল অবশ্যই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। সুতরাং তারা ইতোমধ্যে রায় দিয়ে দিয়েছে। আমরা দেশের একটি প্রধান দলের মতামতকে উপেক্ষা করব না।ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে দেখা না হওয়া নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘হ্যাঁ, এটি এখনও ঘটেনি। আমি যখন জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে গিয়েছি, তখন মোদি সেখান থেকে চলে গিয়েছিলেন। আমি বাকুতে জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলাম, কিন্তু মোদি সেখানে ছিলেন না, বিমসটেক (থাইল্যান্ডে) বাতিল করা হয়েছে এবং আমরা কেউই কমনওয়েলথ বৈঠকে যায়নি। কিন্তু তার মানে এই নয় যে— আমরা দেখা করব না। আমরা শুধু প্রতিবেশী নই, ইতিহাস আমাদের একত্র করেছে। ভূগোল আমাদের একত্রিত করেছে। ভাষাগত সম্পর্ক আমাদের একত্রিত করেছে। সাংস্কৃতিক যোগসূত্র আমাদের একত্রিত করে। প্রথম দিন থেকেই আমি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার প্রস্তাব দিয়েছি।পুরো সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার সরকারের ১০০ দিনের শাসনের অর্জনগুলোর পক্ষে কথা বলেন এবং মৌলবাদ ও দেশের হিন্দু ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে যে উদ্বেগ প্রকাশ করা হচ্ছে, তা 'প্রোপাগান্ডা' হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।