নিউজ ডেস্ক
টিভি নাইনটিন অনলাইন
ঢাকাঃ কয়েক ডজন সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট বিগত ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট শাসনের বিরুদ্ধে কথা বলে আওয়ামী লীগ সরকারের রোষানলে পড়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। বিদেশে গিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করেও অকুতোভয়ে লড়ে গেছেন নিজ দেশের মানুষ ও গণতন্ত্রের মুুক্তির জন্য।ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে অবিরাম প্রতিবাদ করায় নিজ দেশে তাদের আত্মীয়স্বজনদের নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। কারও ভাই, কারও বাবা-মাকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। তাদের কেউ কেউ দেশে ফিরলেও মামলার ভয়ে অধিকাংশই এখনো দেশের মাটিতে পা রাখছেন না। দেশবাসীর প্রত্যাশা ছিল, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর তাদের নামে সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা হবে। তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে দেওয়া হবে বীরের স্বীকৃতি। তাদের মামলা প্রত্যাহার করা বা তাদের স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগ এখনো নেওয়া হয়নি।
সাইফুর রহমান সাগর : ফেস দ্য পিপল-এর সঞ্চালক। জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইস্যুতে ভিন্ন ধারার ও ভিন্ন মতের লোকজনকে লাইভ টক শোতে একত্র করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছেন সাইফুর রহমান সাগর। বসবাস করছেন কানাডার ওন্টারিওতে। কখনো লাইভ টক শো, কখনো একান্ত সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে ফেস দ্য পিপল-এ তুলে আনা হয় দেশের বিভিন্ন আলোচিত ঘটনা। যুক্তিতর্কের মাধ্যমে বিভিন্ন ইস্যুর ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করা হয়। এ জন্য রয়েছে ‘মহাডিবেট’ নামে পৃথক একটি সেগমেন্ট। সেখানে প্রখ্যাত ইসলামি আলোচক আবদুর রাজ্জাক বিন ইউসুফের ছেলে আবদুর রহমান থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গের ইসলামি আলোচক ব্রাদার রাহুল পর্যন্ত অনেকেই হাজির হয়েছেন। মূলধারার মিডিয়াতে যাদের নিয়ে খুব বেশি কথা হয় না, তাদেরকেও অতিথি হিসেবে যুক্ত করা হয় সাগরের অনুষ্ঠানে। নিরপেক্ষতা ও অতিথিকে ব্যতিক্রমী সব প্রশ্নের জন্য দর্শকমহলে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন তিনি। কানাডা থেকেই তার অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। উপস্থাপনার পাশাপাশি করেন লেখালেখিও। ফেস দ্য পিপল-এর মাধ্যমে বিভিন্ন অনিয়ম-অবিচারের বিরুদ্ধে সরব থাকায় ভক্ত ও সমর্থকরা তাকে সমাজের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর হিসেবে দেখে। ফেস দ্য পিপল-এর একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল রয়েছে, যার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন সাইফুর রহমান সাগর। সেখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদ প্রচার করা হয়। আলেম সমাজের বিভক্তি নিরসনে সব সময় সোচ্চার থেকেছেন। তার টক শোতে উঠে এসেছে রাজনীতি, গণতন্ত্র, মানবাধিকারসহ নানা বিষয়। এমপি-মন্ত্রী থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের অপকর্মে সরব থেকেছেন সব সময়। ক্ষমতাবানদের জনতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছেন। এতে তার শত্রুও হয়েছেন অনেকে। সাগরের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের মে মাসে মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অভিযোগ দায়ের করেন। বর্তমানে তার ফেস দ্য পিপল-এ ফলোয়ারের সংখ্যা ১৬ লাখের বেশি। এ ছাড়া তার গ্রুপে রয়েছে দুই লক্ষাধিক সদস্য।
শামসুল আলম লিটন : বিশিষ্ট সাংবাদিক, বিলেত ও বাংলাদেশের মিডিয়া অঙ্গনের সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব শামসুল আলম লিটন। বিএনপি সরকারের সময় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের এপিএস ছিলেন তিনি। তারপর তিনি লন্ডনে পাড়ি জমান এবং বিলেতের সাপ্তাহিক সুরমা পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় শামসুল আলম লিটনের ভাই নূর আলম চৌধুরী পারভেজকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রবাসে বিভিন্ন প্রতিবাদ সমাবেশ সংগঠিত করেছেন তিনি। অনলাইন ও অফলাইনে হাসিনা সরকার পতনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন শামসুল আলম লিটন।
নাজমুস সাকিব : যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডাভিত্তিক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম নাগরিক টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক নাজমুস সাকিব। প্রায় এক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দুর্নীতি এবং অনিয়ম নিয়মিত তুলে ধরছেন তিনি। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের শোষণমূলক নীতি, গুম, খুনের বিষয়েও সোচ্চার ছিলেন নাজমুস সাকিব। আওয়ামী লীগের অপশাসন, দুর্নীতি নিয়ে কথা বলায় দেশে একের পর এক মামলার জালে জড়িয়েছেন। বর্তমানে বসবাস করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায়।
গত ২৫ অক্টোবর তিনি ফেসবুকে লেখেন, ‘তখন আমি সাংবাদিকতা করতাম। কিন্তু ফ্যাসিস্ট হাসিনা আমাকে সাংবাদিক থাকতে দেয় নাই, নিজের অজান্তেই সাংবাদিক থেকে অ্যাক্টিভিস্ট হয়ে উঠতে হয়েছিল! এখন পেছনে ফিরে তাকালে মনে হয়, মূলধারার মিডিয়াতে কাজ কন্টিনিউ করি নাই, সেটাই আমার জীবনের সবচেয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। অনলাইন অ্যাক্টিভিজম করে জনগণের যেই ভালোবাসা পেয়েছি; নিয়ন্ত্রিত মূলধারার মিডিয়াতে লেগে থাকলে কখনোই তা সম্ভব হতো না!’
