নিউজ ডেস্ক
টিভি নাইনটিন অনলাইন
ঢাকাঃ বর্ষীয়াণ বাম রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমর বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবকে হত্যা করার পর একজন লোকও তার পক্ষে রাস্তায় নামেনি। তারপর ৫ আগস্ট সারা দেশের জনগণ শেখ মুজিবের মূর্তি ভেঙে ফেলল। তার বাড়িতে আগুন দিল। এটাও শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে একটা রায়।শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা বলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বর্ষীয়াণ বাম রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমর। তিনি বলেছেন, এ দেশের জনগণ দু’বার তার (মুজিব) বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। একবার ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, আরেকবার ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট।জুলাই গণঅভ্যুত্থান: জনগণের হাতে ক্ষমতা চাই, জনগণের সরকার-সংবিধান-রাষ্ট্র চাই’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে বদরুদ্দীন উমর একথা বলেন। সূত্র: বাসস শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।লেখক, গবেষক, রাজনীতিক ও জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সভাপতি বদরুদ্দীন উমর বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকে হত্যা করার পর একজন লোকও তার পক্ষে রাস্তায় নামেনি। স্বাধীনতার পর সাড়ে তিন বছরে শেখ মুজিব কী করলেন, যার জন্য মানুষ এটা করল, তা হিসাব করতে হবে।তার আসল পরিচয় পাওয়া যায় যখন তিনি ক্ষমতায় আসেন। তখন এই দেশের জনগণকে তিনি কী দিয়েছেন?’তিনি বলেন, তা’রপর গত ৫ আগস্ট সারা দেশের জনগণ শেখ মুজিবের মূর্তি ভেঙে ফেলল। তার বাড়িতে আগুন দিল। এটাও শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে একটা রায়।’শেখ হাসিনা সরকারের পতন ভারত এখন পর্যন্ত হজম করতে পারেনি বলে মন্তব্য করেন বদরুদ্দীন উমর। তিনি বলেন, “এর কারণ ভারতের সঙ্গে তার প্রতিটি প্রতিবেশীর সম্পর্ক খারাপ। শুধু বাংলাদেশের ওপর কর্তৃত্ব ছিল। ভারত এদেশকে আশ্রিত রাজ্যের মতো বিবেচনা করত। সেই ‘আশ্রিত রাজ্য’ হাত ফঁসকে যাওয়া তাদের হজম হচ্ছে না।বাংলাদেশে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার জন্য যা দরকার ভারত তা করেছে বলে মন্তব্য করেন এই বর্ষীয়াণ রাজনীতিক। বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে ভারত অস্বস্তিতে আছে। তারা চেষ্টা করেছিল হাসিনাকে অন্য কোথাও পাঠানোর জন্য। অন্য দেশ আশ্রয় না দেয়ায় ভারতই রাখতে বাধ্য হলো।’বদরুদ্দীন উমর বলেন, আওয়ামী লীগের সব সংগঠন ধসে গেছে। কেউ যদি মনে করে যে আওয়ামী লীগ আবার ফিরে আসবে, সেটা একেবারেই অসম্ভব। ১৯৫৪ সালে মুসলিম লীগ যেভাবে শেষ হয়ে গিয়েছিল, আওয়ামী লীগও সেভাবে শেষ হয়ে গেছে।চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান বায়ান্ন সাল থেকে এখন পর্যন্ত সংঘটিত অভ্যুত্থানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ব্যাপক, গভীর ও আক্রমণাত্মক ছিল বলে উল্লেখ করেন বদরুদ্দীন উমর। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘গত সাড়ে ১৫ বছরে তারা জনগণের ওপর এমন অত্যাচার-নির্যাতন করেছে, যার কোনো দৃষ্টান্ত নেই। নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছিল। মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছিল, কিন্তু বিক্ষোভের সুযোগ ছিল না। গণঅভ্যুত্থানে সেই বিক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছে।অভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর সারা দেশে শেখ মুজিবের ভাস্কর্য ভাঙা এবং তার বাড়িতে (ধানমন্ডি ৩২) আগুন দেয়া নিয়েও কথা বলেন বদরুদ্দীন উমর।ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম তার সাম্প্রতিক এক লেখায় ‘শেখ হাসিনার অপশাসনের সঙ্গে শেখ মুজিবকে জড়ানো ঠিক হবে না’ বলে যে মন্তব্য করেছেন সে প্রসঙ্গ টেনে বদরুদ্দীন উমর বলেন, ‘শেখ মুজিবকে জড়িয়েছে কে? শেখ মুজিবকে জড়িয়েছে তার মেয়ে। সব কিছুর সঙ্গে সে মুজিবকে জড়িয়েছে। শেখ মুজিবকে জড়িয়ে প্রোপাগান্ডা করেছে।বদরুদ্দীন উমরের মতে, এর ফলে বিক্ষোভ হয়েছে এবং এই বিক্ষোভ যে কেবল শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে হয়েছে তা নয়, এটি শেখ মুজিবের বিরুদ্ধেও হয়েছে।৭ মার্চ, ১৫ আগস্টসহ সম্প্রতি যেসব দিবস বাতিল করা হয়েছে সেটা ঠিক হয়েছে বলেও মনে করেন বদরুদ্দীন উমর। তিনি বলেন, ‘১৫ আগস্ট কেন ছুটি থাকবে? ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী, আব্রাহাম লিংকনকে খুন করেছে। ছুটি আছে? এই দিবসে কর্মসূচি করতে পারে, কিন্তু জাতীয় দিবস হিসেবে ছুটি কেন?ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার উড়ে এসে জুড়ে বসেনি বলে মনে করেন বদরুদ্দীন উমর। তিনি বলেন, ‘হাসিনার আওয়ামী লীগ সরকার উৎখাত হওয়ার পর একটা শূন্যতার সৃষ্টি হলো। এই শূন্যতা পূরণ করা দরকার ছিল। ছাত্র ও অন্যরা মিলে যদি এই সরকার দাঁড় না করাত, একমাত্র বিকল্প ছিল সামরিক সরকার। যারা এই সরকারের বিরুদ্ধে এখন বলছেন, তারা কি বলবেন এর চেয়ে সামরিক সরকার ভালো ছিল?আলোচনা সভায় সময় আরও বক্তব্য দেন জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সম্পাদক ফয়জুল হাকিমসহ দলটির নেতা সজীব রায়, ভুলন ভৌমিক ও কাজী ইকবাল, মাইকেল চাকমা প্রমুখ।