শীর্ষ খবর ০৫ নভেম্বর ২০২৪

বিদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে এমপি-মন্ত্রী হন আ.লীগের ২৪ জন

post

নিউজ ডেস্ক

টিভি নাইনটিন অনলাইন

ঢাকাঃ আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন মেয়াদে মন্ত্রী, উপদেষ্টা ও সংসদ সদস্য ছিলেন এমন ২৪ জনের দ্বৈত নাগরিকত্ব থাকার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করলে তিনি সংসদ সদস্য বা মন্ত্রী হতে পারেন না।গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রভাবশালী ১৮০ জনের অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে টাকা পাচারের বিষয়টি অনুসন্ধান করছে দুদক। সেই অনুসন্ধানে এখন পর্যন্ত ২৪ জনের দ্বৈত নাগরিকত্ব বা রেসিডেন্স কার্ড থাকার ব্যাপারে তথ্য পেয়েছে দুদক। অনুসন্ধানে যে ২৪ জনের নাম এসেছে, তাদের মধ্যে পাঁচজন এখন কারাগারে। বাকিরা গত ৫ আগস্টের পর আর প্রকাশ্যে আসেননি।দুদকের তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, সাবেক পাঁচজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর নাগরিকত্ব রয়েছে যুক্তরাজ্যে। তারা হলেন আ হ ম মুস্তফা কামাল, মো. তাজুল ইসলাম, সাইফুজ্জামান চৌধুরী, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও মো. মাহবুব আলী। তাদের মধ্যে গত ১৫ সেপ্টেম্বর মাহবুব আলীকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব বা গ্রিন কার্ড রয়েছে সাবেক চারজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ সাতজন সংসদ সদস্যের। দুদকের অনুসন্ধানে এখন পর্যন্ত যাদের নাম এসেছে, তারা হলেন আব্দুস শহীদ, নসরুল হামিদ, জুনাইদ আহ্‌মেদ, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, আবদুস সোবহান মিয়া (গোলাপ), মাহফুজুর রহমান ও সালাউদ্দিন মাহমুদ জাহিদ। তাদের মধ্যে সাবেক কৃষিমন্ত্রী আব্দুস শহীদ, সাবেক তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তারের পর এখন কারাগারে।দুদকের অনুসন্ধানে কানাডার নাগরিকত্ব রয়েছে, এমন ছয়জনের নাম পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে একজন সাবেক মন্ত্রী, অন্যরা সাবেক সংসদ সদস্য। এর মধ্যে রয়েছেন আবদুর রহমান, মাহবুব উল আলম হানিফ, আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী (নাসিম), শামীম ওসমান, শফিকুল ইসলাম (শিমুল) ও হাবিব হাসান।দুদকের তথ্য অনুযায়ী, সুইজারল্যান্ডের নাগরিকত্ব রয়েছে সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেনের এবং জাপানে থাকার অনুমতি (রেসিডেন্স কার্ড) রয়েছে সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমের। সাবেক সংসদ সদস্য (টাঙ্গাইল-২ আসন) তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনির জার্মানির নাগরিক এবং সাবেক সংসদ সদস্য (ময়মনসিংহ-১১) এম এ ওয়াহেদ পাপুয়া নিউগিনির নাগরিকত্ব নিয়েছেন।সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের মধ্যে যাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে, তারা বড় অঙ্কের টাকা বিদেশে পাচার করেছেন—এমন তথ্য দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। এ বিষয়ে দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন বলেন, বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে। যারা টাকা পাচারের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।দুদকের অনুসন্ধানে যে ২৪ জনের নাম এসেছে, তাদের মধ্যে পাঁচজন এখন কারাগারে। বাকিরা গত ৫ আগস্টের পর আর প্রকাশ্যে আসেননি। তাদের মুঠোফোন নম্বরও বন্ধ রয়েছে। আবার অনেকে দেশ ছেড়েছেন বলে প্রচার আছে। যে কারণে দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে তাদের বক্তব্য নেওয়া যায়নি।বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করলে বা বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য স্বীকার করলে তিনি সংসদ সদস্য বা মন্ত্রী হতে পারেন না।এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে, এমন কোনো ব্যক্তির সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়া বা মন্ত্রিত্ব লাভের সুযোগ নেই। তথ্য গোপন করে যদি এ কাজ হয়ে থাকে, তাহলে আইন ও সংবিধান পরিপন্থী কাজ হয়েছে।বিদেশি নাগরিকত্ব নিয়ে যারা দেশে মন্ত্রী-সংসদ সদস্যের মর্যাদা-সুবিধা ভোগ করেছেন, তারা আসলে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন বলে মনে করেন দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামান।তিনি বলেন, মন্ত্রী-সংসদ সদস্য হিসেবে তাদের শপথ গ্রহণই ছিল অবৈধ। দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে মন্ত্রী-সংসদ সদস্য হওয়ার বিষয়টি এখন আর অবাক হওয়ার মতো ঘটনা নয়। এর কারণ দেশে যেভাবে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিচারহীনতার বিকাশ হয়েছে, তাতে এগুলো স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। তথ্য গোপন ও প্রতারণা করা ওই সব প্রভাবশালীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা এখন জরুরি।সূত্র: প্রথম আলো

আরো পড়ুন!

Sidebar Banner
Sidebar Banner