মোস্তাফিজুর রহমান টিটো : যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডাভিত্তিক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম নাগরিক টিভি। এটি পরিচালনা করেন মানবাধিকারকর্মী মোস্তাফিজুর রহমান টিটো। প্রায় এক দশক ধরে সরকারের অনুগত প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দুর্নীতি এবং অনিয়ম তুলে ধরে আলোচনায় ছিল এ প্ল্যাটফর্মটি। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারের শোষণমূলক নীতি, গুম, খুনের বিষয়েও সোচ্চার ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান টিটো।
ড. তাজ হাশমী : ডক্টর তাজ হাশমী বাস করেন কানাডায়। অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের মধ্যে তিনি গবেষণাধর্মী সমালোচনায় মুখর ছিলেন। তার লেখা অনেক বইয়ের মধ্যে ব্যাপক আলোচিত ‘ফিফটি ইয়ার্স অব বাংলাদেশ’। তথ্যসমৃদ্ধ বইটি পড়লে তাজ হাশমীর জ্ঞানের গভীরতা সহজেই বোঝা যায়। তাজ হাশমী কানাডায় বসে শেখ হাসিনা সরকারের তীব্র সমালোচনা করে আলোচিত হন।
রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী : রেজা আহমদ ফয়সল চৌধুরী লন্ডনে বসবাস করেন। তিনি স্যাটেলাইট টিভি ‘চ্যানেল আই’-এর ইউরোপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। বহির্বিশ্বে ফয়সল চৌধুরীই প্রথম স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের অন্যায়-অত্যাচার, গুম-খুনের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচার শুরু করেন। তার সঞ্চালনায় চ্যানেল আই-ইউকেতে সম্প্রচারিত টক শো ‘স্ট্রেইট ডায়ালগ’ বহির্বিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয় এবং বাংলাদেশের নির্যাতিত মানুষের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠে।
ফাহাম আবদুস সালাম : চিকিৎসাবিজ্ঞানী ফাহাম আবদুস সালাম স্বৈরাচারী সরকারের একজন কঠোর সমালোচক ছিলেন। অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে মলিকুলার থেরাপিউটিক্স নিয়ে গবেষণা করে লাভ করেন পিএইচডি ডিগ্রি। শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় এ বিজ্ঞানী ফেসবুকে সরকারের অনিয়ম এবং অনাচার নিয়ে নিয়মিত লিখতেন। এ ছাড়া ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমেও সরকারের নানা অনিয়মের উপাত্তনির্ভর সমালোচনা করতেন।
আবদুর রব ভুট্টো : লন্ডন থেকে আবদুর রব ভুট্টো শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জনমত গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। দেশে থাকতে তিনি সাংবাদিকতা করতেন। সরকারকে নিয়ে কনটেন্ট প্রচারের কারণে মৌলভীবাজারের গ্রামের বাড়ি থেকে তার দুই ভাইকে তুলে নিয়ে যায় গোয়েন্দা সংস্থা। ১৪ বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে কদিন আগে দুই সপ্তাহের জন্য দেশে এসেছিলেন।
কাজী শামীম আহসান : কাজী শামীম আহসান কাতারপ্রবাসী। পাশাপাশি একটি বহুজাতিক কোম্পানির কর্মকর্তা। ফ্যাসিস্ট সরকারের গোপন তথ্য-উপাত্ত জনগণের সামনে অনলাইনে প্রকাশ করে তিনি ব্যাপক আলোচনায় আসেন।
তাসলিমা তাজ : তাসলিমা তাজ যুক্তরাজ্যপ্রবাসী। গত ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে জনমত গঠনে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছেন। বিশেষ করে ভারতের আগ্রাসন নীতির বিরুদ্ধে টক শোতে তুখোড় বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে মানুষকে সচেতন করেছেন।
হাসিনা আক্তার : হাসিনা আক্তার একসময় লন্ডনে চ্যানেল আই, ইউরোপে নিউজ প্রেজেন্টার হিসেবে সাংবাদিকতা শুরু করেন। পরে অনলাইনে টক শো শুরু করে আলোচিত হন। টক শোর মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে জনমত গঠনে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন।
এ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র থেকে এম. রহমান মাসুম, নায়েব আলী, যুক্তরাজ্য থেকে শাহ্ আলম ফরুক, জার্মানি থেকে আর.এ. খান, কানাডা থেকে মেজর (অব.) দেলোয়ার হোসেন, অস্ট্রেলিয়া থেকে রাহাত শান্তনু, আবদুল্লাহ ইউসুফ শামীম, ইতালি থেকে আখী সীমা কাওসার প্রমুখ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সরব থেকে জনমত গঠনে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন।
সৌজন্যে: বাংলাদেশ প্রতিদিন