এক কলমে ফল বদলে গেলো ইভিএমের ভোটে
2021-01-30 18:02:34
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) থেকে পাওয়া ফলাফল বদলে দেওয়ার অভিযোগ উঠছে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। অতীতেও এমনটি ঘটার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া না গেলেও চট্টগ্রাম সিটির ভোটকে ঘিরে এই প্রথমবারের মতো জোরালোভাবেই সামনে এল জালিয়াতির নতুন এক ধরন— ‘নির্বাচন কমিশন কন্ট্রাক্ট’। গোপন ‘কন্ট্রাক্টে’ চোখের পলকে বদলে যায় ফলাফলের কাগজ ও ভোটের পরিমাণ।ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএমে ভোট গণনা শেষে প্রিন্টেড কপি (যা সরাসরি মেশিন থেকে বেরিয়ে আসে) সংরক্ষণের নিয়ম রয়েছে, যা নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতাও রয়েছে। কিন্তু চট্টগ্রাম সিটির ভোটে একাধিক নির্বাচন কর্মকর্তার সঙ্গে গত দুই দিন ধরে আলাপ করে জানা গেছে, বিভিন্ন কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের ওই প্রিন্টেড কপিটি ছিঁড়ে ফেলে হাতে লেখা ফলাফল জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা। হাতে লেখা এই কাগজ ঘিরেই মূল জালিয়াতিটা হয়েছে।গণমাধ্যমের হাতে আসা কয়েকটি নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অন্তত দুটি কেন্দ্রে একজন কাউন্সিলর প্রার্থী ইভিএমের মূল ফলাফলে পেয়েছেন যথাক্রমে ২৩০ ও ২৫২। অথচ ফলাফল ঘোষণার সময় দেখা গেছে, হাতে লেখা সেই ফলাফল বদলে এককলমেই ভোটের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২২০০ ও ১৯৭৫ ভোট।চাপের মুখে’ ফল বদল বুধবার (২৭ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইভিএম মেশিনে ভোটগণনা শেষে ভোটের ফলাফল বদলে দেওয়ার চেষ্টার সময় ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের দুই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারকে হাতেনাতে ধরেও ফেলেন সংরক্ষিত-৪ আসনের প্রার্থী আবিদা আজাদ ও তার সমর্থকরা। ‘চাপের মুখে’ এই কাজ করার বিষয়টি স্বীকার করে এ সময় তাদের একজন জানিয়েছিলেন, শুধু তার কেন্দ্র নয় ওই একই ভবনে থাকা মোট ৫ কেন্দ্রের ক্ষেত্রেই এটি হয়েছে। এমন ঘটনার পর ওই বিষয়ে কোনো যাচাই বাছাই না করেই সেই সংরক্ষিত আসনের নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণা করে দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। শুধু তাই নয় কয়েক দফা যোগাযোগ করেও এই ওয়ার্ডের বাকি ১৮ কেন্দ্রের ফলাফল সংগ্রহ করতে পারেননি আবিদা। তিনি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী মহিলা লীগের সদস্য।
শুধু ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডই নয়, বিভিন্ন ওয়ার্ডেই ওপরমহলের নির্দেশে ফলাফল বদলে দেওয়ার অভিযোগ উঠছে প্রার্থীদের কাছ থেকে। এমনকি চসিক নির্বাচনের একজন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নির্বাচনে জিতিয়ে দেয়ার জন্য ৪০ লাখ টাকা ঘুষ চাওয়ার অভিযোগও তুলেছেন ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলীর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মোর্শেদ আকতার চৌধুরী।
২৩০ ভোট স্টেডিয়ামে এসেই ২২০০ এবারের চসিক নির্বাচনে ২৭৮ থেকে ২৮২ পর্যন্ত পাঁচটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয় পাহাড়তলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে। নির্বাচন শেষে ফলাফল ঘোষণা না করেই সেখান থেকে চলে যাওয়ার পথে প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের পথরোধ করেন স্থানীয় ভোটাররা। এসময় ভোটারদের দাবির মুখেও প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা ফলাফল ঘোষণা করতে অস্বীকৃতি জানালে ঘটনাস্থলে আসেন ৯, ১০ ও ১৩ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত সংরক্ষিত আসন-৪ এর প্রার্থী আবিদা আজাদ। তাকেও ফলাফল দেখাতে অস্বীকৃতি জানালে সেখানে দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেটকে ফোন দেন। এরপর সেই ম্যাজিস্ট্রেট এসে প্রিসাইডিং অফিসারদের কাছ থেকে দুটি কেন্দ্রের হাতে লেখা ফলাফল আবিদা আজাদকে দেন। সেসব ফলাফলে দেখা যায় ২৭৮ নম্বর কেন্দ্রে মোট ২৫০০ ভোট কাস্ট দেখানো হয়েছে। সেই ফলাফল অনুযায়ী বই প্রতীকে তাসলিমা বেগম নূরজাহান পেয়েছেন ২২০০ ভোট, অন্যদিকে জিপ গাড়ি প্রতীকের প্রার্থী আবিদা আজাদ পেয়েছেন ২৩০ ভোট। অন্যদিকে ২৭৯ নম্বর কেন্দ্রে দেখানো হয়েছে ২০৯০ ভোট কাস্ট হয়েছে। সেই ফলাফল অনুযায়ী বই প্রতীকে তাসলিমা বেগম নূরজাহান পেয়েছেন ১৯৭৫ ভোট, অন্যদিকে জিপ গাড়ি প্রতীকের প্রার্থী আবিদা আজাদ পেয়েছেন ২০ ভোট।
পরে এই ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করে চট্টগ্রাম স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়ামে নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণার স্থানে এসে অবস্থান নেন আবিদা আজাদ। এক পর্যায়ে আবিদা আজাদ ও তার সমর্থকদের জেরার মুখে ২৭৮ নম্বর কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার আবু তালেব স্বীকার করে নেন যে, চাপের মুখে ফলাফল পরিবর্তন করেছেন তিনি। শুধু তার কেন্দ্রই নয়, ওই ভবনের ৫ কেন্দ্রেই এই ঘটনা ঘটেছে বলে এ সময় জানান আবু তালেব। এ সময় হাতে লেখা ফলাফল বদলে ইভিএমের মূল ফলাফল জমা দেন পূর্ব বাকলিয়া সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু তালেব। সেখানে দেখা যায় আদতে ভোট সংগ্রহ হয়েছিল ২৪৮টি— যার মধ্যে বই প্রতীকের প্রার্থী পেয়েছিল ২৩০ ভোট ও জিপগাড়ি পেয়েছিল ১০ ভোট।
একইভাবে ২৭৯ নম্বর কেন্দ্রের মূল ফলাফলেও দেখা গেছে সেখানে মোট ভোট কাস্ট হয়েছিল মাত্র ২৫৯টি। তবে আবু তালেব ৫ কেন্দ্রেই এমন জালিয়াতি হয়েছে জানানোর পরেও বাকি কেন্দ্রগুলোর ফলাফল যাচাইব